মাসুদ আলম।।
কুমিল্লায়
আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশুশ্রম। দারিদ্র, অশিা আর পেটের দায়ে কখনো
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকের আসনে, গণপরিবহনের হেলপারি, ভাঙারির দোকানি,
বাসের হেলপারি আবার কখনও হোটেল-রেস্তোরায় কাজ করতে দেখা যায় ৯-১০ বছর বয়সী
শিশুদের। শুধু তাই নয়, অহরহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেমন- ওয়ার্কশপে, নির্মাণ
কাজে, ইটভাটায়, বিড়ি কারখানায়, জুতার কারখানায় এবং বাস-ট্রাকে দিনদিন বাড়ছে
শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। এসব ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় অতিমুনাফার লোভে বেআইনিভাবে
শিশুদের খাটানো হচ্ছে। শিশুশ্রম বন্ধে কঠোর আইন থাকলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে
না।
গতকাল বুধবার কুমিল্লা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জেলা শিশুশ্রম
পরিবীক্ষণ কমিটির ৫ম সভায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। সভায় কুমিল্লা জেলা
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর জানায়, কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২ ওয়ার্ডেই পাওয়া গেছে সাড়ে ৫ হাজারেরও
বেশি শ্রমজীবী শিশু। আর গোটা জেলায় শিশুশ্রমিক রয়েছে প্রায় ১০ হাজার।
সভায়
কুমিল্লার এনজিও প্রতিষ্ঠান দৃষ্টি জানায়, তারা কয়েক বছর ধওে শ্রমজীবী
শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। সর্বশেষ চলতি বছর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১২টি
ওয়ার্ডের তথ্য সংগ্রহ করেন। সেই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই ১২ ওয়ার্ডে
বর্তমানে যে সাড়ে ৫ হাজার শ্রমজীবী শিশু শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৮৫
শতাংশ শিশু ওয়ার্কশপ, ইট ভাঙ্গা, জুতা কারখানা, চামড়া কারখানা ও নির্মাণ
শ্রমিকের কাজ করছে।
গতকালের সভায় কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক
(সার্বিক) মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে কুমিল্লা জেলা কলকারখানা ও
প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক প্রকৌশলী এম এম মামুন অর
রশিদ, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মজিদ, কুমিল্লা আঞ্চলিক শ্রম
দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান, জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার
সঞ্চিতা দাস, জেলা মা ও শিশু কল্যাণ ফান্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালক
দিলনাশি মোহসেন, এইড কুমিল্লার নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া বেগম শেফালী,
দৃষ্টি প্রকল্প কর্মকর্তা রীনা রানী দত্ত ও কুমিল্লা শ্রম পরিদর্শক
(স্বাস্থ্য) সায়মা নাসরিন।
সভায় বক্তারা বলেন, কুমিল্লায় শ্রমজীবী
শিশুর মতো পথশিশুও বাড়ছে। নগরীর টাউন হলেই অর্ধশতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর
সন্ধান মেলে, যাদের অনেকেই পুনর্বাসনের অভাবে মাদকসহ নানা অপরাধমূলক
কর্মকা-ে জড়াচ্ছে। তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে
কেউ এগিয়ে আসছে না। এসব পথশিশুর মধ্যে আবার অনেকে ক্ষুধার তাড়নায় বিভিন্ন
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ে।
কুমিল্লা জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান
পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক প্রকৌশলী এম এম মামুন অর রশিদ বলেন,
‘কুমিল্লার শ্রমজীবী শিশুদেও সঠিক তালিকা করার প্ররিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেই
তালিকা দিয়ে শিশুশ্রম নিরসন করতে কাজ করবো।’
সভায় সভাপতির বক্তব্যে
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন,
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম বন্ধে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও মালিকপরে সাথে বৈঠক
করতে হবে, সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। তাদেরকে শিশুশ্রমের ব্যাপারে
নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। শিশুশ্রম বন্ধে আমরা যথেষ্ট আন্তরিক এবং সরকারেরও
কঠোর নির্দেশনা রয়েছে, যা আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন করতে
হবে।’