মধ্য জুন থেকে দেশে আবারও বাড়তে
শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। শুরুতে এই বৃদ্ধি ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঢাকার বাইরেও সংক্রমণ দ্রুত
বাড়ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার দিক থেকে ঢাকার পরই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের
স্থান, সেখানে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত
হয়েছে ২০২ জন।
এরপর রয়েছে খুলনা (৯৯ জন), রাজশাহী (৬৯ জন), বরিশাল (৪৪
জন) ও রংপুর (৪১ জন)। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষ
ঢাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে ঢাকার বাইরে সংক্রমণ
বৃদ্ধির সম্পর্ক থাকতে পারে। চলাচলের সময় বেশির ভাগ মানুষই মাস্ক পরাসহ
অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানে না। এখন ফিরতি যাত্রা চলছে। এ ক্ষেত্রেও
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সারা বিশ্বেই নতুন করে বাড়ছে
করোনা সংক্রমণ। বিশ্বে গত সপ্তাহে ৫৭ লাখ মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত
হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের ছয় গুণ। কোনো কোনো দেশে একে সপ্তম দফা বা সপ্তম
ঢেউ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
(ডাব্লিউএইচও) মহামারি ফের বর্ধিত কলেবরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটি বলছে, ভাইরাসটি প্রতিনিয়ত ধরন বা রূপ বদলাচ্ছে এবং চতুর আচরণ
করছে। এর বিরুদ্ধে গৃহীত প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে
ভাইরাসের জন্য সহায়ক হচ্ছে মানুষের মাস্ক না পরা এবং সামাজিক দূরত্বসহ
অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি না মানার ক্ষতিকর আচরণ। বাংলাদেশেও এই ক্ষতিকর
আচরণই সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। হাট-বাজার, অফিস-আদালত, জনসমাগমের
স্থানগুলো কিংবা গণপরিবহনে বেশির ভাগ মানুষকেই দেখা যায় মাস্ক পরছে না।
দূরত্ব রক্ষা কিংবা বারবার হাত ধোয়ার মতো অভ্যাসগুলো দেখাই যায় না।
করোনাভাইরাসের
নতুন ঢেউয়ের পাশাপাশি দেশে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব।
প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ১৫ দিনে ৫২১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত
হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আগের মাসে অর্থাৎ জুনে মোট ৭৩৭ জন হাসপাতালে
ভর্তি হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরো
দ্রুত বাড়তে পারে। এখানেও কি আমাদের যথেষ্ট সচেতনতা আছে? ডেঙ্গুর বাহক এডিস
মশা সাধারণত স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে বা প্রজনন করে। দেখা যায়, পরিত্যক্ত
ভাণ্ড, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার বা অনেক পরিত্যক্ত জিনিস যেখানে-সেখানে
ফেলে রাখা হয়। সেগুলোতে বৃষ্টির পানি জমা হয় এবং এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ঘটে।
অনেকে ঘরে বা বারান্দায় ছোট ছোট পাত্র বা ফুলের টবে পানি জমিয়ে রাখে।
তাতেও এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারে।
আমরা নিজেরা যদি নিজেদের রক্ষায়
উদ্যোগী না হই, তাহলে টিকা বা অন্য কোনো কিছুই আমাদের রক্ষা করতে পারবে না।
উন্নত দেশগুলোতে প্রায় শতভাগ টিকা নিশ্চিত করার পরও করোনা বৃদ্ধি রোধ করা
যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যক্তিগত সচেতনতা বাড়াতে হবে। একইভাবে
সচেতনতা বাড়াতে হবে ডেঙ্গু প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও।