Published : Sunday, 8 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 08.08.2021 12:43:45 AM
তানভীর দিপু ||
গণটিকা
ক্যাম্পেইনের প্রথম দিনে কুমিল্লা জেলায় দেড় লক্ষাধিক মানুষকে টিকার আওতায়
আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। জেলায় অন্তত ২২৭
টি কেন্দ্রে গতকাল এক যোগে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রদান করা হয়। এর
মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ৩১টি কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হয়।
কুমিল্লা সিটিতে ১৫ হাজার ৩১৫ জনকে ও সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৬শ দেয়া হয়
মডার্নার টিকা এবং অন্যান্য উপজেলায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৬০ জনকে সিনোফার্ম এর
টিকা প্রদান করা হয়। এছাড়াও এই ক্যাম্পেইনের বাইরে অন্যান্য নিয়মিত টিকাদান
কেন্দ্রগুলোতেও টিকা প্রদানের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিভাগের মতে, সিটি কর্পোরেশন বাদে উপজেলা পর্যায়ে টিকা প্রদানের
যে টার্গেট ছিলো তা পেরিয়ে আরো অন্তত দেড় হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার সিটি কর্পোরেশনে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা করোনা
প্রতিরোধ কমিটির উপদেষ্টা সদর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ আ ক ম বাহাউদ্দিন
বাহার।
এদিকে গণটিকা ক্যাম্পেইনের প্রথম দিনে সাধারণ মানুষের আগ্রহ
নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন জানান, গণটিকা
কার্যক্রমের প্রথম দিনে বরাদ্দের চেয়ে বেশি মানুষের উপস্থিত হয়েছেন। যেমন
সদর হাসপাতাল কেন্দ্রে মাত্র ৬০০ জনের জন্য টিকা বরাদ্দ থাকলেও প্রায় ৫
হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। আমরা এসব বিষয় গুলো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে
জানাচ্ছি। চাহিদা অনুপাতে কুমিল্লার জন্য টিকার বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে আশা
করছি।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম
জানান, শুধু সিটি কর্পোরেশনেই ৩১টি কেন্দ্রে ১৫ হাজার ৩১৫ জনকে করোনা
ভাইরাস প্রতিরোধক টিকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৭ হাজার
৬৭৪ জন এবং নারী ৭ হাজার ৬৪১ জন। টিকা প্রদানের প্রথম দিনেই যে পরিমান ভিড়
লক্ষ্য করা গেছে তা সামলাতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এছাড়া টিকা নিবন্ধনের
সার্ভার কিছুটা ধীরগতির ছিলো- যে কারনেও বেগ পেতে হয়েছে।
টিকা দানের
প্রথম দিনেই বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে হাজারো মানুষের ভিড়। বিভিন্ন
ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের মাধ্যমে অগ্রাধিকার প্রাপ্যদের টোকেন দেয়া হলেও,
তারা ছাড়াও ভোটার আইডি কার্ড-রেজিষ্ট্রেশনের কপি নিয়ে হাজির হয়েছেন বিপুল
পরিমান মানুষ। এত মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী ও
স্বাস্থ্যকর্মীদের। তবে মানুষের এমন আগ্রহ নিয়ে খুশি জেলা করোনা প্রতিরোধ
কমিটি ও স্বাস্থ্যবিভাগ। ইউনিয়ন পর্যায়ের কেন্দ্রগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশেই
টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু আগে আগে টিকা দেয়ার জন্য প্রভাবশালীদের
হস্তক্ষেপের অভিযোগ এসেছে অনেক। এছাড়া অগ্রাধিকার প্রাপ্যদের না দিয়ে
তরুনদের টিকা দেয়া অভিযোগও এসেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে। স্বাস্থ্যবিভাগের
পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ানোর কথা বলা হলেও
ওই নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি কোথাও। পঁচিশোর্ধদের টিকার আওতায় আনার কথা
থাকলেও পঁিচশ বছরের নিচে অনেকেই এসে ভিড় জমান টিকা নেবার জন্য। তারপরও
মানুষের করোনার টিকা নিয়ে আগ্রহ সন্তোষজনক বলেই জানিয়েছেন করোনা প্রতিরোধ
সংশ্লিষ্টরা। বেশির ভাগ টিকা গ্রহীতারই অভিযোগ, আরো সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার
মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু করা গেলে অনেকেই আরো স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে
টিকা নিতে পারতো। এমন ভিড় মাথায় নিয়ে টিকা নিতে আসলে অনেকেই আবার করোনা
আক্রান্ত হতে পারেন।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এবং সদর উপজেলার বেশ
কয়েকটি টিকা কেন্দ্রে পরিদর্শন করেন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির উপদেষ্টা
সদর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার। এসময় তিনি বলেন,
দেশের জনগনকে টিকার আওয়তায় আনতে প্রধানমন্ত্রী গণটিকা কার্যক্রম পরিচালনা
করছে। বিশে^র বিভিন্ন স্থান থেকে টিকার ব্যবস্থা করছেন। পর্যায়ক্রমে সকলকে
টিকার আওতায় আনা হবে। এ টিকা শুধু তিনদিন নয়। আরো দেওয়া হবে। সব সময় সিভিল
সার্জন অফিস, সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ টিকা কার্যক্রম
চলবে। টিকার নেওয়ার পর সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। এই কোভিড
মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।
কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, টিকাদানের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল
আছে। কিন্তু টিকা গ্রহীতার সংখ্যা এখনো কম। যে কারনে অতিরিক্ত লোকবলের এখনো
প্রয়োজন হয়ে উঠেনি।