এবিএম আতিকুর রহমান বাশার||
কুমিল্লার
দেবীদ্বারে এক যুবক প্রকাশ্য দিবালোকে ১ শিশু ও ২ নারী সহ ৩ জনকে দা’
কুপিয়ে হত্যা করেছে এবং অন্তত: আরো ৭ জনকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে।
আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশংকাজনক। ঘাতক সামনে যাকে পায় তাকেই কুপিয়ে
হত্যার চেষ্টা করায়, মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে মসজিদের মাইক যোগে স্থানীয়
জনতাকে ঘটনার বিবরনে আহবান জানালে, জনতা কর্তৃক ঘেড়াউ অবস্থায় গনপিটুনিতে
ঘাতকও নিহত হন। ঘটনাটি ঘটে বুধবার সকাল ১০ টায় উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের
রাধানগর গ্রামের চেরাগআলীর বাড়িতে।
গণপিটুনিতে নিহত ঘাতক মোখলেছুর
রহমান(৩৫) উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মুর্তুজ আলীর পুত্র,
সে পেশায় রিক্সা চালক। তার কোপের আঘাতে অন্যান্য নিহতরা হলেন, দেবীদ্বার
উপজেলার রাধানগর গ্রামের মৃত: শাহ আলমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আনু (৪৫),
পুত্র আবু হানিফ(১০), নুরুল ইসলাম’র স্ত্রী নাজমা বেগম(৪০)। কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চান্দিনা ও দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ভর্তি মারাত্মক আহত রাধানগর গ্রামের নুরুল ইসলাম(৫৫) ও তার মা’ মাজেদা
বেগম(৬৫), বজলু মিয়ার স্ত্রী জাহানারা বেগম(৪৫), আব্দুল লতিফ(৪৫),
ফাহিমা(১০) এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৪ জন রয়েছেন। তবে সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন
নাজমা বেগম (৪০) ও মাজেদা বেগম(৫৫)।সংবাদ পেয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ
সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(পদোন্নতি পাওয়া পুলিশ সুপার)
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, ডিবি ও পিবিআই কর্মকর্তা, দেবীদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া
সার্কেল এ,এস,পি, দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জহিরুল আনোয়ার সহ
পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা ছাড়াও দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব
মোঃ জয়নুল আবেদীন, জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ শাহজাহান সরকার, সুলতানপুর ইউনিয়ন
পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সফিকুল ইসলাম সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাতক মোখলেছুর রহমান’র স্ত্রী ও তার ভাই হারুন’র স্ত্রীকে থানায় নিয়ে আসেন।
সরেজমিনে
যেয়ে ওই ঘটনায় কোন প্রত্যক্ষদর্শি পাওয়া যায়নি। ঘাতক মোখলেছুর রহমান’র
স্ত্রী রাবেয়া বেগম(৩০) জানান, তার স্বামী প্রতিদিন সকাল ৭/৮টা রিক্সা নিয়ে
বের হলেও আজ ভোরে বের হওয়ার সময় তাকে এতো সকালে যাওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে
মোখলেছ বলে বৃহস্পতিবারে কিস্তি আছে, কিস্তির টাকা যোগার করতে হবে। একথা
বলেই রিক্সা না নিয়ে একটি সিএনজিতে উঠে মোহনপুর বাজারে চলে যায়। বেলা ১০টার
সময় ঘরে ফিরে আসে, এসয়য় তার হাতে একটি ব্যাগ ছিল ব্যাগের ভেতরে একটি দা
দেখতে পায়। কিছুক্ষন পর দা’টা নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। এসময় তার স্বামীর
সাথে কথা কাটাকাটি হয়। ঘর থেকে বেড়িয়ে সামনে দেখা পাশ্ববর্তী ঘরের মৃত:
খোরশেদ আলমের পুত্র তালতলা আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ
শ্রেণীর ছাত্র আবু হানিফ(১০)কে কুপিয়ে হত্যা করে এসময় তার মা মনোয়ারা
বেগম(৪৫) পুত্রক বাঁচাতে এলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে, আমি (ঘাতকের স্ত্রী
রাবেয়া বেগম) তাকে নিবৃত করতে এগিয়ে গেলে আমাকেও ধাওয়া করে, আমি দৌড়ে
পালিয়ে যাই।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম জানান, মনোয়ারা এবং
হানিফকে কুপিয়ে হত্যার পর রাস্তায় যাকে পায় তাকেই কুপাতে থাকে। তাকে কেউ
নিবৃত করতে পারছিলনা। এক পর্যায়ে ছেচড়াপুকুরিয়া গ্রামের বজলুর রহমান’র
স্ত্রী জাহানারা বেগম(৪০)কে কুপিয়ে তার নাড়িভূড়ি বের করে ফেলে। এসময় আরো
কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করে। স্থানীয় একাধিক মাইকে এঘটনার বর্ননা দিয়ে
গ্রামবাসীকে তাকে আটকের আহবান জানালে গ্রামবাসীরা তাকে ঘেড়াউ করে ফেলে।
লোকজনের উপস্থিতি দেখে তার হাতে থাকা দা’টি পানিতে ফেলে দেয়। পরে সে
গনপিটুনিতে নিহত হন। তিনি আরো জানান, ঘটনাটি রহস্যাবৃত প্রায় ১০/১২ বছর
পূর্বে তালতলা গ্রাম থেকে রাধানগর গ্রামে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
একজন সাধারন রিক্সা চালক পাকা বিল্ডিং-এ বসবাস করার পেছনে রহস্য আছে।
রিক্সা চালানোর পেছনে মাদক ব্যবসায় জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তা
ছাড়া গত রাতে তার ঘরে নারী-পুরুষ সহ কয়েকজন লোকও এসেছিল। ওরা কারা কি জন্যে
এসেছিল তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিশেষ করে তার স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীকে
জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এঘটনার রহস্য বেড়িয়ে আসবে। সম্প্রতি গুজব খ্যাত
পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে শিশুদের মাথা কাটার বিষয় অর্থাৎ আতঙ্ক ছড়ানোর
পেছনে কোন রহস্য আছে কিনা তাও খোঁজ নিতে হবে। গনপিটুনিতে ঘাতক নিহত হওয়ার
কারনে গ্রামবাসীও পালিয়ে যায়।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া রাধানগর গ্রামের
এরশাদ মিয়ার মেয়ে রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী জুলেখা
বেগম জানান, রস্তার উপর একটি শিশু ও একজন লোককে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করার
দৃশ্য দেখে আমি চিৎকার করে উঠি, আমাকে দেখে সে আমাকেও ধাওয়া করে। এসময়
পাশ্ববর্তী একটি ঘরের খাটের নিচে শ্বাস বন্ধ করে লোকিয়ে প্রাণ বাঁচাই।
দেবীদ্বার
থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জহিরুল আরোয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,
ঘাতক সহ ৪জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা’টিও উদ্ধার
হয়েছে। এ ব্যপারে ২টি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে হত্যাকান্ডের মূল
কারন জানতে আরো তদন্ত প্রয়োজন।