
নিজস্ব
প্রতিবেদক: অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়ারির বিরুদ্ধে র্যাব অভিযান চালানোর সময়
ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত নেপালিদের পালিয়ে যেতে ওয়াকিটকি হাতে এক ব্যক্তি
তাদের সাহায্য করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওয়াকিটকি হাতে থাকা ওই
ব্যক্তি নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। তবে পুলিশ বলছে, ওয়াকিটকি
হাতে থাকা ব্যক্তির পরিচয় জানতে তদন্ত চলছে। যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারও
সম্পৃক্ততা থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর)
রাতে রাজধানীর মতিঝিলের ইয়ংমেনস কাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স কাব, বনানীর
গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ এবং গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কাবে অভিযান
চালায় র্যাব। অভিযানে চারটি কাব থেকেই বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনো ও জুয়ার
সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়ার বিরুদ্ধে যখন র্যাবের এ
অভিযান চলছিল তখন সেগুনবাগিচার একটি বাসা থেকে ৯ নেপালি পালিয়ে যান। এই
নেপালিরা ক্যাসিনো ও জুয়ার কারিগরি সহায়তা দিতেন। ওয়াকিটকি হাতে থাকা
একজনের সহায়তায় এই নেপালিরা পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে ভবনটির সিসিটিভি
ফুটেজে।
সিসিটিভ ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার রাত ১০টা ৪৯ মিনিটে ওয়াকিটকি
হাতে সেগুনবাগিচার ৬/সি বাসার মূল গেট দিয়ে ঢুকে লিফটে বাসার উপরে চলে যান
কয়েকজন। এরপর ভবনের একটি ফ্যাটে কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে ১১টা ২৮ মিনিট ১৫
সেকেন্ডে তারা বের হয়ে যান। এ সময় তাদের একজনের হাতে একটি ব্যাগ দেখা যায়।
তারা চলে যাওয়ার পর রাত ১টা ৪৬ মিনিটে একে একে ৯ নেপালি বাসাটি ত্যাগ করেন। এ সময় তাদের হাতেও বেশকিছু ব্যাগ দেখা গেছে।
স্থানীয়রা
জানান, ওই বাসার ছয়তলার একটি ফ্যাটে দুই মাস ধরে ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া
থাকতো নেপালিরা। প্রথমে দুজনের কথা বলে ভাড়া নেয়া হলেও সেখানে থাকতো চারজন।
নেপালিদের
ভাড়া নেয়ার এই পুরো প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেন একজন বাংলাদেশি। যার নাম
মাসুম। তিনি নেপালিদের মোহামেডান কাবের ট্রেইনার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে
বাসাটি ভাড়া নেন। তবে মোহামেডান কাবের কর্মকর্তা মাসুম থানায় জমা দেয়া
ভাড়াটিয়া তথ্যে নেপালিদের থাকার বিষয়টি গোপন করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ভবনটির
নিরাপত্তাকর্মী মামুন বলেন, ‘সন্ধ্যার সময় তিনজন পুলিশ আসছিল, একটা
ওয়ারলেস ছিল। যাওয়ার সময় বললাম আপনাদের ঠিকানা দিয়ে যান। বলে- তোমাদের তো
কোনো সমস্যা নেই। বাসায় গেস্ট এলে তো তোমাদের কোনো সমস্যা হয় না।’
ফ্যাট
মালিক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘পুলিশ সিভিল ড্রেসে আসছে। দারোয়ানকে ভেতরে
নেয়নি। দারোয়ানকে বাইরে রেখে ওরা কথা বলে চলে গেছে। পুলিশ চলে গেলে, ওরা
ভোররাতে চলে যায়।’
অভিযোগ পাওয়ার পর বাড়িটি পরিদর্শন করেন ডিএমপির রমনা
জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারো
সম্পৃক্ততা মিললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রমনা জোনের অতিরিক্ত
উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, 'সিসিটিভির ফুটেজে যদি আইনশৃঙ্খলা
বাহিনী কোনো লোক যদি থাকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। সেই সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে দেখব তারা কারা।
এদিকে
বুধবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায়
র্যাব। এর মধ্যে মতিঝিলের ইয়ংমেনস কাব থেকে ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকাসহ ১৪২
জনকে আটক করা হয়।
বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ
নামক ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে কাউকে না পাওয়ায় ক্যাসিনোটি সিলগালা করা
হয়। মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স কাবে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকা,
২০ হাজার ৫০০ জাল টাকাসহ ক্যাসিনোটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
গুলিস্তানের
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কাবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকাসহ ক্যাসিনো পরিচালনা ও
খেলার অভিযোগে ৪০ জনকে আটক করা হয়। এ সব অভিযানে ১৮২ জনের মধ্যে ৩১ জনকে এক
বছর করে এবং বাকিদের ছয় মাস করে কারাদ- দেন র্যাবের দুই ম্যাজিস্ট্রেট।