Published : Wednesday, 11 November, 2020 at 12:00 AM, Update: 11.11.2020 1:01:12 AM

মো. হাবিবুর রহমান, মুরাদনগর||
সামান্য
একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতেই গভীর রাতে ১৬ বছরের কিশোর বিকাশ চন্দ্র
বর্মনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া
হয়। আর এই নৃশংস ও ঘৃণ্য কাজটি একাই করেছে কুমিল্লার মুরাদনগরের ২৪ বছর
বয়সী তরুণ সাকিব মিয়া। গত রবিবার পুলিশ তাকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে
মুরাদনগরে নিয়ে এসেছে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই পুকুর থেকে
হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ছোড়াটি উদ্ধার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক
প্রেসব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিম উল
আহসান।
প্রেসব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বিকাশ চন্দ্র বর্মণের মরদেহ উদ্ধারের
সময় ঘটনাস্থল থেকে এক জোড়া জুতা খুঁজে পায় পুলিশ। সেই জুতা ও নিহতের মোবাইল
ফোনের কল লিস্ট ধরে তদন্তে নামে তারা। পরে চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকা থেকে
জুতার মালিক সাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে
উদ্ধার হওয়া জুতা জোড়া তার বলে স্বীকার করে সে। সাকিব মুরাদনগর উপজেলার
করিমপুর গ্রামের মো. হানিফের ছেলে।
প্রেসব্রিফিং-এ কুমিল্লার অতিরিক্ত
পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান বলেন, গত ৩০ অক্টোবর শুক্রবার রাতে মুরাদনগর
জেলেপাড়ার প্রহল্লাদ চন্দ্র বর্মনের ছেলে বিকাশ চন্দ্র বর্মনসহ ৪ বন্ধু
লক্ষীপূজায় অর্চনা শেষে মুরাদনগর বাজারে চা খেতে যান। কিন্তু চায়ের দোকান
খোলা না পেয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে বৃষ্টিতে আটকা পড়লে তারা
জেলেপাড়ার পুকুর পাড়ের একটি ৬তলা ভবনের নিচে অবস্থান নেন। এক সময় বৃষ্টি
হালকা হলে উত্তম বর্মন ও অজয় চন্দ্র সরকার নামে বিকাশের দুই বন্ধু বাড়ি চলে
যান। রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় বিকাশকে একা পেয়ে তার মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে
নেওয়ার পরিকল্পনা করে করিমপুর গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে সাকিব মিয়া। বিকাশ
তার বাড়ির পথে কিছুদূর এগোলেই পেছন থেকে এসে ছুরি দিয়ে তার পিঠে আঘাত করে
সাকিব। আঘাত পেয়ে বিকাশ দৌড়ে বাড়ির দিকে যেতে চাইলে পরক্ষণে তার ঘাড়ে আরো
একটি আঘাত করে সাকিব। এ সময় বিকাশ পুকুরে পড়ে গেলে সাকিব তার হাতে থাকা
ছোড়া দিয়ে গলা কেটে হত্যা নিশ্চিত করে বিকাশের। তখন বিকাশের পকেটে থাকা
লাভা এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনটি নিয়ে মৃতদেহটি কচুরিপানার নিচে রেখে চলে যায়
সাকিব।
প্রেসব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত
পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম ও মুরাদনগর থানার ওসি (তদন্ত) নাহিদ আহমেদ।
উল্লেখ্য,
গত ৩০ অক্টোবর শুক্রবার রাত থেকে বিকাশ চন্দ্র বর্মনের কোনো সন্ধান না
পেয়ে তার বাবা প্রহল্লাদ চন্দ্র বর্মন গত ১ নভেম্বর রবিবার মুরাদনগর থানায়
সাধারণ ডায়েরি করেন। পরদিন সকালে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে বিকাশের গলাকাটা
লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রহল্লাদ চন্দ্র বর্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা
মামলা রুজু করেন। ঘটনার ১০ দিন পর ঘাতকের ফেলে যাওয়া জুতা ও সাথে থাকা অপর
দুই বন্ধুর তথ্য এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চট্টগ্রামের বাকলিয়া
এলাকা থেকে রবিবার রাতে ঘাতক সাকিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।