কুমিল্লার
কাগজ রিপোর্ট।। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ১৭ নাম্বার
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মো: সোহেলকে গুলি করে হত্যা করেছে একদল সন্ত্রাসী।
সন্ত্রাসীরা তার কার্যালয়ে পাশে সিমেন্টের দোকানে ঢুকে তাকে শুইয়ে মাথায় ও
বুকে নয়টি গুলি করে। এই সশস্ত্র হামলার সময় গুলিতে নিহত হয়েছেন
কাউন্সিলরের সহযোগী ১৭ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের সভাপতি হরিপদ সাহাও।
সন্ত্রাসীদের গুলিতে এসময় আরো ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। সোমবার বিকাল
৩ টা ৪০মিনিটের কুমিল্লা শহরের পাথুরিয়াপাড়ায় নিজ কার্যালয়ের সামনে
থ্রিস্টার সিমেন্টের দোকানে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় কাউন্সিলর
সোহেলকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে
অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান এবং লাইফ সাপোর্টে রাখে। বিকাল ৫টা থেকেই
কাউন্সিলর সৈয়দ মো: সোহেল মারা গেছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লেও কুমিল্লা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ রাত সাড়ে ৮টায় এ
তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই সাথে তিনি নিশ্চিত করেছেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ড
শ্রমিকলীগের সভাপতি ও রমনী মোহন সাহার ছেলে হরিপদ সাহার মৃত্যুর তথ্যও।
এ
ঘটনায় এক পথচারীসহ আরো ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এরা হলেন আবদুল জলিলের ছেলে
মাজেদুল হক বাদল, ফজলুল করিমের এডভোকেট সোহেল চৌধুরী, খোরশেদ মিয়ার ছেলে
আউয়াল হোসেন, দৌলত মিয়ার ছেলে জুয়েল।
কাউন্সিলর মো. সোহেল সুজানগর
এলাকার শাহজাহান মিয়ার ছেলে। ২০১২ ও ২০১৭ সালে তিনি কাউন্সিলর পদে
নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি প্যানেল মেয়র ছিলেন। তিনি কুমিল্লা
মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে
আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১০/১২ জনের একদল সন্ত্রাসী হেলমেট ও মাস্ক
পড়ে এসে কাউন্সিলর অফিসের সামনে গোলাগুলি শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো
জানান, কাউন্সিলর অফিসের সাথে থাকা থ্রিস্টার সিমেন্টের দোকানে বসে ৫/৬
জনের সাথে স্থানীয় সমস্যা নিয়ে কথা বলছিলেন কাউন্সিলর সোহেল। এ পর্যায়ে
তারা প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর সৈয়দ মো: সোহেলকে শুইয়ে ১০/১২টি গুলি করে
দোকানের শার্টার নামিয়ে চলে যায়। তাদের এলোপাথারি গুলিতে আরো ৫ জন
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা এ সময় অন্তত দুই শতাধিক রাউন্ড গুলি
ছুড়ে এবং ককটেল ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা বৌ বাজার এলাকা দিয়ে
যাওয়ার সময় ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতের ভাংচুর চালায়।
ঘটনার খবর দ্রুত শহরের ছড়িয়ে পড়লে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালে তার সমর্থক নেতাকর্মীরা ভীড় করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায়
অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, কাউন্সিলর
সোহেলকে মাথায় ও বুকে ৯টি গুলি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
তাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে। লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। রাত সাড়ে ৮টায় লাইফ
সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়। কাউন্সিলর সোহেল ছাড়াও আরো একজন আইসিইউতে মারা
গেছেন। তার নাম হরিপদ সাহা।
কাউন্সিলর সোহেলকে মৃত ঘোষণার পর ঘটনাস্থল
পরিদর্শনে জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। তিনি জানান, হামলাকারীদের ধরতে
পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। খুব শীঘ্রই হত্যাকারীদের ধরা হবে। কী কারণে এ
ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতরা যেই হোক দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা
হবে।
কুমিল্লা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহান সরকার জানান,
১৭ নম্বর ওয়ার্ডে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলকে সিআইডির
ক্রাইম সিন হিসেবে ঘিরে রাখা হয়েছে। এছাড়া কিছু সিটি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ
করা হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে হাতে পাওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে
হামলাকারীদের সবাই মুখোশ পরিহিত। তারপরও হামলকারীদের সনাক্তে আরও
পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
অপরদিকে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি
আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, কুমিল্লায় গুলির ঘটনায় একজন কাউন্সিলরসহ
দুইজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এলাকায় পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা
হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।