Published : Wednesday, 17 June, 2020 at 10:59 PM, Update: 24.06.2020 7:26:39 PM
জহির শান্ত: নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণে টালমাটাল হয়ে পড়েছে কুমিল্লা। জেলায় প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, ঘটছে প্রাণহানি। এরই মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকাসহ জেলার ১৭টি উপজেলায় কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২১৭ জনে। সেই সাথে সংক্রমণ উপসর্গ নিয়ে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা মৃত্যুও ছাড়িয়ে গেছে শতাধিক। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৬৩ জন।
এ ছাড়া প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে একাধিক মৃত্যুর তথ্য মিলছে কুমিল্লায়। সবশেষ গতকাল বুধবার (১৭ জুন) কুমিল্লায় ৯১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ দিন জেলায় করোনার সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে মারা যান ৭ জন। তার আগের দিন মঙ্গলবার কুমিল্লায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১৭ জন। সংক্রমণ-উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মূলত রমজানের ঈদের পর থেকেই কুমিল্লায় লাফিয়ে বাড়ছে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে ঘটছে প্রাণহানিও। জেলা সিভিল কার্যালয়ের কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বুধবার পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২২১৭ জন। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৩ জন। অবশ্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রদত্ত মৃত্যুর এ তালিকা ছাড়াও সংক্রমণ-উপসর্গ নিয়ে আরো অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে এ জেলায়। যাদের অনেকে কুমিল্লায় আক্রান্ত হয়ে জেলার বাইরে মারা গেছেন; আবার অনেকে জেলার বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লায় এসে মারা গেছে। মারা যাওয়া এসব ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করে না জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

এ ছাড়াও প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে কুমিল্লায়। গেলো ৫ দিনে কুমিল্লায় নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে অন্তত ৫১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে করোনার সংক্রমণে ১৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে বাকিদের মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ গতকাল বুধবার কুমিল্লায় করোনায় একজন এবং উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৬ জন। এছাড়াও করোনার উপসর্গ নিয়ে তার আগের দিন মঙ্গলবার (১৬ জুন) ৮ জন, সোমবার ৭ জন, রোববার ৭ জন এবং এর আগের দিন শনিবার মারা যান ১০ জন। আর এসময়ে করোনার সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন আরো অন্তত ১২জন।
গত ৫ দিনে কুমিল্লা মেডিক্যালে করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ২৫ জন রোগী মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন। তিনি বলেন, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বুধবার করোনার সংক্রমণে ১জন এবং উপসর্গে ৬ জন, মঙ্গলবার করোনা সংক্রমণে ৩ জন এবং উপসর্গ নিয়ে আরো ৮ জন মারা গেছেন। এছাড়াও ১৬ জুন ৮জন, ১৫ জুন ৫জন, ১৪ ও ১৩ জুন মারা যান ৩ জন করে। এ ৫ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপালটিতে আরো ১৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লায় প্রথমন করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল। পরদিন ১০ এপ্রিল থেকে কুমিল্লা জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। আর সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সে লকডাউন তুলে নেওয়া হয় ৩১ মে। মূলত এ দিন থেকেই কুমিল্লায় কভিড সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। ৩১ মে কুমিল্লায় প্রথম একদিনে শতাধিক করোনা রোগী (১০৪) শনাক্ত হয়। এরপর আরো ৫ দিন এক শ’র অধিক করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য দেয় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সবশেষ বুধবার আক্রান্ত হন আরো ৯১ জন। তার আগের দিন আক্রান্ত হন ১১৭ জন। আর এভাবে বাড়তে বাড়তে কুমিল্লায় ১৭ জুন পর্যন্ত কোডিভ-১৯ আক্রান্ত রোগী সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ২২১৭ জনে।
কুমিল্লাজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনার সংক্রমণ ও সেই সাথে বাড়তে থাকা মৃত্যু প্রসঙ্গে কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, কুমিল্লা জেলায় যত রোগী শনাক্ত হচ্ছে, অনেক বিভাগেও এত রোগী নেই। এই জেলায় হু হু করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কমিউনিটিতে এটি সংক্রমিত হওয়ার কারণে শনাক্তের সংখ্যাও বাড়ছে।
আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা প্রসঙ্গে ডা. সাহাদাত হোসেন বলেন, কুমিল্লার বাসিন্দা যারা ঢাকায় কিংবা অন্যা জেলায় থাকেন এবং সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান, তাদের সংখ্যা কুমিল্লা জেলার তথ্যে আসে না। এটা ঢাকায় হিসাব রাখা হয়। আমরা কেবল কুমিল্লায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর তথ্যই সংগ্রহ করি।