
বশিরুল
ইসলাম:
আশঙ্কাজনক হারে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে কুমিল্লায়। ২০১৫ সালে যেখানে
ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ২৪৭টি, সেখানে ২০২০ সালে এসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে
৩৬৭টিতে। অর্থাৎ গেল প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে একজন করে ধর্ষণের শিকার হয়েছে
কুমিল্লায়। গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, একটি বছর বাদে বাকি
সব বছরই ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ২০১৬ সালে ২৬৭ জন, ২০১৭
সালে ৩৩০, ২০১৮ সালে ২৯৭ এবং ২০১৯ সালে ৩৫৬ জন এ জেলায় ধর্ষণের শিকার
হয়েছেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের
রেজিস্ট্রার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো,
কুমিল্লায় গত এক বছরে যেখানে আত্মহত্যা করেছে ৩৬৪ জন, সেই সময়ে ধর্ষণের
শিকার হয়েছেন ৩৬৭ জন। ধর্ষণের সংখ্যা আত্মহত্যাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিষয়টি
উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কুমিল্লাবাসীর মাঝে।
তথ্য ঘেঁটে জানা যায়,
গত বছর ৪ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের নারী পর্যন্ত মোট ৩৬৭ জন
ধর্ষণের অভিযোগে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে
পরীক্ষা করিয়েছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এ সংখ্যা ছিল ১৭ জন;
ফেব্রুয়ারি মাসে ২৯ জন, মার্চে ৩৪, এপ্রিলে ১২, মে মাসে ১৫, জুন মাসে ২৭,
জুলাই মাসে ২৮, আগস্টে ২৮, সেপ্টেম্বরে ৪৩, অক্টোবরে ৬১, নভেম্বরে ৩৯ ও
ডিসেম্বর মাসে ৩৪ জন ধর্ষণের পরীক্ষা করিয়েছেন এই হাসপাতালে। গেল বছর
ধর্ষণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি অক্টোবর মাসে ৬১ জন এবং সবচেয়ে কম এপ্রিল মাসে
১২ জন।
বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লার নারীনেত্রী ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি সাইফুন নাহার মিতা শিকদার কুমিল্লার কাগজকে বলেন, ‘আমাদের সমাজে
পুরুষ ও নারী উভয়ের মাঝে সচেতনতার অভাব। এ সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার
জন্য আমাদের সকলের সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং সচেষ্ট হতে হবে। পুরুষদের প্রতি
আমাদের আবেদন, তারা যেন আমাদের মা-বোন-মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়; তারা
যেন এসব কাজ থেকে বিরত থাকে। এজন্য আগামীতে আমরা আরো সচেতন হবো, আরো উদ্যোগ
গ্রহণ করবো।’
কুমিল্লার এই নারীনেত্রী আরো বলেন, ‘আমি আমাদের
জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আকুল আবেদন জানাবো এই বলে যে, তারা যেন বিষয়টি অতি
গুরুত্বসহকারে দেখেন এবং মানুষকে সচেতন করার ব্যাপারে কাজ করেন। কেননা,
ধর্ষণ যেভাবে মহামারি আকার ধারণ করছে, তাতে রেহাই পেতে হলে আমাদের সবাইকে
এগিয়ে আসতে হবে।’
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের
প্রধান ডা. শারমিন সুলতানা এই প্রতিবেদকের কাছে মন্তব্য করেন, সামাজিকভাবে
অবক্ষয়ের কারণে ধর্ষণ বেড়ে গেছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে ধর্ষণের
শিকার হয়েছে বেশি। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে লেখাপড়ার চাপ না থাকায়
যুবকদের নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে সবচেয়ে বেশি। নারী-শিশু আইনের সংশোধনের কারণেও
এই সংখ্যা বেড়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে সবচেয়ে
বেশি ধর্ষণের পরীক্ষা হয়েছে, যার সংখ্যা ৬১ জন।
তিনি বলেন, ধর্ষণের
অভিযোগকারী সকলেই কিন্তু আবার প্রকৃত ধর্ষিত নয়। কিছু কিছু ধর্ষণ আসে যেমন
৭০-৮০ বছর বয়সী নারী, যারা আসলে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য বা ব্লাকমেইল
করার জন্য ধর্ষণের পরীক্ষা করে।