
নিজস্ব
প্রতিবেদক: ঢাকায় বড় বোনের বাসায় থাকতেন জান্নাতুল হাসিন (২৪)। বাংলাদেশ
ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) থেকে ¯œাতক শেষে
বর্তমানে ঢাকার মিরপুরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ইন্টার্নি করছিলেন তিনি।
সোমবার (৩০ নভেম্বর) রাতে কাউকে কিছু না জানিয়ে কুমিল্লায় বাড়ি আসেন হাসিন।
এরপর চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাসায়ই
ছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ বাসার সদস্যদের জানালেন, বাইরে যাচ্ছেন
দোকান থেকে শ্যাম্পু কিনতে। একটু পরেই বাড়ির পাশের রাস্তায় জোওে একটা শব্দ
হলো। জানা গেলো, পাশের ৯তলা নির্মাণাধীন ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা
করেছেন হাসিন।গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে কুমিল্লা নগরীর
ঝাউতলায় সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ের পিছনে ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসের
পাশে এই ঘটনা ঘটে। নির্মাণাধীন ৯তলা ভবনের পাশেই হাসিনদের একতলা বাড়ি। তার
পাশেই কাউন্সিলরের অফিস। এই অফিসের সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ ঘেঁটে দেখা যায়,
গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে হাসিন তাদের একতলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডান দিকে
দোকানের পথে না গিয়ে বাম দিকে নির্মাণাধীন ৯তলা ভবনের দিকে এগোতে থাকেন। এক
সময় তাকে ওই ভবনে ঢুকতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরই দেয়েটিকে ওই ভবন থেকে পড়ার
দৃশ্যও ভিডিওতে দেখা যায়। তবে ঠিক কত তলা থেকে মেয়েটি পড়েছেন, তা ভিডিও
ফুটেজে স্পষ্ট বোঝা যায়নি। নির্মাণাধীন হওয়ায় ভবনটিতে কোনো সিকিউরিটি গার্ড
ছিল না কিংবা অন্য কেউ বসবাসও করতো না, যে কারণে আর কোনো তথ্য জানা
যায়নি।
ঠিক কী কারণে বিশ^বিদ্যালয়ছাত্রী হাসিন আত্মহত্যা করলেন; কী
অভিমান নিয়ে ঢাকা থেকে ফিরে আসেন তিনি; কী চলছিল তার মনেÑ তার কিছুই গত
রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। এভাবে মেয়েটির অস্বাভাবিক অকাল
মৃত্যুতে শোকবিহ্বল পরিবারটির সদস্যদের কাছ থেকেও বিস্তারিত কোনো বক্তব্য
নেওয়া সম্ভব হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসিনের বাবা ইদ্রিস মেহেদী
পরিবার নিয়ে নগরীর ঝাউতলায় থাকেন। তিনি ঢাকায় গার্মেন্টস ব্যবসা করেন। তার
তিন মেয়ে ও এক ছেলে। জান্নাতুল হাসিন মেজো মেয়ে।
মেয়েটির বাবা ইদ্রিস
মেহেদীর কাছ থেকে শুধু জানা গেছে, জান্নাতুল হাসিন তার বড় মেয়ে জান্নাতুল
হেছানের ঢাকার বাসায় থেকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড
টেকনোলজি (বিইউবিটি) থেকে ¯œাতক শেষ করেছেন। ওই বাসায় বড় মেয়ে এবং তার
স্বামীর সঙ্গে তার মেজো মেয়ে হাসিনও থাকতেন। তবে বড় মেয়ে ও তারা স্বামী
দুজনই চাকরিজীবী। হাসিন মিরপুর-৬ এ মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একটি শাখায়
ইন্টার্নি করছিলেন। তবে বড় বোন ও ভগ্নিপতির চেয়ে হাসিন বাসায় সময় দিতেন
বেশি।
আত্মহত্যা করলেন কেন, কোনো ধারণা কি করতে পারছেনÑ জানাতে চাইলে
বাবা ইদ্রিস মেহেদী বলেন, ‘হাসিন ঢাকা থেকে রাতে কুমিল্লায় আসে। কারো সাথে
তেমন কথা বলেনি, খাওয়া-দাওয়াও করেনি।’ কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল কি না,
অন্য কারো সাথে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কি না, তা তিনি জানেন না।
স্থানীয়
ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনজুর কাদের মনি কুমিল্লার কাগজকে বলেন, ‘আমরা অফিসের
ভেতরে বসে কাজ করছি। দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ একটি বড় শব্দ হলো। বের হয়ে
দেখি, একটি মেয়ে মাটিতে পড়ে আছে। কয়েকজন দৌড়ে এসে তার মাথায় পানি দেওয়ার
চেষ্টা করলো। এর মধ্যেই হাত-পা ছেড়ে দিয়ে মেয়েটি মারা গেলো।’
কুমিল্লা
কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল হক বলেন, ‘যেহেতু মেয়েটি একটি
নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে, সে হিসেবে আমরা
প্রাথমিকভাবে বলবো- সে আত্মহত্যা করেছে। ময়নাতদন্ত হবে এবং মৃত্যুর পেছনের
ঘটনা জানতে পারলে বাকিটা বলা যাবে।
কেন এই আত্মহনন?:
হাসিনের
আত্মহত্যার বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে একটি সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা মডার্ন
স্কুলে পড়ার সময় এক বছরের সিনিয়র এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে
তার। দীর্ঘদিনের এ প্রেমে ফাটল ধরে কিছুদিন আগে। অন্য একজনকে বিয়ে করে ওই
ছেলেটি। বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না হাসিন। এর মধ্যে ঢাকায় একটি
অনুষ্ঠানে দেখা হয় হাসিন ও ওই যুবকের। পুরনো সম্পর্ক নিয়ে কথাও হয় তাদের
মাঝে। এর পর সোমবার রাতে বাড়ি ফিরে মঙ্গলবার দুপুরে আত্মহননের পথ বেছে নেন
হাসিন।
প্রেমের বিষয়টি উল্লেখ করে হাসিনের বান্ধবী অমাইশা নুপুর
(ঙসধরংযধ ঘঁঢ়ঁৎ) তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘আমার কাছে এখনো স্বপ্নের মতো
লাগছে, তোমার নিস্তেজ শরীরটা দেখে আমার শরীরটা থরথর করে কাঁপছিলো। নিজের
চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। দুইদিন আগেও তোমায় নিয়ে কথা বলছিলাম আপনের
সাথে।’
তিনি আরো লেখেন, ‘এতো হাসিখুশি মানুষ তুমি ছিলা, কিন্তু ভেতরে
এতোটা ভেঙ্গেচুড়ে ছিলা, কেউ তোমার হাসির আড়ালের দুঃখটা খুঁজে দেখেনি। কাউকে
বুঝতেও দাওনি। ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারোর হওয়ার কষ্টটা কোনো মানুষই
মানতে পারে না। প্রেম করবে একজনের সাথে আর বিয়ে করে অন্য কাউকে। এরা ১
মিনিটেই বদলে যেতে পারে, মুহূর্তেই অনেকদিনের সম্পর্ককে গলাটিপে হত্যা করতে
এদের বুক একটুও কাঁপে না। কারণ এটা তখন নতুন প্রেমের নেশায় নিজের বিবেক-
মনুষত্ববোধকে মেরে ফেলে, চিন্তাও করে না ঐ মানুষটা তাকে ছাড়া থাকবে কি করে।
এরা তো ঠিকই নতুন মানুষটার সাথে হাসিখুশি দিন কাটায়, কষ্ট এদের একটুও
ছোঁয় না। কষ্টে থাকে তারা, যারা এদের মতো বেঈমানদের বিশ্বাস করে, মন থেকে
ভালোবাসে, একসাথে থাকার স্বপ্ন দেখে। বিনিময়ে পায় জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে
থাকা আর না হয় এভাবে লাশ হয়ে যায়...’