
মাসুদ আলম।।
‘অতি
চালাকের গলায় দড়ি’ পড়েছে কুমিল্লার পেঁয়াজ-বাজারে। ‘পেঁয়াজমাতি’ করতে গিয়ে
রীতিমতো ধরা খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ‘ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ’ খবর পাওয়া
মাত্রই কুমিল্লার যে আড়তদার-পাইকাররা পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়িয়েছিলেন, সেই ঝাঁজে
আজ নিজেরাই কাঁদছেন। অতি মুনাফার লোভে পেঁয়াজের দাম রাতারাতি
দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করে, বেশি দরে আরো পেঁয়াজের চালান এনে এখন আর
সেগুলো বেচতে পারছেন না। কারণ, খুচরা দোকানি ও সাধারণ ক্রেতাÑ সবাই দাম
আরো বাড়বে আশঙ্কায় হুড়োহুড়ি করে পেঁয়াজ কিনে স্টক করেন। পাশাপাশি কুমিল্লার
প্রশাসনও পেঁয়াজ-বাজারে শুরু করেন কড়া মনিটরিং। এতে করে, অতি লোভী
আড়তদার-পাইকাররা এখন ক্রয়মূল্যের চেয়ে দাম কমিয়ে দিয়েও পেঁয়াজের ক্রেতা
পাচ্ছেন না। তাদের পেঁয়াজ গুদামেই পচতে শুরু করেছে।
গতকাল সোমবার
কুমিল্লার চকবাজার তেরীপট্টি ঘুরে দেয়া যায়, বাজার ক্রেতাশূন্য। আড়তভর্তি
পেঁয়াজ। গদিতে বসে কয়েকজন মিলে গল্প করছেন। শ্রমিকরা কানে হেডফোন লাগিয়ে
মোবাইল ফোনে গান শুনছেন। আবার কেউ বসেই দিন পার করছেন। তথ্য সংগ্রহের জন্য
আড়তে ঢুকতেই ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানতে চান, ‘পেঁয়াজ কয় বস্তা লাগবে।
লোকসানে ছেড়ে দেবো।’
ওদিকে ভারত আবারও পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করেছে, এমন
তথ্যে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক আরো বেড়ে গেছে। সেই আতংকের চাপ বাজাওে ঢোকা
মাত্রই অনুভব করা যায়।
হাজী ফয়েজ স্টোর, গ্রামীণ বানিজ্যালয় ও শাহ পরান
ট্রেডার্স নামে তেরীপট্টির কয়েকজন আড়তদার প্রায় একই সুওে বললেন, ভারত
পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করছেÑ এই খবরের পর এ পর্যন্ত একটাই চালান আমদানি
করেছি। সেই পেঁয়াজ কেজিতে ৬০ টাকা পড়েছে। এছাড়া পরিবহন, লোড-আনলোডসহ
অন্যান্য খরচ হিসাব করলে পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকায় পড়ে। আমদানির পর এক-দুই
দিন কিছুটা বিক্রি হলেও গত দুই-তিন দিন পাইকারি বিক্রি নেই বললেই চলে।’
তারা
আরও জানান, গুদাম ও দোকানে পড়ে থেকে পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে। বড় ধরনের ক্ষতি
থেকে বাঁচতে লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করতে চাইছেন, কিন্তু বাজারে ক্রেতা নেই।
মামা-ভাগিনা স্টোরের পাইকারি ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম অনিক বললেন, গত
দুই দিন একটা পেঁয়াজও বিক্রি করতে পারিনি। বাজারে ক্রেতা নাই। দোকানে থাকা
পেঁয়াজে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। অধিকাংশ বস্তায় পেঁয়াজে পচন ধরেছে। খরচ বাদেই ৬০
টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনে এখন ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বড় লোকাসানের
অশংকায়। তবু ক্রেতা মিলছে না।
এদিকে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল,
ছোট ও মাঝারি আকারের অনেক খুচরা ব্যবসায়ী পেঁয়াজ বিক্রি ছেড়ে দিয়েছেন। দাম
স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা আর পেঁয়াজ বিক্রি করবেন না বলে জানান।
নগরীর
মগবাড়ি চৌমহনী থেকে আসা আরিফ নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, পাইকারী
মূল্যে ব্যবসায়ীরা গত তিন-চার দিন আগে যে পেঁয়াজের দাম বলেছেন কেজি ৭০-৭৫
টাকা, সেই একই চালানের পেঁয়াজ আজ বলছে ৪৮-৫০ টাকা। কিন্তু পেঁয়াজগুলো দেখতে
গুণগত মানের না। খুচরা বাজারে বিক্রি করতে কষ্ট হবে বলে পঁয়াজ আর কিনিনি।
এদিকে,
কুমিল্লায় পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নিতে গতকালও অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। চকবাজার
তেরীপট্টিতে এই অভিযান পরিচালনা করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সহকারী
কমিশনার শামীম আরা। কুমিল্লার কাগজকে তিনি জানান, অস্থিতিশীল করে তোলা
পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং করছে।
আড়ত, পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান চলমান রয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার
স্থিতিশীল। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রয়মূল্য থেকে ২-৩
টাকা লোকসানে পেঁয়াজের বিক্রয়মূল্য নির্ধারন করেছেন। এর পরও কোনো অসাধু
ব্যবসায়ী যাতে পেঁয়াজের বাজাওে সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারে, সেই বিষয়ে
আমাদের মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।’