সৃজনশীল প্রশ্ন কী রাখা যাবে কী যাবে না
Published : Friday, 12 July, 2019 at 12:00 AM
সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে
উদ্দীপকের ব্যবহার নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাশাপাশি জনমনে বিরূপ
প্রতিক্রিয়া হচ্ছে জানিয়ে কীভাবে এই প্রশ্ন করতে হবে সে বিষয়ে আগের একটি
পরিপত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার আন্তঃশিা বোর্ড
সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক স্বারিত এক জরুরি
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে প্রশ্ন করলে
সংশ্লিষ্ট শিা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক ও বিষয়ভিত্তিক শিককে দায়ী করে তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সেফুদা
নামে পরিচিত অস্ট্রিয়া প্রবাসী সেফাতউল্লাহকে নিয়ে প্রশ্ন করায় ঢাকার রাজউক
উত্তরা মডেল কলেজের শিক জাহিনুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত করেছে
ঢাকা শিা বোর্ড।
গত ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড
কলেজের (স্কুল শাখা) দশম শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিা বিষয়ের প্রাক-নির্বাচনী
পরীার প্রশ্নে বলা হয়, “অদ্ভুত ধরনের এক মানুষ সেফাতুল্লাহ সেফুদা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সে বিভিন্ন রকম কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। তরুণদের উদ্দেশে
সে বলে ‘মদ খাবি মানুষ হবি, দেখ আমি আরও এক গ্লাস খাইলাম।’ তার কথায়
প্রতিবাদ করে একজন বিজ্ঞ আলেম বললেন, তার মধ্যে যদি ঈমানের সর্ব প্রথম ও
সর্বপ্রধান বিষয়ের প্রভাব পরিলতি হত, তাহলে সে হয়ে উঠত একজন আত্মসচেতন ও
আত্মমর্যাদাবান ব্যক্তি।” এই উদ্দীপকের ভিত্তিতে চারটি প্রশ্ন করা হয়।
আন্তঃশিা
বোর্ডের জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সংশ্লিষ্ট সকল শিা প্রতিষ্ঠান
প্রধান এবং বিষয় সংশ্লিষ্ট শিকদের দৃষ্টি আর্কষণ করে জানানো যাচ্ছে যে,
মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীায় বিতর্কিত
বিষয়গুলোকে সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়নকালে উদ্দীপকে ব্যবহার করা হচ্ছে, এতে
বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে এবং জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলতি
হচ্ছে।”
২০০৯ সালের ২২ নভেম্বরের এ সংক্রান্ত পরিপত্রের নির্দেশনা
অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক যেন সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন করেন সে বিষয়ে
শিা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনুরোধ করা হয়েছে।
পরিপত্রের নির্দেশনাগুলো-
>>
পাঠ্যপুস্তকে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম
না থাকলে প্রশ্নে উদ্দীপক হিসেবে রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিকভাবে
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করা যাবে না।
>> বাংলাদেশের
সার্বভৌমত্ব, সরকার, কোনো জনগোষ্ঠী, আদিবাসী এবং অঞ্চলকে নেতিবাচকভাবে
উপস্থাপন করে কোনো উদ্দীপক ও প্রশ্ন করা যাবে না।
>> বাংলাদেশের
ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, গোষ্ঠী, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জাতীয় অনুষ্ঠানকে
অমর্যাদা করে কোনো উদ্দীপক ও প্রশ্ন করা যাবে না।
>> রাষ্ট্র বা জাতিকে অমর্যাদা করে কোনো উদ্দীপক ও প্রশ্ন করা যাবে না।
>> সংবিধান পরিপন্থি ও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো বিষয় ব্যবহার করে কোনো উদ্দীপক ও প্রশ্ন প্রণয়ন করা যাবে না।
>>
ধর্ম, তীর্থস্থান, ধর্মীয় স্থাপনা, রাষ্ট্রীয় স্থাপনা, ঐতিহাসিক স্থান
ইত্যাদিকে অসম্মান করে কোনো উদ্দীপক ও প্রশ্ন প্রণয়ন করা যাবে না।
>> কোনো অশোভনীয় বা আপত্তিকর ছবি কিংবা বিতর্কিত ব্যক্তি ও তার কার্যকলাপ উদ্দীপক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
>>
সরকার এবং সমাজ কর্তৃক অননুমোদিত বা গ্রহণযোগ্য বিষয়গুলো (যেমন: বাল্য
বিবাহ, যৌতুক ইত্যাদি) ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা যাবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়েছে, “এই পরিপত্রের পরিপন্থি কোনো প্রশ্ন প্রণয়ন করা হলে প্রধান শিক ও
বিষয়ভিত্তিক শিক ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন এবং প্রধান শিকসহ
সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এসব নির্দেশনা
সব কলেজ অধ্যকে অবহিত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিা অঞ্চলের সকল পরিচালক এবং সব
বিদ্যালয়, মাদ্রাসার প্রধান শিক ও সুপারিনটেনডেন্টকে অবহিত করতে সব জেলা
শিা কর্মকর্তাদের বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মাধ্যমিক ও
উচ্চ শিা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সব শিা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় শিাক্রম
ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান এবং সব জেলা প্রশাসককে
(ডিসি) এই নির্দেশনার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।