আশ্বাস
দিয়ে সহজ-সরল মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানের খবর মাঝেমধ্যেই আসে গণমাধ্যমে। সবার কাছে এসব প্রতিষ্ঠান ‘হায়
হায় কম্পানি’ নামে পরিচিত। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে,
এসএসসি পাস ব্যক্তিদের জন্য ৪০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি, সঙ্গে থাকছে আরো
অনেক সুযোগ-সুবিধা-এমন প্রলোভন দেখিয়ে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে
চাকরির ভুয়া কনফারমেশন লেটারও দেওয়া হতো। চাকরিতে ল্যাপটপ ও মোটরসাইকেল
দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ‘সিকিউরিটি মানি’ হিসেবে নেওয়া হতো টাকা।
এভাবে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় ২৫ হাজার চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র।
এই
চক্রের হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
জানিয়েছে, সাইবার পুলিশ সেন্টারে একটি অভিযোগ আসার পর গত মঙ্গলবার রাজধানীর
আশকোনা এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে
১৪টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন কম্পানির ৬০টি সিম কার্ড, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ
থেকে পাওয়া ৪০টি জাতীয় পরিচয়পত্র, ১৪৮টি বায়োডাটা ও ৩০টির বেশি ভুঁইফোড়
কম্পানি এবং এনজিওর নামে করা নিয়োগপত্র ও স্ট্যাম্প সিল জব্দ করা হয়।
আশ্বাস-প্রলোভন
দিয়ে সহজ-সরল মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানের খবর মাঝেমধ্যেই আসে গণমাধ্যমে। গত শুক্রবারও এ ধরনের একটি খবর
এসেছে কালের কণ্ঠে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বাগেরহাটের শরণখোলার শতাধিক
পোশাক শ্রমিকের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘রূপসা
মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামের একটি ভুয়া মাল্টিপারপাস
কম্পানি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই কম্পানিতে জমা রাখলে শতকরা ২০ টাকা লাভ
দেওয়ার আশ্বাসে অনেকে টাকা জমা রাখে সেখানে। একসময় গ্রাহকরা জানতে পারে
কম্পানিটি ভুয়া। পরে তারা জমাকৃত টাকা ফেরত পেতে অফিসে গেলে কর্মকর্তারা
গড়িমসি শুরু করেন। এরপর হঠাৎই গাঢাকা দেন। এখন তাঁদের অনেকের ফোন বন্ধ, কেউ
কেউ ফোন ধরেন না।
সমাজে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা একের পর এক ঘটেই
চলেছে। সবার কাছে এসব প্রতিষ্ঠান ‘হায় হায় কম্পানি’ নামে পরিচিত। সমবায়
প্রতিষ্ঠানের নামের শেষে ব্যাংক শব্দটি ব্যবহার করে মাল্টিপারপাস কম্পানি
বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা
হচ্ছে। সরকারের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতামূলক অভিযান না থাকায় বেশি
মুনাফার লোভে প্রতারকদের ফাঁদে পা দিচ্ছে মানুষ। চাকরি কিংবা বেশি মুনাফার
লোভ দেখিয়ে মানুষের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে। রাজধানীসহ সারা দেশে এমন
অনেক প্রতিষ্ঠান সমবায় সমিতির নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে
আসছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষও সচেতন হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যেও
সচেতনতার প্রয়োজন আছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকেও তৎপর হতে হবে। খুঁজে
বের করতে হবে এই প্রতারকদের। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উচিত এসব প্রতিষ্ঠান
দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের
প্রতারণামূলক ব্যবসা খুলে বসতে না পারে।