ফুলকপি ও বাঁধাকপি শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম। প্রাচীনকালে গ্রিক ও রোমানরা কপি খেতেন। কপি সেইজন্যে অতি প্রাচীন তরকারি। ইংরেজরা ভারতে প্রথম কপি নিয়ে এসেছিলেন। বলা হয়ে থাকে উইলিয়াম কেরি ১৮২০ সালে প্রথম ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রভৃতি এনে বাংলায় এই সবজির চাষ করিয়েছিলেন।
জেনে নিন পুষ্টি ফুলকপি ও বাঁধাকপির উপাদান ও উপকারিতার কথা!
শীতকালীন সবজি ফুলকপি
বড় বড় সবুজ পাতার মধ্যেখানে সাদা সাদা একগুচ্ছ ফুল! বলুন দেখি কোন ফুল? হুম, মোটেই ফুল নয়! এই সবুজ-সাদা শুভ্র গুচ্ছ ফুলটি হলো সবার খুব পছন্দের একটি সবজি, ফুলকপি! ভাজি, নিরামিষ, মাছের তরকারি, পাকড়া যেভাবেই খান না কেন ভালো লাগে প্রতিবারই!
পুষ্টি উপাদান-
ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে যা আমাদের দেহে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। এছাড়াও রয়েছে আয়রন, সালফার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবার।
ফুলকপির উপকারিতা-
ফুলকপির রয়েছে নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা। তা হলো-
১) ক্যান্সার- ফুলকপিতে বিদ্যমান সালফারযুক্ত সালফোরাফেন উপাদানটি ক্যান্সার সেল ধ্বংস করে এবং যেকোনো টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
২) সবল হৃদযন্ত্র- ফুলকপির সালফোরাফেন রক্ত চাপ কমায় ও রক্ত প্রবাহ নিয়মিত রেখে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।
৩) পরিপাকে সহায়ক- ফাইবার ও সালফার সমৃদ্ধ ফুলকপি পরিপাকে সহায়ক।
৪) স্মৃতিশক্তি বান্ধব- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও সচল রাখতে ফুলকপির ভিটামিন বি ও বি কমপ্লেক্সযুক্ত কলিন অনেক উপকারি। এছাড়াও ফুলকপি মস্তিষ্ক দূর্বলতা ও স্মৃতিবিভ্রমের সমস্যায় সহায়ক।
৫) ঠাণ্ডা জাতীয় সমস্যার প্রতিষেধক- ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি শীতকালের ঠা-া জ্বর, সর্দি, কাশি ও টনসিলের প্রদাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।
৬) দেহ গঠনে- ফুলকপি কোলেস্টেরলমুক্ত তাই দেহ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
৭) রক্ত উৎপাদক- ফুলকপির আয়রন দেহে রক্ত উৎপাদক। গর্ভবতী মা ও বাড়ন্ত শিশুর আয়রনের চাহিদা মেটাতে তাই ফুলকপি একটি বেস্ট অপশন।
শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি
পাতার পরে পাতার পরত! হ্যাঁ, বাঁধাকপির কথা বলছি। তবে অনেকে এই সবজিকে পাতাকপিও বলে থাকে। বাঁধাকপির ভাজি, ডালনা, ফাস্টফুড সবার প্রিয়! বাঁধাকপির পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতা কী কী তা জেনে নেই।
পুষ্টি উপাদান-
বাঁধাকপি প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফোলেট, ফাইবার, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, প্যান্টোথেনিক এসিড, বিটা ক্যারোটিন, এন্টি-অক্সিডেন্ট ইত্যাদি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।
উপকারিতা-উপকারিতা-
বাঁধাকপি ও ফুলকপির স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেকটাই একই রকম। তবুও চলুন দেখে নেই কী কী উপকারিতা রয়েছে বাঁধাকপির?
১) ক্যান্সার প্রতিরোধক- বাঁধাকপি খুব ভালো ক্যান্সার প্রতিরোধক একটি সবজি।
২) ওজন কমায়- বাঁধাকপি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এই সবজি খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমাতে সহায়ক।
৩) হাড় মজবুত করে- এই সবজিতে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি হাড়কে করে দৃঢ় ও মজবুত।
৪) আলসার প্রতিষেধক- যাদের আলসার-এর সমস্যা রয়েছে, তারা বাঁধাকপি রস খেতে পারেন। এটি একটি প্রাকৃতিক আলসার প্রতিষেধক।
৫) চোখের যত্নে- বাঁধাকপিতে বিটা ক্যারোটিন আছে যা আমাদের চোখের জন্য খুবই ভালো।
৬) ত্বক ও চুলের যত্নে- বাঁধাকপির বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারি। আর বাঁধাকপিতে বিদ্যমান ফাইটো-ক্যামিকেলসমূহ আমাদের ত্বকের প্রদাহ জনিত সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
৭) ডিএনএ পুনর্গঠন করে- পাতাকপির ফলিক এসিড বা ফোলেট আমাদের শরীরের ডিএনএ পুনর্গঠন করে থাকে।
৮) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- এই সবজিতে বিদ্যমান ভিটামিন সি ও এন্টি- অক্সিডেন্ট আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও আমাদের সুস্থ রাখে!