এবারের আইপিএল থেকে ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের আয় হওয়ার কথা ছিল ৪ হাজার কোটি রুপি। টুর্নামেন্ট মাঝপথেই স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সেই আয় নেমে আসতে পারে অর্ধেকে। সব মিলিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতছাড়া হতে পারে ভারতীয় বোর্ড-বিসিসিআইয়ের।
বিপুল অর্থের উৎস বলেই আইপিএল নিয়ে বরাবরই মরিয়া বিসিসিআই। কোভিড মহামারীর কারণে গত বছর আইপিএল পিছিয়ে যায়। পরে ভারতে না করে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তাতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আয় কমে যায় বেশ। এবার তাই ভারতেই টুর্নামেন্ট আয়োজনের চ্যালেঞ্জ নেয় তারা।
শেষ পর্যন্ত সফল হওয়া যায়নি সেই চেষ্টায়। টুর্নামেন্টের জৈব-সুরক্ষা বলয়েও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার স্থগিত করা হয় এবারের আসর।
বিসিসিআইয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে ধারণা দেন সম্ভাব্য লোকসানের।
“এই মৌসুমের মাঝপথে টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ায় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি রুপির মাঝামাঝি কোনো অঙ্কের অর্থ ক্ষতি হবে আমাদের। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে বললে, আমার মনে হয়, ২ হাজার ২০০ কোটি রুপির মতো হবে। সত্যিকারের ক্ষতি আরও বেশি হতে পারে। স্রেফ তাৎক্ষনিক হিসেবেই এই অঙ্ক নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে।”
৫২ দিন ও ৬০ ম্যাচের টুর্নামেন্টে স্থগিত হওয়ার আগে ২৪ দিনে খেলা হয়েছে ২৯টি। সবচেয়ে বড় অঙ্কের অর্থ হাতছাড়া হবে সম্প্রচার স্বত্ব থেকে।
৫ বছরের জন্য স্টার ইন্ডিয়ার সঙ্গে ৫ বছরে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি রুপির চুক্তি ভারতীয় বোর্ডের। প্রতি মৌসুমের জন্য যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৭০ কোটি রুপির মতো। ৬০ ম্যাচের মৌসুমে প্রতিটি ম্যাচের জন্য স্টার ইন্ডিয়া দিচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫৪ কোটি রুপি।
২৯ ম্যাচেই এবারের আসর শেষ হয়ে গেলে স্টার ইন্ডিয়া দেবে ১ হাজার ৫৮০ কোটি রুপির মতো। এখানেই ভারতীয় বোর্ডের হাতছাড়া হবে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি রুপি।
টুর্নামেন্টের টাইটেল স্পন্সর ভিভোর সঙ্গে চুক্তি ৪৪০ কোটি রুপির। এটিও নিশ্চিতভাবে নেমে আসবে অর্ধেকে। সহযোগী অন্যান্য স্পন্সরদের কাছ থেকে প্রাপ্য ১২০ কোটি রুপিও কমে হবে অর্ধেকের মতো। টুকটাক আরও অর্থ তো আছেই।
তবে আপাতত স্থগিত করতে বাধ্য হলেও বিসিসিআই হাল ছাড়ছে না এখনই। বোর্ডের এক শীর্ষ কর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, টুর্নামেন্ট আবার শুরুর সম্ভাব্য সময় ভাবতে শুরু করেছেন তারা।
“ অক্টোবর-নভেম্বরে বিশ্বকাপের পর আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলো করা যায় কিনা, ভেবে দেখছি আমরা। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে, আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও আইপিএলের বাকি ম্যাচ, সব ভারতেই আয়োজন করতে চাই। সেটা না হলে বিকল্প তো সংযুক্ত আরব আমিরাত আছেই।”
বোর্ড কর্তারা অবশ্য এর মধ্যেই আফসোস করতে শুরু করেছেন, গত বছরের মতো দেশের বাইরে কেন আইপিএল আয়োজনের পথে এবার তারা গেলেন না। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিসিসিআইয়ের কোষাধ্যক্ষ অরুণ ধুমাল বলেছেন, এমন পরিস্থিতি তাদের ধারণায় ছিল না।
“ গতবছর দেশকে যে অবস্থার মধ্যে যেতে হয়েছে, আমরা ভেবেছিলাম, আইপিএল এখানে হলে লোকে চাঙা হয়ে উঠবে। আমরা মহড়া দিয়েছি, পরিকল্পনা সাজিয়েছি। আইপিএলের আগে ইংল্যান্ড সিরিজ হয়েছে আহমেদাবাদ, পুনে ও চেন্নাইয়ে। পরিস্থিতি তখন বেশ ভালো ছিল। সবকিছু ভালোভাবে হওয়ায় আমরা ধারণা করেছিলাম, আইপিএলেও মসৃণভাবে এগোবে। কে জানত, এরকম পরিস্থিতি হবে!”
“আমরা যদি জানতাম আগে, তাহলে অবশ্যই দেশের বাইরে আইপিএল আয়োজন করতাম। আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। আমাদের বিশ্বাস ছিল, ভালোভাবেই করতে পারব আমরা।”