তানভীর দিপু:
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ সোহেল ও
তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে হত্যার ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটারের মধ্যে একটি
বাড়ি থেকে তিনটি ব্যাগে থাকা দুটি এলজি, একটি পাইপগান, ১২ রাউন্ডগুলি,
২০টি হাতবোমা, একটি লোহার রড, দুটি কালো রংয়ের টি শার্ট উদ্ধার করেছে
পুলিশ। গতকাল বিকালে নগরীর ১৬ নং ওয়ার্ডের রহিম ডাক্তারের বাসার গলির বেলাল
আহম্মেদ এর টিনশেড বিল্ডিং তাজেহা লজ ও রাস্তার পাশের সীমানা প্রাচীরের
ফাঁকা জায়গা থেকে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও ব্যাগ-শার্ট উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ
জানায়, ওই বাসা থেকে নিগার সুলতানা নামে এক নারী তার বাসায় সন্দেহজনক
অবস্থায় ব্যাগ পরে রয়েছে বলে জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল রে জানায়। পরে
কুমিল্লা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহান সরকারের নেতৃত্বে
পুলিশের একটি টীম গিয়ে অস্ত্র ও বোমাসহ ব্যাগ পাওয়া জায়গাটি ক্রাইম সিন
হিসেবে ঘেরাও করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহান সরকার জানান, প্রাথমিক
ভাবে ধারণা করা হচ্ছে গত সোমবার বিকালে সুজানগর এলাকায় কাউন্সিলর সোহেল এবং
তার সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যার ঘটনায় এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তারপরও
আরো পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে। ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ এসে এসব আগ্নেয়াস্ত্র
উদ্ধার করে। তিনি আরো জানান, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জায়গাটি অন্য আরেক
ওয়ার্ডে হলেও তা খুনের ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক মাত্র আধা কিলো মিটার দূরে।
যেসব বোমা গুলো পাওয়া গেছে এগুলো পরীক্ষা ও নিস্ক্রিয় করার জন্য বোম্ব
ডিস্পোসাল টীমকে জানানো হয়েছে।
জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে ব্যাগ
পরে থাকার ঘটনা পুলিশকে জানানো নিগার সুলতানা জানান, তিনি তাজেহা লজেই
থাকেন। সকালে বাড়ি থেকে বের হবার সময় ব্যাগটি আবর্জনা ভেবে পাত্তা দেয়া
হয়নি। পরে দুপুরে বাসায় ফিরেও ব্যাগটি ওই জায়গায় দেখে তার সন্দেহ জাগে। পরে
বিপজ্জনক কিছু হতে পারে ভেবে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে জানান তিনি।
গতকাল
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংরাইশের তাজেহা লজে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ
বাড়িটিকে ঘিরে রেখেছে। যে জায়গায় অস্ত্র পাওয়া গেছে ওই জায়গাটিকে ক্রাইসিন
হিসেবে নিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
এদিকে কাউন্সিলর ও তার সহযোগীতে
প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনা তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক
সংস্থা। ঘটনার পর পরই পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও নেমেছে ছায়া তদন্তে।
ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে জব্দ করা সিসিটিভির ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে চলছে
পর্যবেক্ষণ। জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, মামলার আগেই ঘটনাটিকে
সুচারুভাবে তদন্ত করছে পুলিশের একাধিক দল। তারা বিভিন্ন আলামত জব্দ করার
পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যসংগ্রহের মাধ্যমে দ্রুত তদন্ত কাজ চালিয়ে
যাচ্ছে। দ্রুত আসামী শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।
এছাড়াও ঢাকা থেকে একটি বিশেষ দল সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
উল্লেখ্য,
গত সোমবার কুমিল্লা নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের সুজানগরে কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ
সোহেলের নিজ কার্যালয়ে ঢুকে দুর্বৃত্তরা এলোপাথারি গুলি চালিয়ে হত্যা করে
কাউন্সিলর সোহেল এবং তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়
আরো অন্তত ৪ জন। মোটর সাইলে এসে হামলার পর দুর্বৃত্তদের ১০/১৫ জনের দলটি
এলাকায় ককটেল ও ফাঁকা গুলি করে আতংক ছড়িয়ে পালিয়ে যায়। যাবার আগে গুলিবিদ্ধ
সোহেল ও তার সহাযোগীদের ভেতরে রেখে অফিসের শাটার লাগিয়ে দেয় বলে জানায়
প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে স্থানীয়রা এসে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। মেডিকেলে নেয়ার প্রায় ৪ ঘন্টা
পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পরিচালক জানান, কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহাযোগী
মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকী চিকিৎসাধীন ৪ জন আশংকামুক্ত। তিনি আরো জানান,
কাউন্সিলর সোহেলের দেহে ৯টি গুলিবিদ্ধ হয় এবং হরিপদ সাহার পেটে একটি গুলি
বিদ্ধ হয়ে তারা মৃত্যুবরন করেন।
পরে গতকাল সকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে তাদের ময়নাতদন্ত শেষে বেলা ১১ টায় স্বজনদের কাছে মরদেহ
হস্তান্তর করা। এরপরই হরিপদ সাহার মরদেহ নিয়ে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্য
শেষ করে তার স্বজনেরা। বাদ যোহর কুমিল্লা পাথুরিয়া পাড়া ঈদগাহ মাঠে জানাজা
শেষে পাশেই কবরস্থানে দাফন করা হয় কাউন্সিলর সোহেলকে। জানাজার নামাজ পড়ান
কাউন্সিলর সোহেলের ছেলে সৈয়দ মোঃ হাফিজুল ইসলাম নাদিম। নামাজে কুমিল্লার
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ হাজারো শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহন করেন।