মাসুদ আলম।। কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুকে আওয়ামী লীগের কর্মী উল্লেখ করে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) কুমিল্লা মডার্ণ কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংরক্ষিত নারী সাংসদ আঞ্জুম সালতানা সীমা এই অভিযোগ করেন।
এছাড়াও তিনি সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ বাহারের একটি সংবাদ সম্মেলনে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ও তার বাবা অধ্যক্ষ আফজাল খানসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা কাল্পনিক ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদানের প্রতিবাদও জানান।
এসময় তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, কুমিল্লার গোমতী নদীর বালু জোরপূবর্ক উত্তোলন থেকে শুরু করে এলজিইডি, গণপূর্ত, সড়ক বিভাগ, শিক্ষাবোর্ড, কুমিল্লা প্রেসক্লাব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশলী, সিটি কর্পোরশেন, রেজিস্ট্রি অফিস ও জেলা কারাগারসহ জেলার সকল সরকারি দপ্তরগুলোতে তার নির্দেশিত লোকজনের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিককালে একটি ঘটনাকে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা সদর সাব-রেজিস্ট্রে অফিসে প্রকাশ্যে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে সরকারি মহাফেজ খানায় ঢুকে দলিল ঘষামাজা ঘটনায় পুরো শহরবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই বিষয়ে ওই সাংসদের কোন বক্তব্য নেই। উল্টো এই ঘটনায় দলিল ঘষামাজার ঘটনায় মামলার বাদিসহ তিন কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে কুমিল্লা টাউনহল প্রসঙ্গ টেনে এমপি সিমা বলেন, ঐতিহ্যবাহি কুমিল্লা টাউনহল হেরিটেজ ঘোষণা হবে। এই জন্য গণশুনানির কি দরকার? হেরিটেজ নিয়ে গণশুনানি হবে এমনটি কখনও শুনেনি। মূলত টাউন হল ভেঙ্গে পুরো প্রজেক্টটির অর্থায়নে নিজের লিজকৃত মার্কেটটি রক্ষা করতে এই অপচেষ্টা। এছাড়াও তিনি টাউনহলের সম্পত্তি লিজ নিয়ে বিক্রি করে বসে আছেন। কারণ যদি টাউন হলে ভেঙ্গে নতুন ভবন তৈরি করা না যায় তাহলে মার্কেটও হারাবেন এবং ইজ্জতও হারাবেন। যার কারণে তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন টাউনহল ভেঙ্গে ফেলার জন্য। তিনি আরও জানান, রাতের আঁধারে এই ঐতিহ্যবাহী টাউনহলটি ভেঙ্গে ফেলারও অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিককালে কুমিল্লার আলোচিত জিল্লুর রহমান জিলানী হত্যাকাণ্ডের আসামিদের প্রটেকশন দেওয়ার অভিযোগ এনে তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্য হাজী বাহার এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বাঁচাতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। এতে জিল্লুর পরিবার ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শংকিত। কারণ মামলার অন্যতম আসামি মহানগর যুবলীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু প্রকাশ্যে সাংসদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। এছাড়া তিনি শহরের আলোচিত ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল, জাহিদ বাবু, ওবায়দুল হক দুলাল ও আক্তার সাংসদের আপন ভাতিজা সুমু হত্যাসহ সর্বশেষ জিল্লুর হত্যাকাণ্ডে জড়িতরাও সাংসদের আশ্রয়প্রশ্রয়ে রয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ওই সাংসদের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কথা বলায় দেশ বরেণ্য সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানকে রাজাকার পুত্র আখ্যা দেন। অথচ কুমিল্লার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুর বাবা স্বীকৃত রাজাকার হলেও তিনি তার সাথে মিলেমিশে চলেন। এছাড়াও মেয়র সাক্কুর সাথে বিভিন্ন কাজের ৬০% ৪০% ভাগাভাগির কমিশন ভাগাভাগির কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও তিনি ফ্রিডম পার্টি, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে আসা লোকজনকে জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন।
তিনি বলেন, এমপি বাহার বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখার জন্য দীর্ঘদিন টমছমব্রিজ বাসস্টেশনটি কিভাবে আটকে রেখেছিলেন তা এই জনপদের মানুষ দীর্ঘকাল প্রত্যক্ষ করেছে। যে কোনো ব্যবসা বাণিজ্য থেকে কমিশন খাওয়ার ব্যাপারে তার মেয়ে জামাইটি (সাইফুল আলম রনি) পাকিস্তানের আসিফ আলী জারদারির মতো নাম করেছে।
লিখিত বক্তব্যে নারী সাংসদ আরও বলেন, কুমিল্লার বর্ষীয়ান অধ্যক্ষ আফজাল খান অ্যাডভোকেট তিলেতিলে কুমিল্লা মডার্ণ হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। অথচ তিনি সাংসদ হয়ে সেই প্রতিষ্ঠানটি দখলে নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে উল্টো আফজাল খান পরিবারকে দোষারোপ করছেন, যা কোন ভাবে সত্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্টির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান ইমরান ও তার ছোট ভাই নোমান খান।
উল্লেখ্য, কুমিল্লার-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সংবাদ সম্মেলনের ১০ দিন পর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন নারী সাংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা।