রাজধানীতে
চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মোটা
চালের মধ্যে ব্রি-২৮ বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। আর চিকন চালের মধ্যে
নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা কেজিতে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে
জানা যায়, চার দিনের ব্যবধানে চালের দাম পাইকারিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা
পর্যন্ত বেড়েছে।
আর বাজারভেদে খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে পাঁচ থেকে ১৫ টাকা
পর্যন্ত। শুধু চাল নয়, দাম বেড়েছে মাছ, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায়
প্রতিটি খাদ্যপণ্যের।
বোরো উৎপাদনের ভরা মৌসুমেও গত মে মাস থেকেই চালের
বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে। চালের বাজার
স্থিতিশীল রাখতে জুন মাসে সরকার শুল্ক কমিয়ে ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির সুযোগ
করে দেয়। মোট শুল্ক ৬২.৫ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। চার দফায় ৯ লাখ ১০
হাজার টন চাল আমদানির অনুমতিও দেওয়া হয়। কিন্তু এক মাসেরও বেশি সময়ে চাল
এসেছে পাঁচ হাজার টনেরও কম। ফলে আমদানির কোনো প্রভাব পড়েনি চালের বাজারে।
তখন বাজারে চালের দাম না কমার পেছনে ব্যবসায়ীদের যুক্তি ছিল আন্তর্জাতিক
বাজারে মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া। আর গত কয়েক
দিনে দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে যুক্তি হচ্ছে, তেলের মূল্যবৃদ্ধি। এতে পরিবহন
খরচ বেড়ে গেছে এবং দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু রাজধানী নয়, চাল ব্যবসায়ের
প্রধান কেন্দ্র বা মোকামগুলোতেও চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা
পর্যন্ত। এখানে ব্যবসায়ীদের যুক্তি হচ্ছে, হাটবাজারগুলো থেকে ধান কিনে মিলে
আনতে খরচ বেশি পড়ছে। স্থানীয় বাজারে ধানের দামও কিছুটা বেড়েছে।
শুধু
চাল নয়, বেড়েছে অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামও। তিন দিনের ব্যবধানে খুচরা
পর্যায়ে সব ধরনের মুরগির দাম প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। ডিমের দাম ডজনে
বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। বিভিন্ন সবজির দাম কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ২০ টাকা
পর্যন্ত বেড়েছে। তিন দিনের ব্যবধানে লবণের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি তিন টাকা
এবং চিনির দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। এ ছাড়া আদা, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, শুকনা
মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দামই বাড়তি। এই অবস্থায় সাধারণ
ক্রেতারা রীতিমতো আতঙ্কিত। আয় বাড়ছে না। অথচ জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে,
তাতে পরিবার-পরিজনের মুখে আহার জোগাবেন কিভাবে—এই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন
তাঁরা।
বাজারে এভাবে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কিছু যৌক্তিক কারণ
যেমন আছে, তেমনি সিন্ডিকেটবাজি, মজুদদারিসহ নানা অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগও
আছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে বাজারে হস্তক্ষেপ করার কিংবা দাম নিয়ন্ত্রণে
গৃহীত ব্যবস্থার দুর্বলতাও রয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)
সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ। ট্রাক সেল বা ওপেন মার্কেট সেল বাজারে প্রভাব ফেলতে
পারছে না। কার্ডের মাধ্যমে চাল বিক্রির উদ্যোগটি প্রশংসনীয়, কিন্তু বাজারে
প্রভাব রাখতে হলে এর আওতা আরো বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা
আশা করছি, বাজার সহনীয় রাখতে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে।