ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
আইসিইউ শয্যা যেন আকাশের চাঁদ
Published : Saturday, 3 April, 2021 at 12:00 AM
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে যত দ্রুত সম্ভব তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের কারণে রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে এখন আইসিইউ শয্যা খালি পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো।

খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড ১০টি হাসপাতালের মোট ১১৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ১০৮টিতেই রোগী ভর্তি রয়েছে। অর্থাৎ এসব হাসপাতালে মাত্র ১০টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে ফাঁকা থাকা এসব শয্যার কিছু আবার অঘোষিতভাবে সংরক্ষিত থাকে বলেও জানা যায়। ফলে এই মুহূর্তে মুমূর্ষু কোনো করোনা রোগীর জন্য সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা যোগাড় করা যুদ্ধ জয়ের নামান্তর। অপেক্ষাকৃত কম খরচে উন্নত চিকিৎসা লাভের সুযোগ থাকায় করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ শয্যার জন্য প্রথমেই সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত শয্যা ফাঁকা না থাকায় আইসিইউয়ের ব্যবস্থা করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা।

অন্যদিকে রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মোট ৩০৬টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছে ২৫৬টিতে। আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে মাত্র ৫০টি। তবে এই হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকলেও সেখানকার চিকিৎসাসেবা ব্যয়বহুল। তাই ধনীরা ছাড়া পারতপক্ষে সাধারণ মানুষ সেখানে যান না। আর যারা যান তারা জানিয়েছেন, দিন ঘুরতেই কেবিন ভাড়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ প্রতিদিন লাখখানেক টাকা খরচ হয়ে যায়।

রাজধানীতে সরকারিভাবে করোনা ডেডিকেটেড ঘোষিত হাসপাতালগুলোর একটি হলো মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল। শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুরে এই হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান ডা. মো. রেহান উদ্দিনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের আলাপ হয়। এ সময় ডা. রেহান জানান, এই মুহূর্তে তাদের হাসপাতালের ১৬টি আইসিইউ শয্যার ১৬টিতেই মুমূর্ষু রোগী ভর্তি রয়েছে। আইসিইউ প্রয়োজন এমন বেশ কয়েকজন রোগীকে শয্যার অভাবে হাইফ্লো অক্সিজেন, ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন, নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের সাহায্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, শয্যা খালি না হলে অন্য রোগীকে দেয়া সম্ভব না। কারণ আইসিইউতে থাকা মুমূর্ষু রোগীকে অন্য কোথাও শিফট করার কোনো সুযোগ থাকে না।

রাজধানীর অন্যান্য করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালেও প্রায় একই অবস্থা বলে জানা গেছে।

শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীর ১০টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মধ্যে উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ১৬টি আইসিইউ শয্যার ১৫টিতে, ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা হাসপাতালের ১০টি শয্যার ১০টিতে, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টির মধ্যে ১৬টিতে, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ছয়টির ছয়টিতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০টি শয্যার ১৪টিতে, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টির মধ্যে ১৫টিতে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ১৬টি শয্যার ১৬টিতেই রোগী ভর্তি রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে দুই হাজার ৫১১টি সাধারণ শয্যায় এ মুহূর্তে রোগী ভর্তি দুই হাজার ৩৪২ জন।

বেসরকারি নয়টি হাসপাতালের মধ্যে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ৩০টি আইসিইউ বেডের ২২টিতে, আসগর আলী হাসপাতালে ৩২টির ১৫টিতে, স্কয়ার হাসপাতালের ১৯টির ১৬টিতে, ইবনে সিনা হাসপাতালের পাঁচটির পাঁচটিতে, ইউনাইটেড হাসপাতালের ২২টির ১৩টিতে, এভার কেয়ার হাসপাতালের ২১টির মধ্যে ২১টিতে, ইমপালস হাসপাতালের ৪০টির ৩৮টিতে, এ এম জেড হাসপাতালের ১০টির ১০টিতে এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের নয়টির আটটিতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন। রাজধানীর বেসরকারি নয়টি হাসপাতালে ৯৪৬টি সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে ৫৮৬টিতে।