
রণবীর ঘোষ
কিংকর: আজ মহা অষ্টমী। শারদীয় দুর্গাপূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং
জাঁকজমকপূর্ণ দিন আজ। পাঁচ দিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের সব চেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ তিথি মহাঅষ্টমী। এই তিথিতে সকালে দেবী পূজার সাথে সাথে
কুমিল্লার রামকৃষ্ণ মিশনে নবম বারের মত কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন
করবে কুমিল্লার সনাতন সম্প্রদায়। সকাল ১০টায় কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশনে
কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার দুর্গতিনাশিনী মা দেবীর নবপত্রিকা
প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে মহাসপ্তমী পূজা শুরু হয়। সকালে ত্রিনয়নী দেবী
দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। মা দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার শুরু হয়
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। সারা
দেশের ন্যায় কুমিল্লা পূজা মন্ডপগুলোতে ঢাকের ঢোলে ধ্বনিত হচ্ছে বাঙালির
হৃদয়তন্ত্রীর বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার।
মূলত দুর্গাপূজার মূল পর্ব শুরু
হয় সপ্তমীতে। গতকাল শনিবার চলে দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি
প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণ। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে
দেবীর পূজা চলে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও
দ্বীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা। গতকাল সপ্তমী পূজার দিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন
পূজামন্ডপে ভক্তিমূলক সঙ্গীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন
করা হয়। দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভের মধ্য
দিয়ে গতকাল শেষ হয়েছে সপ্তমী পূজা।
আজ বৃহস্পতিবার মহাঅষ্টমী। দেবী
পূজার ষষ্ঠী থেকে দশমী, তার মধ্যে মহা ধুমধামে পালিত হয় মহা অষ্টমী পূজা। এ
তিথিতে সন্ধী পূজা, কালী পূজাসহ নারী জাতিকে সম্মান জানিয়ে মায়ের সাকার
উপশনার জন্য কুমারী পূজা করা হয়। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ এর ধারাবাহিকতায়
সপ্তমবারের মত কুমিল্লার রামকৃষ্ণ মিশনে দেবী দুর্গা রূপে অনুর্ধ্ব ৭
বছরের ব্রাহ্মণ পরিবারের কুমারীকে মহা ধুমধামে কুমারী পূজা করা হবে।
সকাল
৯টা ৫৭ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে দেবীর মহা অষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা।
কুমিল্লার রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল ১০টায় নবম বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গা
পুজার অন্যতম আকর্ষণ কুমারী পূজা। দিবা ২টা ২৭ থেকে বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটের
মধ্যে সন্ধি পূজা।
হিন্দু শাস্ত্রানুসারে সব স্ত্রীলোক ভগবতীর (মা
দুর্গা) এক-একটি রূপ। ঈশ্বরকে মাতৃভাবে আরাধনাই হলো দুর্গাপূজা। মানুষ
প্রতিমায় দুর্গাপূজাই হলো কুমারী পূজা। সব নারীর মধ্যেই মহামায়া দুর্গা
বিরাজমানÑ এ তত্ত্ব উপলব্ধি থেকেই দুর্গোৎসবের অংশ হিসেবে কুমারী পূজা করা
হয়। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর প্রকাশ বেশি সবচেয়ে’ কুমিল্লার রামকৃষ্ণ
মিশনে আরাধ্য রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাণীকে সামনে রেখে গত বছরের মতো এবারও
অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা।
জানাযায়, ১৯০১ সালে কলকাতায় স্বামী
বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মঠে কুমারী পূজা হয়ে
আসছে। আর এ পূজা ঢাকার রাম কৃষ্ণ মিশনে শুরু হয় ১৯১৪ সালে এবং কুমিল্লার
রামকৃষ্ণ মিশনে শুরু হয় ২০১১ সালে।
এব্যাপারে রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালনা
পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক জানান, কুমিল্লার রামকৃষ্ণ
আশ্রমে ৫০এর দশকে তিন বছর কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতের বেলুর মাঠ
২০০৭ সালে কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশন অধিগ্রহণ করায় ২০১১ সালে প্রথম কুমার
পূজা শুরু হয়। আর প্রতিটি কুমারী পূজায় কুমিল্লায় ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি
হয়েছে। প্রতি বছরই প্রায় ১৫-২০হাজার ভক্তবৃন্দের সমাগম হয়। এ বছরও আশা করি
আরও বেশি ভক্তের সমাগম হবে। কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে সকল
ভক্তবৃন্দকে কুমারী পূজা দর্শনের আহবান জানাচ্ছি।
এদিকে গতকাল বুধবার
কুমিল্লার প্রতিটি পূজা মন্ডপ ছিল আনন্দে ভরপুর। সন্ধ্যার সাথে সাথে ঢাকের
বাড়ি, বাঁশি এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের বাজনায় পূজা মন্ডপগুলো মুখোরিত হয়ে
উঠে। মিশ্র আবহাওয়ায় পূজা উদযাপন করতে পারছে ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীরা।
সন্ধ্যার পর থেকে কুমিল্লার রাজ কালী বাড়ি, কাল্যায়নি কালী বাড়িসহ বিভিন্ন
পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। আজ মহাঅষ্টমীর বিভিন্ন পূজা
মন্ডপে দেখা যাবে সকল শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাদেরকেও।