
ক্রীড়া প্রতিবেদক: সাকিব আল হাসান
দাঁড়িয়ে ছিলেন মিড অফে। ম্যাচ শেষ হতেই যখন উল্লাসে মেতেছেন সতীর্থদের
অনেকে, সাকিব আস্তে আস্তে হেঁটে গেলেন তাদের দিকে। যেন কিছুই হয়নি! তার
জন্য ম্যাচটি যেন রেকর্ডের পথ ধরে হেঁটে যাওয়ার আরেকটি দিন। বাংলাদেশের
জন্য সেমি-ফাইনাল স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার আরেকটু বড় স্বপ্ন। অবিশ্বাস্য
ধারাবাহিকতার বিশ্বকাপে সাকিব জ্বলে উঠলেন আরও একবার। তার আলোয় উজ্জ্বল
বাংলাদেশও।
বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালের পথে কার্যত নক আউট ম্যাচে পরিনত
হওয়া তিন ম্যাচের প্রথমটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। সাউথ্যাম্পটনে সোমবার
আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় এসেছে ৬২ রানে।
ব্যাটে-বলে অসাধারণ অলরাউন্ড
পারফরম্যান্সে জয়ের মূল কারিগর সাকিব। ব্যাট হাতে ফিফটি আর বল হাতে ৫ উইকেট
নিয়ে গড়েছেন এক গাদা রেকর্ড। গুঁড়িয়ে দিয়েছেন আফগানদের।
বিশ্বকাপের
নিজেদের সপ্তম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সোমবার সাউথ্যাম্পটনে বাংলাদেশ
তুলেছিল ৭ উইকেটে ২৬২ রান। ৩ ওভার বাকি থাকতে আফগানিস্তান গুটিয়ে গেছে ২০০
রানে।
এই উইকেটেই আগের ম্যাচে ২২৪ রান তুলেও আফগানদের বিপক্ষে জিতেছে
ভারত। ব্যবহৃত উইকেট ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন হয়ে
ওঠার কথা আরও।
৮৭ বলে ৮৩ রানের দারুণ ইনিংসে বাংলাদেশকে টেনেছেন মুশফিক।
এই উইকেটে তার এই ইনিংস ব্যাটিং উইকেটের সেঞ্চুরির চেয়ে কম নয় কোনো দিক
থেকেই।
সাকিব খেলেছেন এবারের আসরে তার পঞ্চম পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। পরে মোসাদ্দেক খেলেছেন ছোটো কিন্তু কার্যকর ইনিংস।
মূল
দুই হুমকি মুজিব উর রহমান ও রশিদ খানকে সামলানোয় বাংলাদেশ ছিল দুই রকম।
মুজিব নিয়েছেন ৩ উইকেট। রশিদ ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।
বাংলাদেশের
ইনিংস শুরু হয়েছিল ট্যাকটিকাল চমক দিয়ে। স্পিনার মুজিব উর রহমান নতুন বল
নেবেন ধরে নিয়েই তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংসের শুরুতে পাঠানো হয় ডানহাতি
লিটন দাসকে।
তামিম সবসময় স্ট্রাইক নিতে পছন্দ করলেও বাঁহাতির জন্য বেশি
কার্যকর মুজিবের সামনে স্ট্রাইক নেন লিটন। গত ১২ বছরে মাত্র দ্বিতীয়বার
ওয়ানডেতে স্ট্রাইক নিলেন না তামিম। দুবারই আফগানদের বিপক্ষে। লিটনের শুরুটা
ছিল আত্মবিশ্বাসী। তবে ১৭ বলে ১৬ করে আউট হন সেই মুজিবের বলেই।
আউট
নিয়ে অবশ্য বিতর্কের অবকাশ থাকল কিছুটা। শর্ট কাভারে ফিল্ডার ক্যাচটি
ঠিকমতো নিতে পেরেছিলেন কিনা, নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না অনেকবার রিপ্লে
