
শাহীন আলম, দেবিদ্বার।
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’পাশের ফুটপাত দখল করে চলছে বেচাকেনা! পিছনে আটকে রয়েছে শত শত গাড়ি। কারোই কোনো ভ্রুপে নেই সেদিকে। সড়কে সৃষ্ট যানজট দেখেও না দেখার ভান করছে সড়ক দখল করে বসা দোকানিরা। একটু এগোলেই চোখে পড়বে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেøেক্সর সামনে সারি সারি এ্যাম্বুলেন্স- মাইক্রোবাস রাস্তা দখল করে বানিয়ে নিয়েছে নিজেদের স্ট্যান্ড। ফলে এই সড়কের দু’পাশের ফুটপাত দখল হওয়ায় যান চলাচলের কোনো সুযোগ নেই।
শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিউ মার্কেটের কাঁচা বাজারের সামনে মূল সড়কের ওপরে আখ বিক্রি করছে কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা খাজনা নিয়ে ফুটপাত দখল করে আখ বিক্রি করছেন। এর পাশেই সিরিয়ালে দাঁড়ানো আছে দেবিদ্বার থেকে বড় আলমপুর যাওয়ার জন্য ব্যাটারি চালিত অটোরিস্কার অবৈধ স্ট্যান্ড। এর ৫/৬ ফুট দূরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে দেবিদ্বার-ওয়াহেদপুর যাওয়ার সিএনজি স্ট্যান্ড। এ স্ট্যান্ডগুলোর

কারণেও ফুটপাতে পা ফেলারও জায়গা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের অংশেও অবৈধভাবে দখলে নিয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। হাসপাতালে প্রবেশ গেইটের সামনে সিএনজি, অটোরিক্সার জটলার কারণে মুমুর্ষ রোগীরা হাসপাতালে প্রবেশ ও বের হতে দীর্ঘ সময় যানজটে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এছাড়াও সরকারি হাসপাতালের সামনে ও বিপরীত পাশের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার, ভ্রাম্যমান ভ্যান, এ্যাম্বুল্যান্সের স্ট্যান্ড, তরিতরকারি ও মাছের দোকান। সড়কের ওপরে এসব অবৈধ দখলদারদের কারণে মূল সড়কটি সরু হয়ে যাওয়ায় দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় ধরে যানজটে বসে থাকতে হয়ে যাত্রীদের। যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থা চলছে খুঁড়ে খুঁড়ে। অবৈধভাবে সড়ক ও ফুটপাত দখল বাণিজ্যের কারণে ফুটপাতে চলাচল করা মানুষ পড়ছে চরম দুর্ভোগে। অদৃশ্য কারণে প্রশাসন থেকেও নেয়া হচ্ছেনা কোন ব্যবস্থা। নিউ মার্কেট চত্ত্বরে মূল সড়কের ওপরে দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রী উঠানামা করা ও সিরিয়ালে দাঁড়ানো সিএনজি অটোরিস্কার কারণে সৃষ্ট যানজটেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। এছাড়াও নিউ মার্কেটের চত্ত্বর থেকে এসএ সরকারি কলেজ গেইট পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশের ফুটপাত দখল করে কেনাবেচা করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

ক্রেতারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পন্য কিনছেন। ফলে এ রাস্তাটিতে দুই দিকে সরু হওয়ায় মানুষের চলাচলেও ভোগান্তি বেঁড়েছে।
মুরাদনগর উপজেলার আবু কালাম ও শরীফ মাহমুদ প্রতিদিন বাসে করে কুমিল্লায় গিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তারা এ প্রতিবেদককে জানান, এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দেবিদ্বারে যানজট আছে কিনা আগে থেকেই খোঁজ নিতে হয়। এই সড়কে প্রতিদিন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তার দু’পাশে দোকানের কারণে যানবাহন সামনের দিকে এগোতে পারে না। এছাড়াও যেকোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
সড়কে চলাচল করা একাধিক পথচারীরা বলছেন, পৌরসভার নিউমার্কেট এলাকা মহাসড়কের দু’পাশ অবৈধ দখলের কারণে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয়। সকাল ৭টায় বসা এই বাজার চলে রাত পর্যন্ত। এছাড়া রাস্তা দখল করে মাইক্রোবাসের অবৈধ স্ট্যান্ড বানানোর কারণে এ সড়কে সব সময় যানজট লেগে থাকে।
বিনাইপাড় গ্রামের মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এই সড়কে নিয়মিত যাতায়ত করতে হয়। বর্তমানে দু’পাশের ফুটপাত পুরো অংশেই বাজারসহ অটোস্ট্যান্ড ও ভ্রাম্যমান দোকানের দখলে। এসব অবৈধ দখলদারদের কারণে এ পথে হেঁটে চলার কোনো উপায় নেই।

ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়ে ভিড়ের কারণে সামনে এগোতে পারছিলেন না এক পথচারী। তিনি বলেন, ফুটপাতের যেটুকু অংশ ফাঁকা আছে, সেটাও লোকজনের চলাচলের জন্য নয়। ওই অংশটা হলো ক্রেতাদের দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করার জন্য। রাস্তার ওপর দোকান, সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশা, সিএনজি-বাসে যাত্রী উঠানামা সব মিলিয়ে একটা প্রচন্ড বিশৃঙ্খল অবস্থা। একটু পর পর লেগে যায় যানজট। এর থেকে পরিত্রাণ কবে পাবো ?
দেবিদ্বার প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ময়নাল হোসেন ভিপি বলেন, জনসাধারণের চলাচলের জন্য মূল সড়কের দু‘পাশে রয়েছে ফুটপাত। অথচ পথচারির নাগরিক অধিকার ফুটপাতে হাঁটাও কেড়ে নিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। জরুরী কোন রোগী হাসপাতালে প্রবেশের সময় নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ওমানী বলেন, এ সড়কের দুই পাশের ফুটপাত ও রাস্তা দখলে চলে গেছে। ফুটপাত এত সরু হয়ে গেছে যে হেঁটে চলাও যায় না। ফুটপাত দখল করে এসব দোকানি বসছেন স্থায়ীভাবেই। আর যাঁরা ফুটপাতে জায়গা পাচ্ছেন না, তাঁরা মালামাল নিয়ে বসে পড়েছেন রাস্তার ওপরই। এমনকি রাস্তার ওপরেও রাখা আছে ফলের ঝুঁড়ি, সবজির বস্তা প্রভৃতি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের চলতে হচ্ছে ফুটপাত ছেড়ে সড়কের মাঝপথে। ফুটপাত ও রাস্তা দখল করায় জনসাধারণের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান বলেন, অবৈধ দখলের কারণে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও ফুটপাতে অতিমাত্রায় যানজট লেগে থাকে। উপজেলা প্রশাসন থেকে দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদ উল্লাহ’র সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সমস্যার কথা জেনে কোন উত্তর না দিয়েই লাইন কেটে দেন।