শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
সামান্য থেকে অসামান্য
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯, ১২:০০ এএম |

তার উত্থান রূপকথার মতো। গুজরাটের রেলস্টেশনে যে বালকের শৈশব কেটেছে চা বিক্রি করে, সে বালকই একদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও ১২০ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী হবেন- কে জানত! এ তো রূপকথাকেও হার মানিয়েছে। দেশব্যাপী রীতিমতো সুনামি বইয়ে দিয়ে ভারতের মসনদে বসছেন তিনি; টানা চার দফা ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি।
৬৩তম জন্মদিনের ঠিক চার দিন আগে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং। এর পর তার নেতৃত্বের প্রবল প্রতাপে বিজেপি আর তার সব নেতা-নেত্রীই আড়ালে পড়ে যান। ধীরে ধীরে এক সামান্য চা বিক্রেতা থেকে অসামান্য হয়ে ওঠেন তিনি।
শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গুজরাটের মেহসানায় দরিদ্র কলু পরিবারে মোদির জন্ম। কলু বা তেলিরা কৌলীন্যহীন অতি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী। ছয় সন্তানের মধ্যে মোদি তৃতীয়। বাবা দামোদরদাস মূলচান্দ মোদি। মা হীরাবেন। বড়নগর রেলস্টেশনে বাবার চায়ের দোকান ছিল। শৈশবের দিনগুলো তাই চায়ের কাপ নিয়ে ছোটাছুটি করেই কেটে যায়। কৈশোরে চালিয়েছেন চায়ের দোকান এক বাসস্টেশনে।
পড়াশোনা বড়নগরেরই এক স্কুলে। ছাত্র হিসেবে তেমন মেধাবী না হলেও তার্কিক হিসেবে বেশ তীক্ষষ্ট ছিলেন শৈশব থেকেই। স্কুলের সময়টাতে নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ফলে রাজনীতিতেও আগ্রহ জন্মে তার।
১৮ বছর বয়সে মা-বাবার ইচ্ছায় মাত্র ১৩ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে মোদির পরিণয়। কিশোরীটির নাম যশোদাবেন চিমনলাল। অল্পদিনই একসঙ্গে থাকেন তারা। সম্পর্ক না ভাঙলেও স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকতে শুরু করেন তিনি। ৪৬ বছর ধরে একা মোদি। নির্বাচনের হলফনামায় তিনি স্ত্রীর নাম কখনও উল্লেখ করতেন না। তাই তাকে চিরকুমার হিসেবেই জানত সবাই। তবে গতবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থিতার হলফনামায় তিনি বিবাহিত এবং স্ত্রীর নাম যশোদাবেন বলে উল্লেখ করেন। বিষয়টি দেশজুড়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করে।
যখন-তখন বাড়ি থেকে পালানোর স্বভাব ছিল তার। মাসখানেকের জন্য লাপাত্তা হয়ে যেতেন। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন সেই আট বছর বয়সেই। তা ছাড়া সন্ন্যাসীদের জীবনও তাকে তুমুলভাবে টানত। সেই ১৯৬৭ সালে টানা দুই বছরের ভ্রমণেও বেরিয়ে পড়েন তিনি। সম্ভবত হিমালয়ে।
সন্ন্যাসজীবনে তার শুধু দুই জোড়া কাপড় ছিল। তার এ সময়টা সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। ফিরে এসে ফের চা বিক্রি করতে শুরু করেন। একসময় গুজরাট স্ট্যাট রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের স্টাফ ক্যান্টিনে কাজ নেন। তবে ১৯৭০ সালে আরএসএসের সার্বক্ষণিক প্রচারক হওয়ার পর ওই কাজ ছেড়ে দেন।
নাগপুরে তিনি সংঘ পরিবারে আনুষ্ঠানিক সদস্য হওয়ার জন্য আরএসএসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে গুজরাটের সংঘ পরিবারের ছাত্র শাখার অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের দায়িত্ব পান। এসব ব্যস্ততার মধ্যেও পড়াশোনা ছাড়েননি তিনি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। স্নাতকোত্তর করার সময়েও তিনি আরএসএসের সদস্য ছিলেন।
১৯৭১-এ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর আনুষ্ঠানিকভাবে আরএসএসে যোগ দেন। আরএসএসের দিল্লি অফিসে পাঠানো হয়েছিল মোদিকে। তখনকার দিনগুলোয় ভোর ৪টায় উঠে পড়তেন। অফিস সাফ-সুতরো করে আরএসএসের বড় বড় নেতার জন্য চা-জলখাবার বানিয়ে দেওয়াই ছিল তার কাজ। ১৯৭৫ সালে তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। জরুরি অবস্থার সময় আরএসএসের হয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার পর তাকে বিজেপিতে টেনে নেন বিজেপির পিতৃপুরুষ লালকৃষ্ণ আদভানি। ১৯৮৮ সালে গুজরাট প্রদেশে বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। এটা মূলধারার রাজনীতিতে মোদির প্রথম বড় ধরনের অভিষেক।
১৯৯০ সালে সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা করেন লালকৃষ্ণ আদভানি। সেই কর্মসূচিকে সফল করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মোদি। তবে ১৯৯১ সালে মুরলিমনোহর যোশির কন্যাকুমারী-শ্রীনগর একতা যাত্রার সফল আয়োজন করার ভেতর দিয়ে সবার নজরে আসেন মোদি। নভেম্বর ১৯৯৫ সালে মোদি বিজেপির জাতীয় সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে হন পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক।
একসময় গুজরাটে বিজেপির সিনিয়র নেতাদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠায় কিছুটা পেছনে পড়ে যান তিনি। কেশুভাই প্যাটেল মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও 'সুপার সিএম' হয়ে ওঠেন মোদি। এর অঘোষিত শাস্তি হিসেবে গুজরাট থেকে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চ-ীগড়ে। ২০০১ সালে কেশুভাই প্যাটেলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে। কেশুভাইয়ের ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে ফের গুজরাটে পৌঁছে যান মোদি। বিজেপির জাতীয় নেতৃত্ব প্যাটেলের বিকল্প হিসেবে মোদিকেই নির্বাচন করে। এলকে আদভানির বিরোধিতা সত্ত্বেও ৭ অক্টোবর ২০০১ সালে মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন।
















সর্বশেষ সংবাদ
লেবাননে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু
বছর শেষে সৃজিতের চমক
২০২০ সাল বদলে দেবে যে ৬ স্মার্টফোন
যেভাবে রাঁধবেন নারিকেল দুধে কই মাছ
অবৈধদের ফেরত না পাঠানোর লিখিত আশ্বাস চায় বাংলাদেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
পিইসি-জেএসসি জেডিসির ফল প্রকাশ আজ
কুমিল্লার দুই ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী
অবৈধদের ফেরত না পাঠানোর লিখিত আশ্বাস চায় বাংলাদেশ
কুমিল্লায় ইউপি নির্বাচনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৫
লেবাননে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft