জহির শান্ত : প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিংবা এ ভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে স্থাপিত কোভিড-১৯ ইউনিটে প্রতিদিন গড়ে ৫ জনেরও বেশি রোগী মারা যাচ্ছেন। গত ৩ জুন হাসপাতালটিতে ডেডিকেটেড করোনা ইউনিট চালুর পরবর্তী ৪৫ দিনে করোনার সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২৩২ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন মারা গেছেন পাঁচজনের বেশি লোক। আর চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনেই (গতকাল শনিবার পর্যন্ত) মারা গেছেন ৮৮ জন।
সবশেষ গতকাল হাসপাতালটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে আরো চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা সময়ের মধ্যে এ চারজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে একজন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বাকি তিনজন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। কুমেক হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ১ জুলাই ৫ জন, ২ জুলাই ৭ জন, ৩ জুলাই ৮ জন, ৪ জুলাই ৮ জন, ৫ জুলাই ৭ জন, ৬ জুলাই ৫ জন এবং ৭ ২ জন, ৮ জুলাই ৫জন, ৯ জুলাই ৯ জন, ১০ জুলাই ১ জন, ১১ জুলাই ৫জন, ১২ জুলাই ৫ জন, ১৩ জুলাই ৩জন, ১৪ জুলাই ৫ জন, ১৫ জুলাই ৪জন, ১৬ জুলাই ১জন, ১৭ জুলাই ৪জন এবং ১৮ জুলাই মারা যান ৪ জন।

গত ৩ জুন কুমিল্লা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিংবা এ ভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসার জন্য পূর্ণাঙ্গ কোভিড-১৯ ইউনিট চালু করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে করোনা ইউনিটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে করোনা ইউনিটে ১০টি আইসিইউ শয্যা ছিলো। পরে যোগ হয় আরো ৮টি।
কিন্তু সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ও চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই ঘটছে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের তালিকা।
জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও কুমিল্লার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালটিতে বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসার জন্য আসেন একেবারে শেষ মুহূর্তে- মুমূর্ষূ অবস্থায়। ফলে চিকিৎসা সেবায় আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও তাদের অনেককে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এখানে আসা রোগীদের একটা বড় অংশই বয়োবৃদ্ধ। তাদের অনেকেরই অক্সিজেন সিচুরেশন লেভেল একেবারে নি¤œ পর্যায়ে চলে আসে। যার কারণে এখানে মৃত্যুর হারটা একটু বেশি। তবে আমাদের চিকিৎসক টিম খুবই আন্তরিক। তাঁরা তাঁদের সাধ্য অনুযায়ী রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।