বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো
বাংলাদেশের অর্থনীতিও তিগ্রস্ত হয়েছে। সমাজের একটি বড় অংশ চরম হতাশার মধ্য
দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে সংকট
থাকলেও সরকারি চাকরিতে এখনো প্রায় সাড়ে তিন লাখ পদ ফাঁকা রয়েছে। অন্তত
সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো করোনার মধ্যে চলমান থাকলেও প্রার্থীদের মনে
আশার সঞ্চার হতো।
একদিকে চাকরিেেত্র ঢোকার যোগ্যতাসম্পন্ন তরুণদের জন্য
নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না, অন্যদিকে অনেকের লেখাপড়া শেষ
হয়নি। করোনায় শিাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিনিয়োগে ধীরগতি। কর্মসংস্থান হচ্ছে না।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর পরিকল্পনার ব্যাখ্যায়
বলেছেন, এবারের বাজেট প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রাখা
হয়েছে। ফলে সব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাঁরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন।
অর্থাৎ বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের বিষয়ে বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
আমরা
জানি, বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে। সারা বিশ্বেই সরকারি বিনিয়োগের
সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়তে থাকে। আবার সরকারি বিনিয়োগের
সঙ্গে কর্মসংস্থানের যোগ রয়েছে। কারখানা বাড়লে মানুষের কাজের সুযোগ বাড়ে।
কাজ পেলে আয় বাড়ে, সেই সঙ্গে বাড়ে জীবনযাত্রার মান। বিনিয়োগ, বাজার,
কর্মসংস্থান—এসব একসূত্রে গাঁথা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা কী? এখানে
সরকারি বিনিয়োগ যেভাবে বেড়েছে, সেই হারে কি বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে? বরং
আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশে করোনার ধাক্কায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ব্যাপকভাবে
প্রভাবিত হয়েছে। সেবা খাতেও পড়ছে প্রভাব। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের
কর্মী কমিয়েছে। অন্যদিকে গত এপ্রিল থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগ
বিজ্ঞপ্তিও খুবই কম। আটকে আছে একাধিক সরকারি নিয়োগ পরীাও। পরীা নিতে না
পারায় বিসিএসেও জট লেগে আছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একাধিক পরীা স্থগিত
করেছে সরকারি কর্ম কমিশন। অনেকের মৌখিক পরীাও আটকে আছে। এ ছাড়া
নন-ক্যাডারের কিছু পরীাও স্থগিত করা হয়েছে। তিতাস গ্যাস, সিলেট গ্যাস
ফিল্ড, সেতু বিভাগ, পল্লী বিদ্যুৎ, শিা প্রকৌশল অধিদপ্তর, দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ আরো কয়েকটি সরকারি
দপ্তর তাদের নিয়োগ পরীা স্থগিত করেছে। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিা
অধিদপ্তরের প্রায় চার হাজার লোক নিয়োগের একটি পরীাও আটকে আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীা হয়নি।
ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় বেশ কিছু শিার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে বিষণ্নতায়
ভুগছেন।
নতুন কর্মসংস্থান তৈরি এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মসংস্থান তিগ্রস্ত হলে তার বহুমুখী প্রভাব পড়বে সমাজে। এর ফল শুভ হবে না।