উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনো লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধায় দ্রুত বাড়ছে পানি।
বগুড়া, সিরাজগঞ্জ হয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। টাঙ্গাইলেও শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ারও অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। এদিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় শুরু হয়েছে ব্যাপক নদীভাঙন। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হাজারেরও বেশি বাড়িঘর। ভাঙছে ফসলি জমিও। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ এলাকায় চুলা জ্বালানোর মতো অবস্থা নেই। দোকানপাট, হাটবাজার বন্ধ থাকায় শুকনা খাবারও জোগাড় করা যাচ্ছে না। বিতরণ করা ত্রাণের পরিমাণ এতটাই নগণ্য যে অনেকেই তা পায়নি। বিশেষ করে যারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না, তারা ত্রাণও সংগ্রহ করতে পারছে না। ফলে বহু মানুষকে খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। বন্যার পানিতে ডুবে, ভূমিধসে, বজ্রপাতে কিংবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এ পর্যন্ত ২৮ জন মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কুড়িগ্রামে ধরলার পানি কিছুটা কমলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দ্রুত বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রের পানি। মঙ্গলবার চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। লালমনিরহাটেও বিভিন্ন নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গাইবান্ধার সব কটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বগুড়ায়ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় যমুনার পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ২০ সেন্টিমিটার এবং আগের ছয় দিনে এই পয়েন্টে পদ্মার পানি বেড়েছে ১৩৭ সেন্টিমিটার। পদ্মায় পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্রোতের তীব্রতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফেরিগুলো স্রোতের কারণে স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।
এ বছর এপ্রিল মাসে আগাম বন্যায় হাওরাঞ্চলসহ দেশের অনেক এলাকায় বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জুন মাসে আরেক দফা বন্যায় আউশ ধান, পাটসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপদ্রুত এলাকায় হাজার হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালনকারীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। আরো বড় ক্ষতি হয়েছে অবকাঠামোর। বহু বাড়িঘর ধসে গেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কেবল সুনামগঞ্জ জেলায় দুই হাজার ২০০ কিলোমিটার সড়ক ভয়াবহ রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধারণা করা হয়, সারা দেশে বন্যার ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশে অন্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে ক্ষতি করে তার চেয়ে অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতি করে বন্যা। আর বন্যার এমন তীব্রতার প্রধান কারণ নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। তাই বন্যার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকার হিসেবে খননের মাধ্যমে নদীগুলোর নাব্যতা বাড়াতে হবে। তার আগে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে দুর্গত মানুষের জীবন রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।