তানভীর দিপু:
কাউন্সিলর
সোহেল ও হরিপদ সাহা হত্যা মামলায় ‘অজ্ঞাত’ আসামিরা কারা, তাদেরও খুঁজে বের
করতে জোরালো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। কুমিল্লায় ১৭নং ওয়ার্ড
কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মোঃ সোহেল ও ওয়ার্ড আওয়ামী
লীগের সদস্য হরিপদ সাহা হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় আসামিদের ছাড়াও ‘আজ্ঞাত’
আসামি কারা তাদেরকেও খুঁজে পাওয়া গেলে তাহলেই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য
সম্পূর্নভাবে বেরিয়ে আসবে বরে মনে করেন তারা।
এদিকে পুলিশের হাতে
গ্রেপ্তার মামলার নয় নম্বর আসামি মাসুমকে আদালতে উপস্থাপন করে ৭দিনের
রিমান্ড চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক
কায়সার হামিদ। তিনি জানান, মাসুমকে কুমিল্লা সিনিয়র জুডিশিয়াল
ম্যাজিষ্ট্রেট শামসুর রহমানের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এসময় তার ৭দিনের
রিমান্ড চাওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। তবে শনিবার রিমান্ড শুনানির বিষয়টি
নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গত ২২ নভেম্বর বিকালে প্রকাশ্যে গুলি করে কাউন্সিলর
সোহেল এবং হরিপদ সাহার উপর হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আরো ৪ জন।
এই হামলায় কি শুধু মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিরাই জড়িত নাকি আরো কারা
ইন্ধন, পরিকল্পনা কিংবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে সে বিষয়গুলোকেও
গুরুত্ব দিয়ে ওই ‘অজ্ঞাত’ আসামিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে
জানিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
সোহেল কাউন্সিলরের
ভাই সৈয়দ মোঃ রুমন বাদী হয়ে মামলায় ১১ জনে নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরো ১০
জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নামীয়
আসামিদের সবার কি দায় ছিলো। এছাড়া মামলায় উল্লেখ করা হয়, মাদক ব্যবসায়ে
বাঁধা দেয়া এই জোড়া খুনের ঘটনার মূল কারণ। মাদক ছাড়াও আর কোন বিষয় এই
হত্যাকান্ডের পেছনে কাজ করেছে কি না সেগুলোও পর্যালোচনা করে চলছে মামলার
তদন্ত।
মামলার বাদী সৈয়দ মোঃ রুমন জানান, যাদের নাম উল্লেখ করে
আসামি করা হয়েছে তাদের বাইরেও অনেকেই এই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার সম্ভাবনা
রয়েছে। দুই একজন আসামিকে খুব ভালো ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তাদের নাম বেরিয়ে
আসবে। আর যারা এই কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছে তারা অস্ত্র কোথা থেকে পেলো বা
তাদেরকে এই কাজ করার সাহস বা পালিয়ে যেতে কে সহযোগিতা করলো- এসব বিষয় মাথায়
রেখেই অজ্ঞাত হিসেবে আরো আসামি দেয়া হয়েছে।
‘অজ্ঞাত’ আসামিদের
বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক কায়সার হামিদ জানান, সব
আসামিদেরকেই সমান গুরুত্বের সাথে নিয়ে মামলার তদন্ত করা হচ্ছে। নাম উল্লেখ
ছাড়া আরো কারা এই ঘটনায় জড়িত তারা যদি বেরিয়ে আসে- এজন্যই অজ্ঞাত হিসেবে
আরো আসামি খোঁজা হচ্ছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই প্রকাশ সম্ভব
না। তবে সব আসামিকেই সমান গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
ঘটনার
পর থেকেই ছায়া তদন্তের মাধ্যমে আসামি ধরা এবং হত্যাকান্ডের কারণ
অনুসন্ধানে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে র্যাব। কুমিল্লা র্যাব এর কোম্পানি
কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, কিছু এজাহারনামীয় আসামির নাম তো
আমরা পেয়েছি। এর পাশাপাশি আর কেউ আছে কি না এখন এটাই গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করার পরই আমরা জানতে পারবো এই খুনের মূল কারন কি
ছিলো এবং যারা খুনী তারা আসলে কি প্রকৃতির ছিলো।
এই জোড়া খুনের ঘটনায়
যে দুই জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এর মধ্যে ৪ নম্বর আসামি সুমন
হাসপাতালে রয়েছে। এছাড়া ৯ নম্বর আসামি রয়েছে পুলিশের হেফাজতে। তাকে
জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
হামলায় আহত এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ননা এবং মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামি শাহ আলম ও জেল সোহেল এই হামলার নেতৃত্ব দেয়।
মুসল্লিদের মানববন্ধন:
এদিকে
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়ার ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর
সৈয়দ মো. সোহেল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে শুক্রবার জুমার
নামাজের পর পাথুরিয়াপাড়া শাহে পানুয়া জামে মসজিদের মুসল্লিরা নামাজ শেষে
পাথুরিয়াপাড়া রথ রোডে মানববন্ধন করেন। এতে মুসল্লিরা সোহেল হত্যাকারীদের
গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। সোহেল ওই মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন।
হামদ, নাত ও গজল গাইতেন।