দেখেও। মাঠের আম্পায়ারের সফট সিগনাল ছিল ‘আউট, শেষ পর্যন্ত টিভি আম্পায়ার
সেটিকে বদলানোর যথেষ্ট প্রমাণ পাননি।
দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ইকবাল ও
সাকিব ঠা-া মাথায় জুটি গড়ে এগিয়ে নিয়েছেন দলকে। উইকেট দ্রুত পড়ে নিয়েছিলেন
তারা, তাই ব্যাটিংয়ে ছিল না তাড়া।
দুজনের জুটি যখন দারুণ জমে উঠেছে,
তামিম আউট হয়ে যান আলগা শটে। মোহাম্মদ নবিকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড
৩৬ রানে। ভাঙে ৫৯ রানের জুটি।
সাকিব ও মুশফিকের জুটিও এগিয়েছে প্রায়
একই পথ ধরে। বড় শট না খেলে এক-দুই করে এগিয়েছেন দুজন। দুজনের জুটি স্পর্শ
করে তিন হাজার ওয়ানডে রানের সীমানা, বাংলাদেশের প্রথম।
দুর্দান্ত
ধারাবাহিকতায় সাকিব পৌঁছে যান আরেকটি ফিফটিতে, ৬৬ বলে। পরিস্থিতির দাবি
মিটিয়ে চার ছিল কেবল একটি। এবার অবশ্য ইনিংসটিকে বড় করতে পারেননি। দ্বিতীয়
স্পেলে ফেরা মুজিব দারুণ ডেলিভারিতে ৫১ রানে থামান বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ
রান স্কোরারকে।
পাঁচে নামা সৌম্য সরকার দ্রুতই বিদায় নেন মুজিবের বল বুঝতে না পেরে। বাংলাদেশ পড়ে যায় একটু চাপে। টানা ১২ ওভারে আসেনি বাউন্ডারি।
উইকেটে
যাওয়ার খানিক পরই পায়ে ক্র্যাম্প করে মাহমুদউল্লাহর। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই
যতটা সম্ভব দৌড়ে চেষ্টা করেছেন দ্রুত রান নিয়ে মুশফিককে সঙ্গ দিতে। দুজনের
জুটিতে বাড়ে রানের গতি।
রান বাড়নোর চেষ্টায় মাহমুদউল্লাহ উড়িয়ে মারতে
গিয়ে ২৭ রানে আউট হলে শেষ হয় ৫৬ রানের জুটি। বাংলাদেশকে আড়াইশ পার করানো
জুটি এরপরই। উইকেটে গিয়েই দৃষ্টিনন্দন সব শট খেলতে থাকেন মোসাদ্দেক। মুশফিক
তো ছিলেন ছন্দেই। ৩৩ বলে দুজনের ৪৪ রানের জুটি পরিস্থিতির বিবেচনায় ছিল
অমূল্য।
দৌলত জাদরানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শেষের আগের ওভারে আউট হয়েছেন মুশফিক। ২৪ বলে ৩৫ করে মোসাদ্দেক আউট হয়েছেন ইনিংসের শেষ বলে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ:
৫০ ওভারে ২৬২/৭ (লিটন ১৬, তামিম ৩৬, সাকিব ৫১, মুশফিক ৮৩, সৌম্য ৩,
মাহমুদউল্লাহ ২৭, মোসাদ্দেক ৩৫, সাইফ ২*; মুজিব ১০-০-৩৯-৩, দৌলত ৯-০-৬৪-১,
নবি ১০-০-৪৪-১, গুলবাদিন ১০-১-৫৬-২, রশিদ ১০-০-৫২-০, রহমত ১-০-৭-০)
আফগানিস্তান:
৪৭ ওভারে ২০০ (গুলবাদিন ৪৭, রহমত ২৪, শাহিদি ১১, আসগর ২০, নবি ০, শিনওয়ারি
৪৯*, ইকরাম ১১, নাজিবউল্লাহ ২৩, রশিদ ২, দৌলত ০, মুজিব ০*; মাশরাফি
৭-০-৩৭-০, মুস্তাফিজ ৮-১-৩২-২, সাইফ ৮-০-৩৩-১, সাকিব ১০-১-২৯-৫, মিরাজ
৮-০-৩৭-০, মোসাদ্দেক ৬-০-২৫-১)
ফল: বাংলাদেশ ৬২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান