করোনা
পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে দ্রুত
সংক্রমণ বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আবার দেখা যাচ্ছে,
হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরা করোনার ডেল্টা ধরনে বেশি আক্রান্ত।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেল্টা ধরনও সক্রিয়।
করোনাভাইরাসের
বিস্তার রোধে দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে
সরকার। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ধেক জনবল নিয়ে চালানোর সিদ্ধান্ত
হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাসহ
পাঁঁচটি জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সামাজিক,
রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি সমাবেশ করা যাবে না।
যারা অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দেবে, তাদের অবশ্যই টিকা সনদ অথবা ২৪ ঘণ্টার
মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে। বাজার, শপিং মল, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড,
লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সব ধরনের জনসমাবেশে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারসহ যথাযথ
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। এসব বিষয় স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা
রক্ষা বাহিনী তদারকি করবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
সরকার
প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্দেশনা দিলেও তা কতটা কার্যকর হবে বা হচ্ছে, তা নিয়ে
সন্দেহ রয়েছে। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর
বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বিধি-নিষেধ কার্যকর হচ্ছে না।
সংক্রমণের হার বেড়ে
যাওয়ায় বইমেলা দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হলেও বাণিজ্য মেলা চলছে। ক্রিকেটের
আসর বিপিএলও শুরু হয়েছে। সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও
পর্যটনকেন্দ্র খোলা রয়েছে।
মৃত্যুর হার এখনো কিছুটা কম হলেও
প্রতিদিনই ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে সংক্রমণ বাড়ছে। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে এরই
মধ্যে ৩৩ শতাংশ শয্যা ভরে গেছে। সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে হাসপাতালে
শয্যাসংকট দেখা দিতে পারে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
করোনা
সংক্রমণ রোধে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই, এ কথা
শুরু থেকেই বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সামাজিক সমাবেশ বন্ধের
কোনো উদ্যোগ নেই। বাস-ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে গাদাগাদি করে চলাচল করছে
যাত্রীরা। সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও জনসমাগম ঘটিয়ে চলছে মেলা ও
সার্কাস। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এসব বন্ধের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা পেতে টিকার চেয়েও
বেশি জরুরি হচ্ছে ব্যক্তিগত সচেতনতা, যেমন—মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে
চলা। টিকা দিলেও স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। অথচ বেশির
ভাগ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে চরমভাবে উদাসীন। সামাজিক দূরত্ব মানা তো
দূরের কথা, মাস্ক পরতেও তাদের অনীহা। তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি রোধ করা
যাবে কিভাবে? মানুষ নিজে সচেতন না হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে
স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আমরা সবাই সচেতন হই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ থাকি, নিরাপদ থাকি।