নিজস্ব
প্রতিবেদক: কুমিল্লা ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলের বুকে ও
মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মামলার আসামি শাহআলম গুলি করে।
এ সময় কাউন্সিলরের বুকে লাথি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে তার সহযোগী জেল
সোহেল। অস্ত্রধারীরা কালো পোশাকে র্যাব পরিচয়ে কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত
অফিসে ঢুকে এ ঘটনা ঘটায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত সহকারী মাজেদুল হক বাদল মঙ্গলবার এ তথ্য
জানান। এদিকে সোমবার রাত ১১টা পর্যন্ত সুজানগর, বউবাজার, নবগ্রাম,
পাথুরিয়াপাড়া এলাকার দোকানপাট ও বিভিন্ন বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও
অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হামলা ও ভাঙচুরের সময় আতঙ্কে সুজানগর এলাকার
বাসিন্দা বাখরাবাদ গ্যাসের কর্মচারী শাহীনুর ইসলাম হার্টঅ্যাটাকে রাত সাড়ে
১১টার দিকে মারা যান বলে জানান তার ছেলে মো. সানজিদ ও শামীম। মঙ্গলবার বেলা
২টার দিকে কাউন্সিলর সোহেলের জানাজা এবং আওয়ামী লীগ নেতা হরিপদ সাহার
শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন
রাখা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বিকালে বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বোমা উদ্ধার
করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে শহরের ডক্টর রহিমের গলির
বাউন্ডারি ওয়ালের পাশে পড়ে থাকা তিনটি ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে এইসব
অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে- দুইটি এলজি, একটি পাইপগান,
২০-২৫টি অবিস্ফোরিত বোমা সদৃশ বস্তু, ১২ রাউন্ড তাজা বুলেট।
বিভিন্ন
সূত্রেমতে, সোমবার বিকাল ৪টার দিকে কালো পোশাক, হেলমেট ও মুখোশ পরিহিত
১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ নগরীর পাথুরিয়াপাড়া এলাকায় কাউন্সিলর সৈয়দ
মো. সোহেলের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এ
সময় ওই কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত সহকারী মাজেদুল হক
বাদলও অন্যদের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হন। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন বাদল মঙ্গলবার জানান, র্যাব পরিচয়ে সন্ত্রাসীরা দুটি ভাগে
বিভক্ত হয়ে একটি গ্রুপ মাদক ব্যবসায়ী শাহআলমের নেতৃত্বে কার্যালয়ে ঢুকে
পড়ে। ওই শাহআলমই প্রথমে কাউন্সিলরের বুকে ও মাথায় গুলি চালায়। এ সময়
কাউন্সিলর অচেতন হয়ে লুটিয়ে পড়লে তার সহযোগী জেল সোহেল লাথি মেরে মৃত্যু
নিশ্চিত করে এবং বলে মিশন কমপ্লিট। সন্ত্রাসীরা ওই কার্যালয়ে অবস্থানরত
অন্যদের ওপরও এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। হাসপাতালে নেয়ার পর কাউন্সিলর সোহেল ও
হরিপদ সাহাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বাদল আরও বলেন, গত কয়েকদিন আগে সন্ত্রাসী
শাহআলমের এক সহযোগী সাব্বির এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে ধাওয়ার মুখে পড়ে। এ
সময় শাহ আলম ফাঁকা গুলি ছুড়ে সাব্বিরকে ছাড়িয়ে নেয়। এ বিষয়ে কাউন্সিলর
সোহেল তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললে ক্ষিপ্ত হয় শাহ
আলম। এর জেরেই তার নেতৃত্বে এ নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারে বলে বাদলের ধারণা।
কাউন্সিলর
সোহেল ও হরিপদ সাহাকে যেখানে গুলি করা হয় ওই অফিসের সামনে রয়েছে ৩টি
সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশ ঘটনার পর রাতেই এসব সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ
করেছে। এসব ফুটেজ থেকে ঘাতকদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ
জানিয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ এখনো মন্তব্য না করলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকার
শাহআলম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কাউন্সিলর সোহেলের বিরোধ চলছিল। শাহ আলম
পেশায় মাদক ব্যবসায়ী। সোহেল কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে শাহআলমের মাদক ব্যবসায়
বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়াও শাহআলম গ্রুপের সঙ্গে কাউন্সিলর সোহেলের বিভিন্ন
কারণে বিরোধ চলছিল। সোমবার কালো মুখোশ পরে শাহআলমসহ ৮/১০ জন সশস্ত্র
ক্যাডার কিলিং মিশনে অংশ নেয়ার খবর স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেলেও পুলিশ
এখনো কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ক্যাডারদের পরিচয় নিশ্চিত করেনি। এদিকে দুইটি
হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর সোমবার রাতে নগরীর সুজানগরে ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ
করা হয়। এলাকাবাসী জানান, আমাদের মালামাল গেছে তাতে ক্ষতি নেই, এখন জীবনের
নিরাপত্তা চাই। এসব এলাকার অন্তত শতাধিক বাড়িঘরে ভাঙচুরের ক্ষতচিহ্ন দেখা
গেছে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহার লাশ তাদের
বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরে নগরীর টিক্কারচর শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা
হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও এলাকাবাসী
তার বাড়িতে ভিড় জমান। পরে বাদ জোহর পাথুরিয়াপাড়া মসজিদ-ঈদগাহ মাঠে তার
জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শত শত মানুষ অংশ নেন। জানাজায় বক্তব্য রাখেন
কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
আরফানুল হক রিফাত, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট আমিনুল ইসলাম
টুটুল, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ শহীদ প্রমুখ। পরে তার
লাশ মসজিদের পাশে কবরস্থানে দাফন করা হয়। কাউন্সিলর সোহেল ও আওয়ামী লীগ
নেতা হরিপদ সাহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত থানায় মামলা
হয়নি।
কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, গত দুই মেয়াদে ১৭ নং
ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসেবে সোহেল দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি সিটি
করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ছিলেন। আমার জানামতে সোহেল নিয়মিত নামাজ আদায়
করতেন এবং যেকোনো ভালো কাজে সবার আগে এগিয়ে যেতেন।
এদিকে কাউন্সিলরের
মৃত্যুতে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজ
করে ছুটি ঘোষণা করে। কুসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালোব্যাজ ধারণ করে শোক
পালন করে।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা
তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা
চলছে। ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।