গত
দুই বছরে ইনজুরিসহ নানা কারণে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ছিলেন না তামিম ইকবাল।
তার বদলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটাররাও যে ভালো করেছে, এমনও নয়। ফলে বামহাতি
ওপেনারকে এই ফরম্যাটে ফেরানো নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছিল বিসিবি। তামিম তাতে সাড়া
দিলেও আগামী ছয় মাস টি-টোয়েন্টি খেলবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এই
ঘোষণায় এমন কিছু কথাও বলেছেন, যাতে মনে হচ্ছে দেশের হয়ে আর টি-টোয়েন্টি
নিয়ে ভাবছেন না তিনি!
আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবে কুড়ি
ওভারের বিশ্বকাপ। বিসিবি মূলত এই টুর্নামেন্ট ঘিরেই তামিমকে নিয়ে পরিকল্পনা
সাজাতে চেয়েছিল। কিন্তু তামিম যেভাবে কথা বলেছেন, তাতে অনিশ্চয়তা তৈরি
হয়েছে। চট্টগ্রামে সংবাদ মাধ্যমকে ওয়ানডে অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমি আগামী ছয়
মাস আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি নিয়ে ভাববো না। আশা করি, এই ছয় মাসে তরুণরা এত
ভালো খেলবে যে, আমাকে আর প্রয়োজন পড়বে না। তারপরও ছয় মাস পর যদি ক্রিকেট
বোর্ড, সিলেক্টর বা টিম ম্যানেজমেন্ট যদি মনে করে আমাকে দরকার। আমিও যদি
তৈরি থাকি। তখন আবার বিষয়টা নিয়ে আলাপ হবে। কিন্তু এই ছয় মাস ভাবছি না।’
তামিম
টানা ১৪ বছর সব ফরম্যাটেই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বৃহস্পতিবার এমন
একটি সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। সংবাদ
সম্মেলন শুরুর আগে শক্তপোক্ত তামিমকে বেশ বিমর্ষই দেখা গেলো। শুরুর দিকে
বার দুয়েক মেজাজও হারালেন! অন্য ক্রিকেটাররা যখন টেস্ট ছেড়ে দিয়ে ওয়ানডে ও
টি-টোয়েন্টিতে মনোযোগ দিচ্ছেন। সেখানে তামিম করতে চাইলেন এর উল্টো। যদিও
তামিমের কাছে এর ব্যাখ্যাটা এরকম, ‘অনেক ক্রিকেটারই টি-টোয়েন্টি আগে
ছেড়েছেন। বড় বড় ক্রিকেটাররাও করেছেন। ওয়ানডে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ফরম্যাট,
আমিও খুব উপভোগ করি। টেস্ট ক্রিকেট এমন একটা ফরম্যাট- যখন থেকে ক্রিকেটের
ব্যাট ধরা শুর করেছি। তখন দুটা ইচ্ছে ছিল। এক হচ্ছে বাংলাদেশের হয়ে খেলবো
এবং টেস্ট খেলবো।’
ওয়ানডে নিয়ে কিছু না বললেও তামিম জানালেন, অন্তত আরও ৫
বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলে যেতে চান তিনি, ‘আপনারা জানেন টেস্ট ক্রিকেটের
ভেল্যুটা কেমন। হয়তো এই ফরম্যাটে আমরা খুব শক্তিশালী না। কিন্তু এখানে একটা
সেঞ্চুরি বা ফিফটির ভেল্যু অন্যরকম। টেস্ট আমি যতদিন সম্ভব খেলে যেতে চাই।
আমার বয়স ৩৩। ৩৪-৩৫ এ অনেকের অভিষেক হয়। তারা আরও পাঁচ বছর খেলে। আমার
এখনও চার-পাঁচ বছর আছে ভালো ক্রিকেট খেলার। পারফরম্যান্স ও ফিটনেস ঠিক
থাকলে আরও চার পাঁচ বছর খেলবো।’
আগামী ছয় মাসে এশিয়া কাপ (লিগ পদ্ধতি
চূড়ান্ত হয়নি) ছাড়া বাংলাদেশের ১২টি টোয়েন্টি ম্যাচ আছে। এসব ম্যাচে লিটন
কুমার দাস, নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকারদের কাঁধে থাকবে ইনিংস উদ্বোধনের
গুরুদায়িত্ব। তামিমও আস্থা রাখছেন তাদের ওপর, ‘ওদেরও যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া
দরকার। এক দুই সিরিজে আস্থা হারালে সেটা ভুল। ছয় মাসে ব্যক্তিগতভাবে
নিশ্চিত আমার আর দরকার হবে না। তারপরও বললাম বিশ্বকাপের আগে বোর্ড বা আমি
মনে করলে ফিরবো। তবে এই মুহূর্তে এটা নিয়ে ভাবছি না।’
আরব আমিরাতে
অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের আগে তামিমের স্ট্রাইকরেট নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল।
সেই সমালোচনার পর হুট করেই বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এর আগে
অবশ্য ইনজুরিতে বেশ কিছু ম্যাচও খেলতে পারেননি। কিন্তু তামিম জানলেন বাইরের
কোনও আলোচনা তাকে স্পর্শ করে না, ‘আমি সত্যি কথা মাঠের বাইরে কী আলোচনা
হচ্ছে, এটা নিয়ে ভাবলে খেলাটা কঠিন হয়ে যাবে। আমি কী করেছি, কী করিনি- এটা
নতুন কিছু না। আমি খোলা বইয়ের মতো। এত কিছু ভাবি না। যেটা বললাম সবচেয়ে
বেশি প্রাধান্য টেস্ট ও ওয়ানডে। ওখানেই পুরো ফোকসটা দিতে চাই।’
একদম
শেষে তামিম যা বলেছেন, তাতে এটাই পরিষ্কার নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তের
ব্যাপারে তিনি ভীষণ অনড়, ‘আমি এখন যেটা বলেছি সেটাতেই অনড় থাকবো। বোর্ডকে
অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা তাদের পরিকল্পনা আমাকে ডেকে বলেছে। কিছু বিষয় আমার
ও বোর্ডের মধ্যে কথা হয়েছে। পাপন ভাই, জালাল ভাই, ইনাম ভাই গত কয়েকদিন
আমাকে অনেক সময় দিয়েছে। বোঝার চেষ্টা করেছে আমার জায়গাটা।’