তানভীর দিপু:
কুমিল্লার
বিভিন্ন থানায় দুই মাসে সাড়ে ৫ শ’ মাদক দ্রব্য সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা
হয়েছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি সভা থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গত অক্টোবর মাসে
কুমিল্লায় ২৫২ টি এবং নভেম্বর মাসে ২৫১ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নভেম্বর
মাসে সবচেয়ে বেশি মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায়
৬৬টি। এই থানায় ওই মাসে দায়ের হওয়া ৮৯ টি মামলার মদ্যে ৬৬টিই মাদক মামলা।
এরপরের অবস্থানে ৩৪টি মাদক মামলা দায়ের হয়েছে চৌদ্দগ্রাম থানায়।
কুমিল্লা
জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, মাদকের বিরুদ্ধে চলমান জিরো টলারেন্স
বজায় থাকায় এত বেশি পরিমানে মাদক মামলা দায়ের হয়েছে। অধিক পরিমানে মাদক
উদ্ধার এবং মাদক ব্যবসায়ি গ্রেপ্তার হওয়ায় এই মামলার পরিমান বেড়েছে। যা
মাদকের আগ্রাসন কমিয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ ধর জানান, আমরা যখন যেখানে খবর পাচ্ছি সেখান থেকেই
মাদক উদ্ধারসহ আসামি গ্রেপ্তার করছি। বিজিবি এবং র্যাবও বিভিন্ন সময় মাদক
উদ্ধার এবং আসামি গ্রেপ্তার করে কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের করছে। তবে
পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সব সময় মাদক উদ্ধারের বিষয়ে তৎপর আছে। পুলিশ সুপারের
নির্দেশনায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি
আরো জানান, মাদক ব্যবসায়ারি বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়। সেসব মামলায় জামিনে
বের হয়ে এসে আবারো মাদক ব্যবসা পরিচালনার চেষ্টা করে। তারা যতবারই এই কাজ
করার চেষ্টা করছে পুলিশ তাদের আইনের আওতায় আনছে।
পুলিশ সূত্রে জানা
গেছে, কুমিল্লার বেশ কয়েকটি উপজেলা ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়া সেসব
এলাকা দিয়ে মাদকের পাচারের অপতৎপরতা বেশি। যে কারণে সেসব এলাকায় মাদক জব্দ
এবং মাদকব্যবসায়ি আটক ও গ্রেপ্তারের পরিমান বেশি। সীমান্ত এলাকা থেকে
মাদকসহ চোরাকারবারিদের ধরে তারা থানায় সোপর্দ করে। এছাড়া র্যাব তাদের মাদক
বিরোধী অভিযানে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নানান সময় অভিযান পরিচালনা করে।
সেসব অভিযানে মাদক কারবারিদের আটক করে থানায় মামলা দায়েরের মাধ্যমে তাদের
সোপর্দ করে।
জানা গেছে, নভেম্বর মাসে কুমিল্লায় সদর দক্ষিণ থানায়
মাদকের মামলা হয়েছে ২৬ টি, নাঙ্গলকোট ৪, লাকসামে ৭টি, মনোহরগঞ্জে ৬টি,
বুড়িচংয়ে ২১ টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ২৮ টি, বরুড়ায় ৩টি, চান্দিনায় ২১টি,
দাউদকান্দিতে ৮টি, তিতাসে ৫টি, মেঘনায় ৩টি, হোমনায় মামলা নেই, মুরাদনগরে
৮টি, দেবিদ্বারে ৫টি, বাঙ্গরায় ৩টি এবং লালমাইয়ে ৩টি মামলা দায়ের করা
হয়েছে।
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিজিবির উপাধিনায়ক জানান,
সীমান্ত এলাকা দিয়ে যেন মাদক প্রবেশ না করতে পারে-বিজিবির সদস্যরা সব সময়
সচেষ্ট আছে। পহাড়ার সময় মাদক ব্যবসায়িরা টের পেলে অধিকাংশ সময় তারা মালামাল
ফেলে সীমান্তের ওপারে পালিয়ে যায়। যে কারণে অপরাধীদের সবসময় ধরে ফেলার
সুযোগ পাওয়া যায় না। ফলে আটককৃত মাদক বা অন্যান্য মালামালের উপরই মামলা
দায়ের করতে হয়। সীমান্তে মাদক নির্মূলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
এদিকে
মাদক বিরোধী অভিযানে র্যাবের সচেষ্ট ভূমিকা অব্যাহত থাকার দৃঢ়তা জানিয়ে
কুমিল্লা র্যাব সিপিসি-২ এর অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন,
কুমিল্লার ৫টি উপজেলা ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় এসব এলাকায় মাদক সরবরাহ ও
ব্যবসা পরিচালনার একটি অপতৎপরতা সমব সময়ই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু র্যাবসহ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সংস্থাই মাদকের ব্যাপারে জিরো
টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে চিড়ুনী অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। যেহেতেু মাদক
উদ্ধার এবং গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেশি- তাই মামলাও বেশি। এর একটি ইতিবাচক দিক
হলো যারাই মাদকের সাথে জড়িত তারা যদি সঠিক বিচার ও শাস্তির আওতায় আসে তারা
আর কখনো মাদকের সাথে জড়িত হবে না। আর যারা মামলা ও গ্রেপ্তারের পর আবারো
মাদকের সাথে জড়িত হয় তাদের বিষয়েও আমাদের কাছে নথি জমা থাকে সেব্যাপারেও
আমরা দৃষ্টি রাখি। তবে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় মাদক নির্মূল করা সম্ভব।
গত
মঙ্গলবার কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা
কমিটির সভায় কুমিল্লা মাদক নির্মূল নিয়ে বক্তব্য রাখে বিভিন্ন এলাকার
জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতিনিধিরা। এসময় জনপ্রতিনিধিরা জানান,
মাদক পাচারে ব্যবসায়িরা বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে। সীমান্ত থেকে
ব্রাহ্মণপাড়া-মেঘনা হয়ে মাদক এখন নৌপথে নারায়ণগঞ্জে চলে যায়। এসব বিষয়ে
তারা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আরো কঠোর নজরদারি প্রত্যাশা করেন।