বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
বিজয়ের ৪৮ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি কাশিমপুর গণকবর
প্রকাশ: রোববার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ১৫.১২.২০১৯ ২:১৬ এএম |

বিজয়ের ৪৮ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি কাশিমপুর গণকবররণবীর ঘোষ কিংকর: মহান বিজয়ের ৪৮ বছরেও সংরক্ষণ করা হয়নি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের গণকবরটি। স্থানটিতে নেই কোন স্মৃতি চিহ্ন। খাস ভূমিতে থাকা ওই গণকবরটি এখন স্থানীয়দের গৃহস্থলির কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
গণকবরটি চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের কাশিমপুর পেইরাপাড় এলাকায় পুকুরের পাড়ে মাধাইয়া-কাশিমপুর সড়কের পাশে সরকারি খাস ভূমিতে পরে আছে। গণকবরটির দুই পাশে রয়েছে স্থানীয়দের বসতি।
সরেজমিনে কাশিমপুর গণকবরের খোঁজে ওই এলাকায় গেলে কথা হয় সেই দিন পাকবাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে হত্যার শিকার হওয়ায় শহীদ পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর সাথে।
বিজয়ের ৪৮ বছরেও ৮ শহীদের গণকবরটি সরকার সংরক্ষণ না করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী  বলেন- আমরা টাকা পয়সা চাই না। মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী এ গ্রামে যে বর্বরতা চালিয়েছে, নৃশংস ভাবে এলাকার ৮জন নিরীহ মানুষকে যেভাবে হত্যা করেছিল এবং তাদেরকে যে স্থানটিতে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল সেই স্থানটি সংরক্ষণ করা হউক সেই টুকু চাই। যাতে এ  গ্রামের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গণকবরের স্মৃতি চিহ্নটি দেখে ৮ শহীদের কথা স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ।
সেই দিনের কথা স্মৃতিচারণ করে শহীদ অমূল্য দাসের ছেলে স্বপন দাস (৬২) জানান, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কাশিমপুর গ্রামটি ছিল হিন্দু অর্ধ্যুষিত এলাকা। সেই দিন ছিল আষাঢ় মাসের শনিবার গভীর রাত। আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। আমাদের বাড়ি ঘেড়াও করে আমার বাবা অমূল্য দাস ও আমাকে ধরে নিয়ে যায় পাশের বাড়িতে। আমি ছোট বিধায় আমাকে রাখা হয়েছিল মহিলাদের সাথে এক ঘরে আর আমার বাবাকে বেধে রাখা হয়েছিল বাহিরে। পরবর্তীতে একে একে করে গুলি করে হত্যা করে ৮জনকে।
আর যাদেরকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল তারা হলেন- জগবন্ধু মাষ্টার (৬০) ও তার ছেলে সুধীর সরকার (৪০), চিত্ত রঞ্জন সরকার (৪৫), অমূল্য চন্দ্র দাস (৫০), চেতন চন্দ্র সরকার (৩৫), যুগেন্দ্র চন্দ্র সরকার (৪০), শিশু চন্দ্র সরকার (৩৮) ও শান্তি রঞ্জন শীল (৩৫)।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রমিজ উদ্দিন (৬৫) ভয়াল সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সেই রাতে আমাদের মেহমান থাকায় ঘরে জায়গা ছিল না। নৌকায় দুই বস্তা চাউল ছিল। আমি আর আমার বড় ভাই বাচ্চু মিয়া আমরা নৌকায় ঘুমিয়েছিলা। শনিবার গভীর রাতে চিল্লা-চিল্লির (আর্ত্মনাদ) আওয়াজ শুনে আমরা নৌকা থেকে দৌড়ে আসি।
এসে দেখি জোরপুকুরিয়া গ্রামের রাজাকার আব্দুর রহমান পাকিস্তানী মেলিটারী নিয়ে হিন্দু বাড়ির সকলকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমারে দেখেও ধরে ফেলে। হিন্দু পাড়ার ৯জন আর মুসলিম ৬জনকে ধরে দাস বাড়িতে নিয়ে  সকলকে বেঁধে বুট জুতা দিয়ে পাড়ায়। অনুমান এক ঘন্টা সকলকে মার-ধর করে কলমা জিজ্ঞাসা করে ও পরনের কাপড় খুলে দেখে। ৯জন হিন্দুর মধ্যে ৮জনকে গুলি করে মারে আর বলাই দত্ত নামে একজনকে মুসলিম ভেবে আর মারেনি।
গণকবর সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘রবিবার সারা দিন লাশগুলো বিচ্ছিন্ন ভাবে পরে ছিল। কেউ ধরার সাহসও পায়নি। বিকেলে গ্রামের দুধ মিয়া, চাঁন মিয়া, মোহাম্মদ আলী সহ আমরা ৫/৬জন মিলে পুকুর পাড়ে ২টি গর্ত করে মাটি চাপা দেই। তারা হিন্দু আর আমরা মুসলিম। সেদিন যদি আমাকেও মেরে ফেলতো তাহলে আমার লাশটিও তো তাদের সাথে এই জায়গায় থাকতো।
বিজয়ের ৪৮ বছরেও গণকবরটি সংরক্ষণ না হওয়ায় রমিজ উদ্দিন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হের পরে দেশ স্বাধীন হইল, মানু বাড়লো এক এক কইরা ৪৮ বছর কাইটা গেলো কেউ আর তারার খবর লইল না। আফনেরারে (সাংবাদকর্মীরা) দেখতাছি কয়েক বছর ধইরা আইতাছেন। কই, কিছুই করতেন পারছেন না। আফনারার কাছে আমরা ট্যাহাও চাইনা, পইসাও চাই না, মানুষটির স্মৃতিডা যাতে থাহে হেইডা শুধু চাই’।
এদিকে বিজয়ের মাস আসলেই গণকবরটি সংরক্ষণে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা গত এক যুগেরও বেশি সময় যাবৎ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করলেও শুধু আশার বানী দিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসন। একই ভাবে গত ১২ ডিসেম্বর চান্দিনা মুক্ত দিবসে কড়া নাড়া হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে। সংবাদকর্মীদের মুখে বিষয়টি জানার পর চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ¯েœহাশীষ দাশ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গণকবর স্থানটি পরিদর্শণ করেন।
তাৎক্ষনিক ভাবে তিনি মাধাইয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে ১৬ ডিসেম্বরের আগেই স্থানটি সংরক্ষণ করে শহীদদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি ফলক স্থাপনের নির্দেশ দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী,  উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মালেক, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি বিষয়ক গবেষক তাহমিদুর রহমান দিদার প্রমুখ















সর্বশেষ সংবাদ
লেবাননে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু
বছর শেষে সৃজিতের চমক
২০২০ সাল বদলে দেবে যে ৬ স্মার্টফোন
যেভাবে রাঁধবেন নারিকেল দুধে কই মাছ
অবৈধদের ফেরত না পাঠানোর লিখিত আশ্বাস চায় বাংলাদেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
পিইসি-জেএসসি জেডিসির ফল প্রকাশ আজ
কুমিল্লার দুই ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী
অবৈধদের ফেরত না পাঠানোর লিখিত আশ্বাস চায় বাংলাদেশ
কুমিল্লায় ইউপি নির্বাচনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৫
লেবাননে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft