তানভীর দিপু:
কুমিল্লা
জেলায় প্রতি সপ্তাহে করোনা ভাইরাস শনাক্তের হার দ্বিগুণের বেশি। কুমিল্লা
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গত ৩ সপ্তাহের তথ্য পর্যালোচনা করে এই ফল পাওয়া
গেছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১১ মার্চ কুমিল্লায় মোট করোনা
শনাক্তের সংখ্যা ছিলো ৯,৩৯০ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ২৮০ জন। এক সপ্তাহের
ব্যবধানে ১৮ মার্চ এই সংখ্যা ছিলো ৯,৪৫৯ জন, নতুন শনাক্ত হয় ৬৯ জন, নতুন
মৃত্যু ১ জন। এর পরের সপ্তাহে ২৪ মার্চ এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯,৫৬০ জন, নতুন
শনাক্ত হয় ১০১ জন, নতুন মৃত্যু ২ জন, পরের সপ্তাহ ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই
সংখ্যা হয় ৯,৮৩৫ জন, নতুন শনাক্ত ২৭৫ জন, নতুন মৃত্যু ৫ জন। ওই ৩ সপ্তাহে
মোট শনাক্ত হয় ৪৪৫ জন, মৃতের সংখ্যা ৮ জন এবং এর বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ১৯৯
জন।
এদিকে উচ্চ সংক্রমনের হারে অবস্থান করা ২৯ টি জেলার মধ্যে অবস্থান
করছে কুমিল্লা জেলাও। সংক্রমনের হার বাড়ার সাথে সাথে রোগী বেড়েছে কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড ইউনিটে। গতকাল পাওয়া তথ্য
অনুসারে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে ১৮টি আইসিইউর একটিও খালি
নেই। সাধারণ ওয়ার্ডেও বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোঃ মহিউদ্দিন জানান, হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ,
ডাক্তার-নার্সের কোন অভাব নেই। কিন্তু রোগী বাড়ছে, আইসিইউ খালি নেই।
ভাইরাসের
সংক্রমণ হার বাড়তে থাকলেও এখনো বাড়েনি সচেতনতা। মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দেখা
গেছে কুমিল্লা শহরের জনবহুল এলাকাগুলোতে। শপিংমল এবং বাজারেও দেখা গেছে
মাস্ক ছাড়াই অহররহ মানুষের চলাচল। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ
বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রেও দেখা গেছে মাস্ক ছাড়াই রোগী ও রোগীর স্বজনদের
চলাফেরা। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের অব্যাহত অভিযান চলাকালীন এলাকায় মাস্ক
ব্যবহারকারীদের দেখা গেলেও, মোবাইল কোর্ট চলে যাওয়ার পর আবারো একই চিত্র
দেখা গেছে মাস্ক ব্যবহারে অনীহাকারীদের।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির
সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান কুমিল্লার কাগজকে জানান,
কুমিল্লায় করোনা প্রতিরোধে আরো কঠোর হচ্ছে প্রশাসন। দ্রুতই এই সংক্রমন কমে
আসবে বলে আশা করছি। সরকারের দেয়া ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে মাঠ
পর্যায়ে কাজ করছে স্বাস্থ্যবিভাগ ও জেলা প্রশাসনের একাধিক দল। মাস্ক
ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট চলমান আছে।
সিভিল সার্জন মীর মোবারক
হোসাইন কুমিল্লার কাগজকে জানান, করোনার উচ্চ সংক্রমনে কুমিল্লার অবস্থান
এটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি। সরকারের ১৮দফা অবশ্যই মানতে হবে। জন সমাগম
রোধে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ইতিমধ্যে জনসচেতনতামূলক মাইকিং শুরু করা
হয়েছে। জেলাপ্রশাসন মোবাইল কোর্ট চালু রেখেছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের
আশেপাশের মানুষ জনের ‘কনটাক্ট ট্রেসিং’ করা হচ্ছে।
এদিকে করোনার
সংক্রমণ রোধে কুমিল্লায় মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত রেখেছে জেলা
প্রশাসন। গতকাল ৩১ মার্চ কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, মনোহরপুর, বাদুরতলা
এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৩টি অভিযানে ৫,৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এছাড়া গরিব অসহায় মানুষের মাঝে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরন করা হয়।