
স্বাধীনতা
পুরস্কার এবং রামোন ম্যাগসেসে ( Ramon Magsaysay ) পুরস্কারে ভূষিত
কুমিল্লার এই বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটি সম্বন্ধে দেশের মানুষের কথা বাদই দিলাম
আমাদের কুমিল্লার মানুষেই বা কয়জনে জানেন । সংক্ষেপে বলছি এই প্রজন্ম এবং যারা জানেন না তাদের জন্য । দিদার সমবায় সমিতি হলো বাংলাদেশের একটি সমবায় ভিত্তিক জন-কল্যাণমূলক সংগঠন ।
এই সমিতিটি বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নের পথিকৃৎ কুমিল্লা শহরের অতি
নিকটবর্তী কাশিনাথপুর ও বলরামপুর গ্রামের আটজন রিকশাচালক ও একজন ক্ষুদ্র
দোকানদারের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । গ্রামের চায়ের
দোকানের মালিক মোহাম্মদ ইয়াছিন তার দোকানে আগত ৮ জন রিক্সা ও ভ্যান চালক
মোঃ বেনু মিয়া, মোঃ নুরু মিয়া, মোঃ আতর আলী, মোঃ নিলু মিয়া, মোঃ চরু
মিয়া, মোঃ অহিদ মিয়া, মোঃ আব্দুুল খালেক এবং মোঃ রফিক মিয়াকে নিয়ে
প্রত্যেক সদস্য প্রতিদিন ১ আনা করে জমা রাখাবে - এই শর্তে ১৯৬০ সালে ৯
অক্টোবর তারিখে ৯ সদস্যবিশিষ্ট এই সমবায় সমিতিটির গোড় পত্তন করেন। সামান্য সদস্য পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও কালক্রমে দিদার একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
এ সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা এবং এর সদস্যদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার খরচ যোগানো।
বর্তমানে দিদারের সদস্য সংখ্যা ১৫০০। সমিতির সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত ৯
সদস্যের একটি কার্যনির্বাহী কমিটি এর কর্মকান্ড পরিচালনা করে।
সমিতির
রয়েছে ইটভাটা, সরিষার তেলের মিল, ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয়
দ্রব্যাদি বিক্রির সমবায় স্টোর, সার ও কীটনাশকের দোকান, তিনটি গভীর নলকূপ,
তিনটি ধান ও গম ভাঙার কল এবং একুশটি রিকশা। সমিতির অধীনে রয়েছে
একটি হাইস্কুল ও একটি কিন্ডারগার্টেন। দিদারের সদস্যবৃন্দ অনেক সামাজিক
কর্মকান্ডে সক্রিয়। এগুলির মধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, মাছ চাষ
প্রকল্প এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি প্রভৃতি। যে দুটি
গ্রামে শুরু থেকে দিদারের কর্মকান্ড চালু রয়েছে সেখানে আজ দারিদ্র্যের
চিহ্ন প্রায় নেই। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ। গ্রাম দুটিতে শিক্ষার হার
জাতীয় গড় হারের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় গড় হারের
তুলনায় বেকারত্বও হ্রাস পেয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সার্বিক
অবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের
“সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার” হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান
করা হয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে । এই সমিতির উদ্যোক্তা এবং সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন নিজেও ১৯৯০ সালে পল্লী উন্নয়নে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেছেন । দিদারের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ ইয়াসিন ১৯৮৮ সালে এশিয়ার বিখ্যাত “ রামোন ম্যাগসেসে “ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া সমিতির উদ্যোক্তা এবং সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন নিজেও ১৯৯০ সালে পল্লী উন্নয়নে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেছেন । সমবায় আন্দোলনে প্রাণপুরুষ ড.আখতার হামিদ খানের প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা বার্ড ( BARD ) বিশ্বব্যাপি খ্যাতি লাভ করেছে।
একইভাবে দারিদ্র ও অসহায় মানুষের কল্যানে কাজ করে দিদার সমবায় সমিতি
রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে কুমিল্লাকে বিশ্বব্যাপি
পরিচিত করেছে।
লেখক
এম কে জাকারিয়ানির্বাহী পরিচালক
পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড