
কোটি
ফুটবলভক্তকে কাঁদিয়ে অন্যপারের বাসিন্দা হলেন বাঁ পায়ে অসংখ্য মুহূর্তের
জন্ম দেওয়া ফুটবল ঈশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনা । গতকাল (বুধবার) হৃদযন্ত্রের
ক্রিয়া বন্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে প্রায়
একাই বিশ্বকাপ জেতানো এই কিংবদন্তি। তাঁর বয়স হয়েছিলো মাত্র ৬০ বছর।
আর্জেন্টিনা
ক্রীড়া দৈনিক ওলে দুঃসংবাদটি জানিয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই মস্তিষ্কে
অস্ত্রোপচার হয়েছিল তার। হাসপাতাল ছেড়ে ফিরেছিলেন নিজ বাড়িতে। কে জানতো,
পৃথিবীতে তার জন্য অপো করছিল আর কয়েকটা দিন। এ মাসের শুরুতে মস্তিষ্কে
রক্তরণের জন্য অস্ত্রোপচার করাতে হয় সাবেক নাপোলি ও বোকা জুনিয়র্স তারকাকে।
প্রথম দিকে দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু অ্যালকোহল
আসক্তির কারণে নানা জটিলতা দেখা দেওয়ায় অনেক বেশি সময় সেখানে থাকতে হয়।
যদিও তার চিকিৎসকদের অভিযোগ ছিল, জীবনের প্রতিটি সময় নিয়মকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়ে নিজের স্বভাবসুলভ আচরণে মগ্ন থাকা ম্যারাডোনা হাসপাতালে থাকতে
চাননি। চিকিৎসকের নিষেধের পরও হাসপাতাল ছাড়তে উঠেপড়ে লেগেছিলেন তিনি।
শেষ
পর্যন্ত গত ১২ নভেম্বর অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল ছাড়েন ম্যারাডোনা। তবে
গতকাল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে থেমে গেল তার জীবনযাত্রা। আর্জেন্টিনা
ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) এক টুইট বার্তার খবরটি নিশ্চিত করেছে, ‘আমরা
ভীষণ শোকার্ত আমাদের কিংবদন্তির মৃত্যুতে। আপনি সবসময় থাকবেন আমাদের
হৃদয়ে।’
১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনোস আইরেসের সুবিধাবঞ্চিত এলাকা ভিয়া
ফায়োরিতায় জন্ম ডিয়েগো ম্যারাডোনার। কিশোর বয়স থেকে নজর কাড়েন নিজের ফুটবল
প্রতিভা দিয়ে। ১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হয়। ১৯ বছর বয়সে দেশের হয়ে
জেতেন যুব বিশ্বকাপ।
তরুণ বয়সের কারণে ১৯৭৮ বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও
১৯৮২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে চাপান ম্যারাডোনা। ব্রাজিলের বিপে
লাল কার্ড পেয়ে শেষ হয় তার আসর।
পরের বার মেক্সিকোতে বিশ্বকে দেখান তার
সামর্থ্য। তার নৈপুণ্য ও নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো আর্জেন্টিনা জিতে নেয়
বিশ্বকাপ। আশির দশকের শেষে ইতালিয়ান সেরি আতে নাপোলিকে জেতান লিগ ও
ইউরোপিয়ান কাপ শিরোপা।
৯০ দশকে নন্দিত এই তারকার পতনও দেখতে পায় ফুটবল
বিশ্ব। ১৯৯১ সালে ড্রাগসহ ধরা পড়েন নেপলসে। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে
বহিষ্কৃত হন ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে। ১৯৯৭ সালে বিদায় নেন পেশাদার ফুটবল
থেকে।
২০০০ সালে ফিফার জরিপে ফ্যানদের ভোটে পেলেকে পেছনে ফেলে পান
'শতাব্দী সেরা ফুটবলারের' সম্মান। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপে তার করা
দ্বিতীয় গোলটি পায় শতাব্দী সেরা গোলের স্বীকৃতি।
২০০৭ সালে হাসপাতালে
ভর্তি হন যকৃত ও পাকস্থলীর অসুখে। দ্রুত স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তার। প্রায়
দুই মাস পর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।
তারপর থেকে নিজের জীবনে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করেছেন ম্যারাডোনা। ২০১০ সালে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দলকে নিয়ে যান বিশ্বকাপে।
তারপর থেকে কোচিং ক্যারিয়ারে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন এই কিংবদন্তি।
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের পর কোচিং করান সৌদি আরবের আল-ওয়াসল কাবকে। সেখান থেকে আরব আমিরাতের ফুজাইরাকে দীা দেন দুই বছর।
তার
জীবনের শেষ দুই বছর কেটেছে লাতিন আমেরিকায়। মেক্সিকোর দোরাদোস দে সিনালোয়া
ও আর্জেন্টিনার হিমনাসিয়া দে লা প্লাতার কোচিং করান তিনি।