
তানভীর দিপু ||১৩৫
বছরের ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা টাউন হল বীর চন্দ্রনগর গণপাঠাগার ও মিলনায়তনটি
প্রতœসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী ১৯ ডিসেম্বর
কুমিল্লায় গণশুনানি আহ্বান করা হয়েছে। ওইদিন বেলা ১১টায় কুমিল্লা টাউন হল
প্রাঙ্গণেই এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল মান্নান ইলিয়াস। গতকাল বুধবার বিকালে
কুমিল্লা সার্কিট হাউজে ‘বীর চন্দ্রনগর গণপাঠাগার ও মিলনায়তন (টাউন হল)
প্রতœসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ বিষয়ে গঠিত কমিটি’র সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য
জানান তিনি।
গতকালের মতবিনিময় সভায় কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য
আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীরসহ এ
সংক্রান্ত গঠিত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে কুমিল্লা টাউন হলকে
আধুনিকায়নের প্রস্তাবকারী সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লার কাগজকে
বলেন, টাউন হলের আধুনিকায়ন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কুমিল্লার সাধারণ মানুষ।
এছাড়া দেশের যেসব বিশিষ্টজন টাউন হলের আধুনিকায়নের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন,
তাদেরকেও গণশুনানিতে অংশ নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
জেলা প্রশাসক মো.
আবুল ফজল মীর বলেন, ‘আমরা গণশুনানি গ্রহণ করে প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে
পাঠাবো। মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
এর আগে বীর
চন্দ্রনগর গণপাঠাগার ও মিলনায়তনটি (টাউন হল) প্রতœসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ
বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়ে গঠিত কমিটির সদস্যরা বীর চন্দ্রনগর
কুমিল্লা টাউন হল পরিদর্শন করেন। এসময় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম
সচিব মো. শওকত আলী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক স্থপতি মো. আসিফুর
রহমান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. হেলাল উদ্দিন, স্থানীয় সরকার
কুমিল্লার উপপরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান, ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডয়ান
হাসিবুল হাসান সুমি, টাউন হলের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সিটি
কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, সদর এমপির প্রতিনিধি মহানগর
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান জাহাঙ্গীর, গণপূর্ত বিভাগ
কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার, গণপূর্ত বিভাগ কুমিল্লা
সার্কেল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কিউ এম শাহজালাল মজুমদার, গণপূর্ত বিভাগ
ঢাকা পেকু সার্কেল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফিরোজ হাসান উপস্থিত
ছিলেন।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আ ক ম
বাহাউদ্দিন বাহার টাউন হল ভেঙে এর আদলেই আধুনিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব দেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক সভায় টাউন হল ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের
নকশার এনিমেশন দেখানো হয়। এ খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর
দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ১৩৫ বছর বয়সী এই ভবন ভাঙার
বিরোধিতা করে দেশের বিশিষ্ট শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরা ভবনটিকে
প্রতœতত্ত্ব হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানান। এরই প্রেক্ষিতে সংস্কৃতি
মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল মান্নান ইলিয়াসকে আহ্বায়ক করে ১৩
সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
১৮৮৫ সালের ৬ মে নগরের
প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের ৩ একর ৪৩ শতক জায়গা নিয়ে কুমিল্লা টাউন হল
প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের রাজপরিবারের সদস্য
মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে ভবনটি নির্মিত।
১৯৩০ সালে এটি প্রথম সংস্কার করা হয়। ২০০২-০৩ সালে এটি আবারো সংস্কার করা
হয়।
ওদিকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আয়োজিত এক সভায় সময়ের প্রয়োজনে
আধুনিক কুমিল্লা বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন ও গণপাঠাগার (টাউন হল) প্রতিষ্ঠার
পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সৈয়দ আহম্মেদ
ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান পাখী, ড. প্রকৌশলী মো. আব্দুল মতিন,
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, কাজী মনসুর উল হক, ড. আবুল
কালাম আজাদ, কাজী মাহতাব সুমন, শওকত আহসান ফারুক, মেজবাহুর রহমান টিপু,
জাফরুল আহসান পেনি, মো. কবীর খান, বদিউজ্জামান, গোলাম মাওলা, জহিরুল কাউয়ুম
এফসিএ, এ এস এম মিজানুর রহমান ইরান, মো. হাবিব উল্লাহ তুহিন, খান মফিজুল
ইসলাম, আবদুল্লাহ আল জহির স্বপন, সোহেল রহমান, ফরহাদ আখতার মো. শাহরিয়ার,
আবদুল মালেক চৌধুরী, এম কে জাকারিয়া, হুমায়ুন কবির ভূইয়া, গাজী এমদাদ,
সাজ্জাদ হোসেন, সারওয়ার আলম মনু, মো. মোস্তফা কামাল, আ ফ ম মাহবুবুল হক,
মো. দিদারুল আলম প্রমুখ। সভায় টাউন হলের আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা ও যুক্তি
তুলে ধরেন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন।
কুমিল্লা টাউন হল ধন্য
হয়েছে উপমহাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পদচারণায়। ভবনটি বয়ে চলেছে- নেতাজি
সুভাষ চন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি
কাজী নজরুল ইসলাম, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ,
ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ডক্টর সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়,
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক বিশিষ্টজনের স্মৃতি। কুমিল্লার
আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু এই টাউন হল।