Published : Saturday, 21 November, 2020 at 12:00 AM, Update: 21.11.2020 2:03:36 AM

মাসুদ আলম ||
কুমিল্লার
ফসলের মাঠগুলোতে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম লেগেছে। শীতে বৈশ্বিক
মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের ঝুঁকির আশঙ্কায় এবারের পয়লা
অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসব পালন করা হয়নি। প্রতিবছরের মতো এবার নবান্ন উৎসবের
মধ্য দিয়ে ধান কাটা শুরু করতে না পারলেও কুমিল্লার কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময়
পার করছেন নতুন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে। মাঠে ধান কেটে অনেক কৃষক আঁটি বেঁধে
কাঁধে করে, আবার অনেকে বিভিন্ন যানবহনের সাহায্যে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক
বাড়ির উঠোনে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। নতুন ধান নিয়ে কৃষকের যেমন ব্যস্ততা,
তেমনি আনন্দেরও যেন শেষ নেই।
গতকাল শুক্রবার কুমিল্লার সদর উপজেলার
বিবিরবাজার সীমান্ত এলাকা এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার ধনেশ্বরী, মহেশপুর,
বানাশুয়াসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলের মাঠজুড়ে সোনালি ধান। যেন
পাকা ধানের সোনালি কার্পেট বিছানো। বাতাসে ভাসছে পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধ।
স্থানীয় ও এলাকার বাইরে থেকে আসা শ্রমিকেরা দল বেঁধে ধান কাটছেন। মাঠের সব
জমির ধান এখনো সম্পূর্ণ পাকেনি। অনেক জমিতে জমে আছে পানি। এই পানিতে
দাঁড়িয়েই চলছে ধান কাটা। দুপুরের পরপরই কাটা ধান মাথায় করে নির্ধারিত
স্থানে জমা করা হচ্ছে। সেখান থেকে আঁটি বেঁধে কাঁধে, মাথায় কিংবা
যন্ত্রচালিত গাড়িতে করে মাড়াইয়ের স্থানে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে মাড়াই শেষে
শুকানোর পর বস্তাভর্তি ধান চলে যাচ্ছে কৃষকের ঘরে।
মাঠের কৃষকরা জানান,
কয়েক দফায় বৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারণে আমন ধান চাষে ব্যাঘাত ঘটলেও এবার
ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়াও ধান কাটার পর এই জমিগুলোতে শীতের সবজির
আবাদ করা হয়। তবে কয়েক দিন আগে সাগরের নিন্মচাপে ঝড় ও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে
কিছু জমিতে ধানের তি হয়েছে। মাঠে শুয়ে পড়েছে অনেক জমির পাকা ধান। ইঁদুর ও
পোকায় কিছু ধানের ক্ষতি করেছে। এছাড়া শ্রমিক সংকট, উচ্চ পারিশ্রমিক ও
পরিবহন সংকট রয়েছে। তারপও সব কিছু মিলিয়ে এবারও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।
কুমিল্লার
সদর দক্ষিণ উপজেলার মহেশপুরের কৃষক মোকলেছুর রহমান গতকাল শ্রমিক দিয়ে মাঠে
আমন ধান কাটছিলেন। তিনি জানান, করোনার মধ্যে শ্রমিক সংকট থাকলেও ৮ কানি
জমিতে তিনি আমন ধান রোপন করেছেন। ধানের বাম্পার ফলনে তিনি খুশি। তবে
নি¤œচাপে ঝড় ও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কিছু জমিতে ধান শুয়ে গেছে, যার কারণে ওই
জমিগুলোর ধান কাটতে শ্রমিক বেশি লাগছে। এছাড়া পোকা ও ইঁদুরে কিছু ধানের
ক্ষতি করেছে।
একই এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি ৫ কানি জমিতে
আমনের চাষ করেছেন। তার জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান হয়েছে। তবে তার
জমিতে এখনও পানি জমে আছে। পানির মধ্যেই ধান কাটছেন শ্রমিক দিয়ে। জমিতে পানি
থাকায় ইঁদুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে।
কুমিল্লা সদরের বিবিরবাবার
এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান জানান, ৭-৮ কানি জমিতে তিনি এবার আমন ধানের চাষ
করেছেন খুব কষ্ট করে। করোনায় শ্রমিকের পারিশ্রমিক বেশি থাকায় খরচও বেশি
পড়েছে। তারপরও তিনি খুশি। কারণ তার সবকটি জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।
তার এই জমিগুলোতে শীতের সবজিও হয়। আমন ধান কাটা সম্পন্ন হলে তিনি বারো ধান
রোপনের আগে সবজির চাষ করবেন।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের
উপ-পরিচালক সুবজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘চলমান করোনায় কুমিল্লার প্রত্যেকটি
মাঠে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় এক লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা
আমনের আবাদে প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজারের বেশি মেট্রিক টন ধান কৃষক তার ঘরে
তুলবে বলে আশা করছি। তবে এবার করোনর কারণে কৃষকদের নিয়ে নবান্ন উৎসব করতে
পারিনি। তবে কৃষক তার ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।’