
মো: রাসেল ভূইয়া। কুস্তিগির রাসেল নামেই সবাই তাঁকে চিনেন। ত্রিশ বছরের রাসেল করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর নিজ উদ্যোগে কুমিল্লার তিতাসের মৌটুসি গ্রামে নিজের বাড়ির আশেপাশের মানুষদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করেন। সে সময় এলাকায় বাইরে থেকে কে কে এলো তাও তদারকি করেন তিনি। তাঁদের ভূইয়া বাড়িতেই তাঁর চাচাতো ভাই খোকন ভূইয়া ঢাকা থেকে সাইকেলে করে এসেছে এ খবর পেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন সে বাড়িতে হাজির হন। খোকন ভূইয়ার তথ্য নেওয়ার সময় কুস্তিগির রাসেল ভূইয়া একটি কাশি দেন। এতে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকদের সন্দেহ হয়। তারপর দিনই ৭ এপ্রিল তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১১ এপ্রিল জানা গেলো কুস্তিগির রাসেল করোনা পজেটিভ। কিন্তু কুস্তি ও জেলা উপজেলা পর্যায়ে কাবাডি খেলা রাসেল সাহস হারান নি। পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর শুরু হয় তার আরেক লড়াই। করোনা বিরুদ্ধে লড়াই। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাঁকে কোন ঔষধ দেন নি। তারা বলেছেন টক ফল ও পানি বেশি খেতে। অপর এক চিকিৎসকের সাথে কথা বলে এন্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ঔষধ আনিয়ে নেন রাসেল। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকদের সাথে এ নিয়ে কথা বলেন। তারা শুধু এন্টিবায়োটিক খেতে বলে রাসেলকে। ১৫ এপ্রিল তাঁর দ্বিতীয় দফা নমুনা নেওয়া হয়। সে পরীক্ষায় তার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। গত রবিবার তৃতীয় দফা তার নমুনা নেওয়া হয়। সে নমুনা পরীক্ষার ফল এখনো আসে নি। এ পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেই তিনি করোনা মুক্ত হবেন। রাসেলের শরীরে কোন লক্ষণ উপসর্গ ছিল না-এখনো নেই। তিনি স্বাভাবিক সুস্থ আছেন।
আজকে যখন আমার ফেসবুকে রাসেলের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট আসে, তা দেখেই আমি বুঝে নেই-সে তিতাসের মৌটুসি গ্রামের রাসেল কুস্তিগির। করোনা আক্রান্তদের খবর রাখতে রাখতে কখন যে তাদেরও আপন হয়ে গেছি বুঝতেও পারিনি।
তারপর কথা হয় তাঁর সাথে। রাসেল জানান- কুসুম গরম পানি গরগরা করেন নিয়মিত, গরম পানিতে আদা, লেবুর রস, রসুন তেলের বাপ নিচ্ছেন এবং আলাদা রুমে অবস্থান করছেন। শুধু এভাবেই করোনার বিরুদ্ধে সাহসের সাথে লড়ছেন রাসেল। যদিও তার বাবা ও স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারাও আলাদাভাবে অবস্থান করছেন। চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতো কিছুর পরেও মনোবল হারান নি রাসেল। করোনার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হয়ে লড়াই করেছেন দক্ষ কুস্তিগিরের মতোই। রাসেল আপনাকে অভিনন্দন। সংগ্রামী সালাম। আপনার মতো সাহসী মানুষরা আছেন বলেই আমরা স্বপ্ন দেখি সুন্দর স্বপ্নময় আগামীর বাংলাদেশের।