আজ শারদীয় দুর্গা পূজার মহা সপ্তমী
সন্ধ্যা ৭টার পর দর্শণার্থী প্রবেশ নয়
Published : Thursday, 22 October, 2020 at 5:44 PM
রণবীর ঘোষ কিংকর।
দেবীর নবপত্রিকায় প্রবেশ, চক্ষু দান সব কিছুর মধ্য দিয়ে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
আজ মহাসপ্তমী। শারদীয় দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন। ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনায় গতকাল শুরু হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। গতকাল দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধে খড়গ-কৃপাণ, চক্র-গদা, তীর-ধনুক আর ত্রিশুল হাতে হাজারো ম-পে অধিষ্ঠিত হলেন।
তবে করোনা সংকটে এই প্রথম সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজায় থাকছে না কোন উৎসবের আমেজ। ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী শাস্ত্রিয় পূজা ছাড়া সব আনুষ্ঠানকতা বন্ধ করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি।
যে কারণে এবার কুমিল্লার প্রতিটি পূজা মন্ডপে সন্ধ্যা ৭টার পর দর্শণার্থী প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন জেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ। দিনের বেলা দর্শণার্থী প্রবেশও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। মুখে মাস্ক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত পরিসরে প্রতিমা দর্শণ করতে হবে। কোন মন্ডপে এবার থাকছে না ডিজিটাল সাউন্ড সিষ্টেম। ধর্মীয় বিধিমোতাবেক ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দেবী পক্ষের পঞ্চমী তিথি বুধবার (২১অক্টোবর) রাত থেকে দেবীর বোধন ও বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গা স্ব-পরিবারে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে এসেছেন এমন বিশ্বাস নিয়ে মাতৃবন্ধনা শুরু করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়। বৃহস্পতিবার রাতে মঙ্গলঘট স্থাপন শেষে মহাষষ্ঠী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পঞ্জিকার তিথি অনুযায়ী আজ শুক্রবার (২৩অক্টোবর) দেবী বন্ধনার মহাসপ্তামী। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপী দেবী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও সপ্তমী তিথিতে দেবীকে স্নান করিয়ে বিহিত পূজার পর পুষ্পাঞ্জলীর মাধ্যমে দেবীর চরণে পুষ্পার্ঘ অর্পন করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সকাল থেকে চ-িপাঠে মুখরিত ছিল বিভিন্ন পূজা মন্ডপ এলাকা। আজ শুক্রবার মহাসপ্তমী। পঞ্চিকার তিথি অনুযায়ী বেলা ১২টা ১৪ মিনিটের মধ্যে দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সনাতন শাস্ত্রানুসারে মা দুর্গা হচ্ছেন আধ্য শক্তি দেবী ভগবতি। তার বহুরূপ। পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা বলে তিনি পার্বতী। আবার দুর্গম নামক অসুরকে বধ করে ছিলেন বলে তার অন্য নাম দুর্গা। আবার তিনিই চন্ডী, মহিষাসুরমর্দিনী।
পূজা শেষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে ভক্তবৃন্দ মা রূপের দেবী দুর্গার নিকট নিজের, পরিবারের ও দেশ-জাতির মঙ্গল প্রার্থনা করে চন্ডী শ্লোক “রূপং দেহি, জয়ং দেহি, যশো দেহি, দ্বিষো জহি (অর্থাৎ হে দেবী তুমি আমাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং শত্রুর কবল থেকে মুক্ত কর)” পাঠ করে দেবীর চরণে ফুল-বেলপাতায় পূষ্পাঞ্জলী অর্পন করবেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল জানান- এবছর মাকে বন্ধনা করে শুধু বিশ্ব ব্যাপী করোনা ভাইরাস থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার প্রার্থনা। তার বাহিরে কিছু নয়। স্বাস্থ্য বিধি মেনে মন্ডপ প্রবেশ করতে হবে। দলবল নিয়ে জনসমাগম না করতে সকলের নিকট অনুরোধ করছি। সন্ধ্যা ৭টার পর কোন মন্ডপ খোলা রাখার প্রয়োজন নেই। সন্ধ্যায় শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ সন্ধ্যা আরতি করে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি চান্দিনা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী জানান, শাস্ত্র মতে দুর্গা পূজা শুরু হয় বসন্তকালে যার কারণে মায়ের ওই পূজাকে বাসন্তি পূজা। আর রাম চন্দ্র তার স্ত্রী হরণের পর রাবনকে বধ করার উদ্দেশ্যে শক্তিধারণের জন্য শরৎ কালের এই তিথিতে পূজা করে দুর্গাদেবীকে আরাধনা করার পর থেকে শারদীয় দুর্গা পূজা আরম্ভ হয়। ওই ধারাবাহিকতায়ই আমরা দেশ-জাতি, ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের মঙ্গল কামনা করে শারদীয় দুর্গা পূজা করে থাকি। চলতি করোনা ভাইরাস থেকে মা দুর্গা যাতে সকলকে সুস্থ রাখেন এবং করোনা ভাইরাস যেন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এই প্রার্থণা করার জন্য সকল ভক্তদের অনুরোধ করছি।
সংশোধনী- গতকাল (২২ অক্টোবর) কুমিল্লার কাগজ পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘কুমিল্লার ৮০৯ পূজা মন্ডপে হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব’ শিরোনামটি ভুল হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এবছর কুমিল্লা মহানগরীসহ ১৭টি উপজেলায় ৭৪৮টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। তবে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাব অনুযায়ী ৭৩০টি মন্ডপে চলছে ৫দিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গা পূজা আর বাকি ১৮টি মন্ডপে ঘট পূজা অনুষ্ঠিত হবে।