জহির শান্ত: স্কুলশিক্ষিকা
স্ত্রীর সামনেই জিল্লুর রহমান (৪৮) নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার সকালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নং
ওয়ার্ডের চৌয়ার বাজার (পুরাতন সড়ক) এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। জিল্লুর রহমান
২০১৬ সালে কুমিল্লা সিটির ২৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে
অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও আসন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের কাউন্সিলে তিনি সভাপতি
প্রার্থী ছিলেন বলেও জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র
জানায়, নিহত জিল্লুর রহমান ওই এলাকার মৃত মাখলেছুর রহমানের ছেলে। তিন
পুত্রসন্তানের জনক জিল্লুর রহমানের স্ত্রী জাহানারা বেগম পাশের এলাকার
তারাপাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। প্রতিদিনের মতো গতকাল সকাল
৮টার দিকে স্ত্রীকে স্কুলে পৌঁছে দেয়ার জন্য জিল্লুর মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি
থেকে বের হয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন। স্ত্রী এসে বাইকে উঠার
পূর্ব-মুহূর্তে চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিহিত অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা
এসে জিল্লুরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায়। এসময় তার স্ত্রীর শোর-চিৎকার শুনে
স্থানীয়রা এসে জিল্লুরকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কে বা কারা কী
উদ্দেশ্যে যুবলীগ নেতাকে হত্যা করেছে- তা জানা না গেলেও ‘স্থানীয় রাজনৈতিক
গ্রুপিং-দ্বন্দ্বের জের ধরেই জিল্লুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ
করছেন তার স্বজনরা।

নিহতের চাচাতো ভাই গোলাম
জিলানী বলেন, ‘জিল্লুর ভাই গত সিটি নির্বাচনে কুমিল্লা সিটির ২৫ নং
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। তখন থেকেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে
বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের হাতেই খুন
হলেন আমার ভাই।’
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে জানা
গেছে, মাস তিনেক আগে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর
মো. হাসান ও তার সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি ছিলেন
জিল্লুর রহমান। কাউন্সিলর হাসান নিজেই ওই মামলার বাদী। এ মামলায় গ্রেপ্তার
হয়ে ১৫ দিন কারাভোগের পর ১০ দিন আগে জামিনে মুক্তি পান জিল্লুর।
কুমিল্লার
পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি একটি পরিকল্পিত
হত্যাকাণ্ড। এখানে রাজনৈতিক ইস্যু আছে। এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক
দ্বন্দ্ব চলে আসছে। আমরা সব বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। হত্যাকারীদের চিহ্নিত
করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল
সকাল ১০টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, লাশঘরে পড়ে আছে
জিল্লুর রহমানের মরদেহ। তার চার হাত-পা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। মর্গের সামনে
নিস্তব্ধ বসে আছেন জিল্লুর রহমানের স্ত্রী জাহানারা বেগম। তার চোখ বেয়ে
পানি পড়ছে। অধিক শোকে পাথর হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। পাশেই বুক চাপড়ে চিৎকার
করছে তাদের বড় ছেলে। ছেলেটির ‘বাবা-বাবা’ চিৎকারে সেখানে এক হৃদয়বিদারক
পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
হাসপাতালে উপস্থিত জিল্লুর রহমানের
আরেক চাচাতো ভাই কাউসার বলেন, ‘সকালে লোকজনের শোর-চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে
এসে দেখি, জিল্লুর ভাই রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন। দ্রুত তাকে
হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হলো না।’
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমদাদ উল্যাহ বলেন, ‘খবর পেয়ে
আমরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে এসেছি। জিল্লুর রহমানের এমন মৃত্যু
মেনে নেয়া যায় না। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।’
হত্যায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

দুর্বৃত্তদের
হাতে খুন হওয়া যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমানের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল
রাত সাড়ে ৮টায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিপুলসংখ্যক মুসল্লী
অংশগ্রহণ করেন। এসময় তারা খুনীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার শাস্তির
দাবি জানান।
এদিকে যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামলা
দায়ের হয়নি। তবে সদর দক্ষিণ থানার তদন্ত কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ ধর কুমিল্লার
কাগজকে জানিয়েছেন, মামলার প্রক্রিয়া চলছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ক্লু খুঁজতে
ও জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে বলেও জানান
তিনি।
একই কথা জানিয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার আরো বলেন, যেহেতু নিহত
জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাই তিনিই প্রধান স্বাক্ষী। তার
ভাষ্য ও অন্যান্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যায় জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।
যার যে পরিচয়ই থাকুক না কেন, হত্যাকারীকে হত্যাকারী হিসেবেই দেখা হবে।