মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরিসীম ভূমিকা রাখে মেজর গণির গড়া ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট
মৃত্যুদিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা-
দিদারুল আলম, ঢাকা
|
বঙ্গশার্দুল মেজর আবদুল গণি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাঙালি জাতির মর্যাদা ও সম্মানের ইতিহাসের সূচনা করেন। তাঁর গড়া ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরিসীম ভূমিকা রাখে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পথ ধরেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম হয়। মেজর গনির ৬৩তম মৃত্যু দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর রাওয়া হেলমেট মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন দেশের প্রথম সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ বীর উত্তম, সাবেক সেনা প্রধান লে. জেনারেল নুরুদ্দীন খান, সাবেক সেনা প্রধান লে. জেনারেল মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান বীর বিক্রম, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান, মেজর জেনারেল জামিল ডি আনাম বীরপ্রতিক, সেনা কর্মকর্তা সায়েদুল আনাম, মেজর গনির ভাগ্নে সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, দৈনিক কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক ও গবেষক আবুল কাশেম হৃদয়, মেজর গণি পরিষদের সভাপতি মোঃ হুমায়ূন কবির, লে.কর্নেল লুৎফুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কল্যাণ সংস্থা- রাওয়া’র চেয়ারম্যান মেজর খন্দকার নুরুল আফসার। মেজর আবদুল গণির কর্মময় জীবন সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর্নেল মো.আবদুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাওয়া’র সেক্রেটারি জেনারেল লে. ক. শামসুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মেজর গণি পরিষদের মহাসচিব আনোয়ারুল ইসলাম ভূইয়া। দোয়া পরিচালনা করেন ব্রাহ্মণপাড়ার নাগাইশ দরবার শরীফের পীর মাওলানা মোশতাক ফয়েজী। আলোচকরা বলেন, বাঙালির সামরিক ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। ১৯১৫ সালে ‘দি বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোর’ এবং পরে একটি ব্যাটালিয়ন বা বাঙালি পল্টন গঠনের মধ্য দিয়ে সে ঐতিহ্যের বীজ বপিত হয়। সময়টা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঙালি মুসলমানদের পাইওনিয়ার রেজিমেন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সামরিক জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়। যে দুটি পাইওনিয়ার রেজিমেন্ট সে সময় গঠন করা হয়, তার একটি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেন মেজর এম এ গণি। যিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জনক হিসেবে সুখ্যাত। বক্তারা বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধে অংশ নেয়া মেজর গণির দূরদর্শী চিন্তার ফসল দেশবিভাগের পর পাইওনিয়ার কোম্পানি থেকে বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা। সারা দেশ ঘুরে তিনি সৈন্য বিভাগের যোগ্য যুবকদের সংগ্রহ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়নের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মহান আত্মত্যাগ ও অসাধারণ অবদানের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে বাংলাদেশের গৌরব বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশের সশস্ত্র ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে যুক্তকমান্ড যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। দেশব্যাপী মরণপণ যুদ্ধের পর বাংলাদেশ লাভ করে মহান স্বাধীনতা। বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনাতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৫টি ইউনিট বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পুরো বাংলাদেশকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য বিদ্রোহী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। ইস্ট বেঙ্গলের ৮টি ব্যাটালিয়নকে ১১টিতে উন্নীত করে ‘এস’, ‘কে’ ও ‘জেড’ ফোর্সের অধীন করা হয়। |