লকডাউন
শেষ হওয়ার আগেই রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের
কারণে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত উদ্যোগে কিছুটা বিশৃৃঙ্খলা তৈরি
হয়েছে। গত কয়েক দিন মানুষের চলাচল হয়ে উঠেছিল রীতিমতো বেপরোয়া। কোথাও ছিল
না স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। যে যেভাবে পেরেছে ঢাকামুখী হয়েছে। ফেরিতে
ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। গণপরিবহন না থাকায় ছোট ছোট যানবাহনে মানুষ
যেভাবে গাদাগাদি করে উঠেছে, তাতে সংক্রমণ আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা
দিয়েছে। সরকার শেষ পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিতে বাধ্য হয়। তাতেও
ছিল গাদাগাদি ভিড়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বেপরোয়া চলাচলের
পরিণতি খুবই খারাপ হবে এবং তা দেখতে আমাদের আরো কয়েক দিন অপো করতে হবে।
বাংলাদেশের
প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প বেশ কিছুদিন ধরেই নানা প্রতিকূলতা
মোকাবেলা করছে। বিশ্বের মোট রপ্তানিতে বাংলাদেশের অংশ কিছুটা কমেছে। তারই
ধারাবাহিকতায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে তৃতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে
টপকে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে। তাই এই খাতের উদ্যোক্তারা তাদের কারখানা
খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। এটাই
বাস্তবতা। সরকারও তাদের দাবি মেনে নিয়ে লকডাউন শেষ হওয়ার পাঁচ দিন আগেই
গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখী শিল্প খুলে দিয়েছে। আবার ঢাকামুখী শ্রমিকদের পথের
বিড়ম্বনা দেখে শেষ পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচলেরও অনুমতি দিয়েছে।
করোনা
মোকাবেলায় অনেক দেশই কঠোর লকডাউন দিয়েছিল। এটাও সত্য যে অনেক দেশেই লকডাউনে
তিগ্রস্ত মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। শেষ পর্যন্ত উন্নত দেশগুলো বেশির ভাগ
মানুষকে দ্রুত টিকা কর্মসূচির আওতায় এনে লকডাউন তুলে নিয়েছে। আমাদের একটি
বড় ব্যর্থতা, আমরা এখনো বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারিনি।
মাঝখানে টিকা সংগ্রহের েেত্রও আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম। এখন টিকার পর্যাপ্ত
মজুদ থাকলেও টিকা দেওয়ার েেত্র আমরা অনেকটাই পিছিয়ে আছি। সরকার টিকা
প্রদানের গতি বাড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করছে। ৭ আগস্ট থেকে শুরু হবে বিশেষ
টিকাদান অভিযান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তখন এক সপ্তাহে এক কোটি
মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এটাই কাঙ্তি। অথচ প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত
রবিবার টিকা দেওয়া হয়েছে মাত্র তিন লাখ ছয় হাজার ৩৫০ ডোজ। এর আগে টিকা
প্রদানের সংখ্যা ছিল আরো কম। অন্যদিকে রপ্তানিমুখী শিল্প যেহেতু বন্ধ রাখা
যাবে না, তাই এ খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া
প্রয়োজন ছিল; কিন্তু আমরা সে কাজটিও করিনি।
টিকাদান কর্মসূচিতে আরো গতি
আনতে হবে। যেসব কারখানা বা অফিস খোলা থাকবে সেসব স্থানের পাশাপাশি
গণপরিবহনেও যাতে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলা হয়, তা নিশ্চিত করতে
হবে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। সেখানে সাধারণ শয্যার
পাশাপাশি আইসিইউ শয্যা বাড়াতে হবে। অক্সিজেনসংকট যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা
রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনাযুদ্ধে শিথিলতার পরিণাম হবে ভয়াবহ।