দেশে
আবারও দ্রুত বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত
পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় তিন হাজার মানুষ। নমুনা পরীা
বিবেচনায় সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ১২ শতাংশ, যা তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ৯
শতাংশের কাছাকাছি। সেই হিসাবে এক দিনে সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে আবার করোনার সামাজিক সংক্রমণ শুরু
হয়ে গেছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে আবারও দেশে
মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন
আগের সব ধরনের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়। তাই বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের বিস্তারও
ঘটছে অনেক দ্রুত। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে
করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সেখানে এক দিনে
আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই লাখ, যেখানে দুই সপ্তাহ আগেও
আক্রান্তের দৈনিক সংখ্যা ছিল সাত-আট হাজার। এই অবস্থায় বাংলাদেশও প্রবল
ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেই বলেছেন, দেশে এখন ১৫ থেকে ২০
শতাংশ করোনা রোগীই ওমিক্রনে আক্রান্ত। হাসপাতালগুলোতেও আবার করোনা রোগীর
চাপ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে এবং
বৃহস্পতিবার থেকেই তা কার্যকর হয়েছে। এসব বিধি-নিষেধের মধ্যে রয়েছে
অফিস-আদালত, দোকান, শপিং মল, বাজারসহ জনসমাগমের স্থানগুলোতে
বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ ও আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য টিকা সনদ প্রদর্শন
করতে হবে। ট্রেন, বাস, লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে হবে। উন্মুক্ত
স্থানে সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা
না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। আগেও দেখা গেছে এবং এখনো দেখা যাচ্ছে,
এসব বিধি-নিষেধ কিংবা সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও মানুষের মধ্যে
প্রবল অনীহা বা উদাসীনতা রয়েছে। এ েেত্র এসব বিধি-নিষেধ কার্যকর করার জন্য
মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।
সরকারের
আরোপিত বিধি-নিষেধের যৌক্তিকতা নিয়েও বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন,
অফিস-আদালত, দোকানপাট, কারখানা সব কিছু খোলা রেখে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী
পরিবহনের নির্দেশ দেওয়া সঠিক নয়। কারণ স্বাভাবিক সময়েই গণপরিবহনের
স্বল্পতার কারণে মানুষকে বাদুড়ঝোলা হয়ে চলতে হয়। এখন যাত্রীসংখ্যা অর্ধেক
করা হলে মানুষ চলাচল করবে কিভাবে? আবার যাত্রী অর্ধেক ও ভাড়া না বাড়ানোয়
অনেক বাস মালিক রাস্তায় বাস নামাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সে েেত্র
চলাচলের সংকট আরো বাড়বে। মানুষ বাধ্য হবে অধিক ভাড়া দিয়ে ছোট ছোট যানবাহনে
গাদাগাদি করে চলাচল করতে। এতে মানুষের খরচ ও ভোগান্তি দুটিই বাড়বে।
পাশাপাশি সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়বে। তাই তাঁরা মনে করেন এই সিদ্ধান্তটি
পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
করোনা মহামারির বিস্তার ঠেকাতে কঠোর
বিধি-নিষেধের বিকল্প নেই। কিন্তু তা যাতে মানুষের ব্যাপক দুর্ভোগের কারণ
না হয় সেদিকেও ল রাখতে হবে।