তিন
ম্যাচের দুটিতে সত্তরোর্ধ্ব ইনিংস, একশর বেশি স্ট্রাইক রেট। তিন বছর পর
ওয়ানডে ক্রিকেটে ফেরার সিরিজে দারুণ পারফর্ম করেছেন এনামুল হক। তবে সিরিজ
শেষে দেশে ফিরেছেন তিনি ভালো-মন্দের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে। দল যে
অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে গেছে সিরিজ! এনামুলের কণ্ঠেও তাই ব্যক্তিগত প্রাপ্তির
স্বস্তির পাশাপাশি দলীয় আক্ষেপের হাহাকার।
৯ বছর পর জিম্বাবুয়ের
বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হেরে শুক্রবার বিকেলে দেশে ফিরেছে দল। অধিনায়ক তামিম
ইকবাল যদিও রয়ে গেছেন দুবাইয়ে। ছুটি কাটাতে আরও দিন দশেক তিনি থাকবেন
সেখানেই।
এনামুলের জন্য এই ফেরা একটু অন্যরকম। কিছুদিন আগে ওয়েস্ট
ইন্ডিজ সফর থেকে ফিরেছিলেন তিনি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে ব্যর্থ
হয়ে। সেবার ওয়ানডে সিরিজে খেলার সুযোগই পাননি। অথচ এই সংস্করণে ঘরোয়া
ক্রিকেটে রানের রেকর্ড গড়েই তিনি জাতীয় দলে ফেরেন।
কাঙ্ক্ষিত
সংস্করণে সুযোগটি আসে তার এই জিম্বাবুয়ে সিরিজে। তিনি তা কাজে লাগান বেশ
ভালোভাবেই। তিন বছর পর প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে করেন ৬২ বলে ৭৩। দ্বিতীয়
ম্যাচে ভালো শুরুর পর রান আউট হয়ে যান ২৫ বলে ২০ রানে। শেষ ম্যাচে আবার ৭১
বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে গড়ে দেন দলের জয়ের ভিত।
সব মিলিয়ে তিন
ম্যাচে তার রান ১৬৯। সিরিজে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
তার ব্যাটিং নিয়ে আগে একটা বড় অভিযোগ ছিল স্ট্রাইক রেটের ক্ষেত্রে। এই
সিরিজে তার স্ট্রাইক রেট ১০৬.৯৬।
কিন্তু দলের এমন বিব্রতকর হারের
সিরিজে ব্যক্তিগত সাফল্য উদযাপনের কী আর উপায় থাকে! দেশে ফিরে বিমানবন্দরে
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এনামুল শোনালেন তার দ্বৈত অনুভূতির দোলাচল।
“অনেক
দিন পর ওয়ানডে দলে এসে খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম আসলে। অনেক পরিশ্রম করেছি এর
পেছনে। অনেক সময় চলে গেছে। তিন বছর পর যখন এসেছি, চেষ্টা করেছি সুযোগ কাজে
লাগানোর জন্য, প্রক্রিয়া ধরে রাখার জন্য। অনেক দিন পর যেহেতু এসেছি, চেষ্টা
করেছি শতভাগ দেওয়ার। ভবিষ্যতেও চেষ্টা করব।”
“তবে দলের জয়ে অবদান
রাখতে পারলে অনেক বেশি ভালো লাগত। তবে জিম্বাবুয়ের মাটিতে জেতা সহজ ছিল না।
ওরা অনেক ভালো খেলেছে, আমাদেরও কিছু ভুল ছিল। দুটো মিলিয়েই আমরা হেরে
গেছি।”
এই সিরিজের আগে ৯ বছর ধরে টানা ১৯ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ে
পারেনি বাংলাদেশকে হারাতে। এবার প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ৩০৩ রান টপকে জিতে
যায় তারা। ২৫৭ রানের বেশি করে আগে কখনোই জিম্বাবুয়ের কাছে হারেনি
বাংলাদেশ।
এনামুল বললেন, ওই হার বিস্মিত করেছিল বাংলাদেশ দলকেও।
“প্রথম
ম্যাচ হারার পর আমরা অবাক হয়েছি। যতটা প্রত্যাশিত ছিল, সেই অনুযায়ী
পারফর্ম করতে পারিনি। অবশ্যই আমাদের জন্য তা ছিল খারাপ লাগার ব্যাপার।
দ্বিতীয় ম্যাচে যখন দেখলাম ওরা এগিয়ে যাচ্ছে, তখন নার্ভাস ছিলাম। আমার মনে
হয় এই একটা সিরিজ, যেটায় আমরা শতভাগ দিয়ে খেলতে পারিনি।”
তবে এক সিরিজ হারেই ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ পথচ্যুত হয়েছে বলে মনে করেন না এনামুল।
“ওয়ানডে
ক্রিকেটে কিন্তু আমরা দুই বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলছি। এটা
দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে অনেক ভালো এবং আমরা
প্রতিটি ক্রিকেটার বিশ্বাস করি, প্রক্রিয়া ঠিক থাকলে ও শতভাগ দিতে পারলে যে
কোনো দলের সঙ্গে যে কোনো সিরিজ জয় আমাদের জন্য সম্ভব।”