দুই
বছরেরও বেশি সময় ধরে সারা বিশ্বে এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে
করোনাভাইরাস। করোনা মহামারিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫১ কোটির বেশি
মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৬২ লাখের বেশি মানুষের। মনে করা হয়, প্রকৃত মৃত্যু এর
চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখের বেশি এবং
মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। মহামারি দমনে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক তোড়জোড়
চলছে। এক ডজনের বেশি টিকা উদ্ভাবিত হয়েছে। অনেক দেশে মানুষকে চার ডোজ করে
টিকা দেওয়া হয়েছে। এর পরও সংক্রমণের ব্যাপকতা রয়েই গেছে।
মহামারি
মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রথম থেকেই ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী টিকার
সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে টিকা সংগ্রহ এবং বেশির ভাগ মানুষকে
টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। রোগ ব্যবস্থাপনায়ও বাংলাদেশ সাফল্যের পরিচয়
দিয়েছে। আর তার স্বীকৃতিও মিলেছে। বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরাম থেকে করোনা
মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়েছে। সর্বশেষ স্বীকৃতিটি
এসেছে জাপানভিত্তিক নিক্কেই এশিয়ার পক্ষ থেকে। গত বৃহস্পতিবার
প্রতিষ্ঠানটির ‘নিক্কেই কভিড-১৯ রিকভারি সূচক’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল প্রকাশ
করা হয়। এতে দেখা যায়, বিশ্বে করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারি মোকাবেলায়
বাংলাদেশ রয়েছে পঞ্চম অবস্থানে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ
আছে সবার ওপরে। ফলাফলে গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১২১টি দেশের কভিড-১৯ মোকাবেলার
পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় সবচেয়ে সফল দেশ কাতার। এর পরই
যথাক্রমে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কম্বোডিয়া ও রুয়ান্ডা। নিক্কেই
এশিয়ার সূচকে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায়
প্রথম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের পরই বিশ্বে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে নেপাল। ৭০
পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান ২৩তম। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থান
৩১তম এবং ৬২.৫ পয়েন্ট নিয়ে ৭০তম অবস্থানে রয়েছে ভারত। নিক্কেই জানিয়েছে,
জরিপের ফলাফল তৈরিতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোনো দেশের
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, করোনা প্রতিরোধী টিকাদান এবং এসংক্রান্ত সামাজিক
তৎপরতার দিকগুলো মূল্যায়ন করা হয়েছে।
করোনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের
সংগ্রাম ও সাফল্য অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। শুধু স্বাস্থ্যগত দিকই নয়, অর্থনৈতিক
দিক থেকেও বাংলাদেশ অত্যন্ত সফলভাবে এখন পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা
করে এসেছে। কিন্তু শঙ্কার দিন এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অনেক দেশেই করোনা
মহামারি নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে। টিকা গ্রহণের হার সবচেয়ে বেশি ইউরোপ-আমেরিকার
এমন অনেক উন্নত দেশেও মহামারি দ্রুত ছড়াচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও বাড়ছে
আক্রান্তের সংখ্যা। বাংলাদেশেও আবার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা
হচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় আমাদের সাফল্য ধরে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি
অনুসরণ ও মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। টিকাদান কর্মসূচি আরো
এগিয়ে নিতে হবে।