ঢাক ঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে কিশোরের লাশ দাফন করার ঘটনায় আলোচিত কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সেই ভণ্ডপীরকে অবশেষে পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নিজ আস্তানা থেকে দৌলতপুর থানা পুলিশ অভিযুক্ত আব্দুর রহমান ওরফে শামীমকে (৬৫) গ্রেফতার করে। পরের দিন শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নেচে-গেয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কিশোরের লাশ দাফনের সংবাদ প্রকাশিত হলে এ নিয়ে দৌলতপুরে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। শামিমের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা গ্রামের মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে হাক্কানী দরবার শরীফের পক্ষ থেকে খালিদ হাসান সিপাই ধর্ম অবমাননাসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ এনে কথিত ভণ্ড পীর শামীমের বিরুদ্ধে গত ২৯ জুন কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে গত বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে দৌলতপুর থানা। মামলার একদিন পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাকে নিজ আস্তানা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
মামলার বাদী খালিদ হাসান সিপাই জানান, প্রত্যেকের পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো ধর্ম পালন করার স্বাধীনতা রয়েছে। তাই বলে ধর্মকে বিকৃত করে সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির করার অধিকার কারও নেই। তাই ইসলাম ধর্মকে বিকৃত করার জন্য একজন মুসলমান হিসেবে নিজ উদ্যোগে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, শামীমের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ছাড়াও মানুষকে জিম্মি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদাবাজিসহ মামলার এজাহারে আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের মহসিন আলীর কিশোর ছেলে আঁখি (১৭) ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। গত ১৬ মে রাতে ওই গ্রামের অভিযুক্ত শামীম ও তার ভক্তরা ঢাকঢোল বাজিয়ে আনন্দ উৎসব করে তাকে দাফন করেন। দাফনের আগে ধর্মীয় রীতি অনুসারে আঁখির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ইসলাম ধর্মের প্রথা ভেঙে কালিমাকে বিকৃতি করে নিজের গড়া তরিকা মোতাবেক ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে উৎসবমুখর আনুষ্ঠানিকতায় আঁখির লাশ দাফন করেন ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীম। যেখানে তার অন্তত দুই শতাধিক ভক্ত-অনুসারী উপস্থিত ছিলেন।