‘ঘুমন্ত
শিশুটিকে বাবাই কোলে করে বাইরে নিয়ে যায়। বাবার কোল নিরাপদ, তাই তখনও
শিশুটির ঘুম ভাঙ্গেনি। এরপরই শিশুটিকে জবাই করে হত্যা করা হয়...।’
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বিভৎস হত্যাকা-ের শিকার শিশুটির বাবাকেই খুনি হিসেবে
শনাক্ত করেছে পুলিশ। হত্যাকা-ের একদিন পর মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, গ্রামের বিরোধে
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই পাঁচ বছর বয়সী শিশুটিকে হত্যা করা হয়। শিশুটির মায়ের
করা মামলায় কাউকে আসামি করা না হলেও প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পেয়ে শিশুটির
বাবা ও চাচাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
রোববার
শেষ রাতে দিরাইয়ের রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামে কৃষক আব্দুল বাসিতের
ছেলে তুহিন মিয়ার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায় বাড়ির কাছের একটি গাছে। শিশুটির
পেটে দুটি ছুরি গাঁথা ছিল; কান ও লিঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে দাবি করেছিল, এই শিশুটি হত্যাকা-ে পরিবারের কেউ জড়িত আছে।
সোমবার
রাতে তুহিনের মা মনিরা বেগম অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজনকে আসামি করে মামলা
করলেও ওই মামলায় তুহিনের বাবা আব্দুল বাসির, চাচা জমশেদ আলী, মোছাব্বির
আলী, নাছির উদ্দিন এবং চাচাত ভাই শাহরিয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
মঙ্গলবার
সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এসে অতিরিক্ত এসপি মিজান বলেন, তুহিনের
আত্মীয়-স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকা-ে তার বাবার সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে।
তিনি
বলেন, “সোমবার রাতে বাবা আব্দুল বাসিরের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল শিশু তুহিন।
মধ্য রাতে তাকে কোলে করে ঘরের বাইরে নিয়ে যান তিনি। এসময় কোলে ঘুমিয়েই ছিল
তুহিন। কোলের মধ্যেই তাকে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে বাবা, চাচা ও
এক চাচাত ভাই।
“জবাই করার পর একে একে তার লিঙ্গ, দুই কান কাটা হয়। পরে
তার পেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। হত্যা শেষে বাড়ির পাশের মসজিদের পাশে কদম গাছে
তারা লাশ দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে।”
কী কারণে তুহিনকে হত্যা করা হয়- জানতে
চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মূলত গ্রামের আধিপত্য বিস্তার ও
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই তুহিন কে হত্যা করা হয়েছে। নিহত শিশুর পিতার বিরুদ্ধে
হত্যা মামলাসহ অনেক মামলা ছিল। এলাকায় পক্ষ, বিপক্ষ ছিল, তাদের ফাঁসাতেই এ
হত্যাকা- হতে পারে। ”
তুহিনের বাবা বাসির, চাচা জমশেদ, মোছাব্বিরকে
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। চাচা নাসির ও চাচাত
ভাই শাহরিয়ার মঙ্গলবারই বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে
বলে জানায় পুলিশ।
মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন জানিয়ে অতিরিক্ত এসপি
মিজান বলেন, “পুলিশের আইজিপি নিজেই সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেছেন। আমরা
মামলার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করেছি, কারা মারছে কেন মারছে, কিভাবে মারছে।
বিষয়টা আমরা জেনেছি।
“আরও তদন্তের দরকার আছে, মূল পরিকল্পনায় অন্য কেউ আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।”
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের চাচি ও চাচাত বোনকে আটক করা হলেও হত্যাকা-ে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
“আমরা দ্রুতই এ মামলার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করব,” বলেন পুলিশ কর্মকর্তা মিজান।