
সড়ক
দুর্ঘটনা রীতিমতো উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনার
সংখ্যা। ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে
আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ট্রেন দুর্ঘটনা।
রেলপথেও লেভেলক্রসিংগুলোতে প্রায়ই ঘটছে
দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। শুক্রবার এমনই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। উপজেলার পূর্ব খৈয়াছড়া গ্রামে থাকা ঝরনা দেখে দুপুর
১টার দিকে ফিরে আসছিলেন হাটহাজারী থেকে যাওয়া কিছু শিক্ষার্থী। তাঁদের বহন
করা মাইক্রোবাসটি ঝরনার কাছেই একটি লেভেলক্রসিং পার হচ্ছিল। এ সময় মহানগর
প্রভাতি ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। চালক, হেলপারসহ
মাইক্রোবাসটিতে ছিলেন ১৮ জন। এর মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়। বাকি সাতজনকে
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনজনের
অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সাম্প্রতিক সময়ে রেলপথে,
বিশেষ করে লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গত সপ্তাহে
গাজীপুরের শ্রীপুরে পোশাক কারখানার শ্রমিক বহনকারী একটি বাস ও ট্রেনের
মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচ শ্রমিক নিহত এবং ১০ জন আহত হন। এক হিসাবে দেখা
যায়, শুধু চলতি মাসেই লেভেলক্রসিংয়ে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ২৮
জনের মৃত্যু হয়েছে। অরক্ষিত রেলপথ, অবৈধ লেভেলক্রসিং, বৈধ লেভেলক্রসিংয়ে
গেটম্যানের অভাব এবং চলাচলকারীদের অসচেতনতাই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ।
রেলপথে এমন বহু দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলো মানুষের অনুভূতিকে ব্যাপকভাবে নাড়া
দেয়। তেমন একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়
লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল একটি মাইক্রোবাস। আর
তাতে বর-কনেসহ নিহত হয়েছিলেন ১১ জন।
মিরসরাইয়ের দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে
পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ঘটনার
সময় গেটবার নামানো ছিল। মাইক্রোবাসের চালক গেটবার তুলে পার হওয়ার চেষ্টা
করলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনও বলেছেন, তাঁর নিষেধ না শুনে
চালক লাইনের ওপর চলে এসেছিল। স্থানীয়দের কেউ কেউ বলেছেন, সে সময় গেট খোলা
ছিল এবং গেটম্যান সেখানে ছিল না। পুলিশ গেটম্যানকে আটক করেছে। রেলওয়ের পক্ষ
থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে
রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে রিপোর্ট লেভেলক্রসিংয়ের পরিস্থিতি
বদলাতে পারবে কি?
জানা যায়, সারা দেশে লেভেলক্রসিং রয়েছে তিন হাজার
৩৯৮টি। এর মধ্যে এক হাজার ৩৬১টিই অবৈধ। এগুলোতে গেটম্যান তো নেই-ই, অনেক
বৈধ ক্রসিংয়েও গেটম্যান নেই। তার ওপর বাস্তব কারণেই সারা দেশে স্থানীয়
সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), ইউনিয়ন পরিষদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সিটি
করপোরেশন, পৌরসভাসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ নতুন নতুন রাস্তা তৈরি করছে। নতুন
নতুন লেভেলক্রসিং তৈরি হচ্ছে। সেসব জায়গায় দুর্ঘটনা রোধের ব্যবস্থা কিভাবে
করা হবে তা নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো পরিকল্পনার কথা জানা যায় না।
জনসাধারণের
চলাচল সুগম করার জন্য আমাদের সড়ক ও রেলপথ আরো প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রয়োজন
চলাচলের নিরাপত্তা। আমরা আশা করি, লেভেলক্রসিংয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার
ক্ষেত্রে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।