কুমিল্লার তিন পরিবারে শোকের মাতম
সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত
তানভীর দিপু
|
মামুনের বাড়ি মুরাদনগরের মোস্তাপুর গ্রামে। সৌদি আরবে ২২ বছর বয়সী এ যুবকের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে বুধবার সকাল থেকে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ভিড় করতে থাকেন তার বাড়িতে। বাড়িতে দেখা যায়, মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল তেমন কথা বলছেন না। মা মমুাজ বেগম ছেলের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছেন। মোবাইলে ছবি দেখে বুক চাপড়াতে দেখা যায় তাকে। আবদুল আওয়ালের তিন মেয়ে, দুই ছেলের মধ্যে মামুন মিয়া চতুর্থ। ছয় মাস আগে মামুন তার মামা ইয়ার হোসেনের মাধ্যমে সৌদিতে যান। সেখানে হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতেন। নিহত মামুনের মামী তাসলিমা বেগম জানান, মামুন, তার মামা ইয়ার হোসেন এবং মামুনের ভাগ্নে জাহিদুল ইসলাম বাসে করে ওমরাহ করার জন্য মক্কার উদ্দেশে রওনা হন। পথে তারা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। তাসলিমা আরও জানান, মামুন ও স্বজনদের বহন করা বাসটি ব্রেকফেল করে একটি ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পরে এতে আগুন ধরে যায়। মামুন গাড়ি থেকে বের হতে পারেননি; আগুনে পুড়ে তার মৃত্যু হয়। এ দুর্ঘটনায় মামুনের মামা ইয়ার হোসেন ও ভাগ্নে জাহিদ গুরুতর আহত হন। তারা মক্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল জানান, অন্তত ৯ মাস আগে মামুন ভিসার জন্য আবেদন করেন। বয়স কম হওয়ায় সে আবেদন বাদ দেয়া হয়। পরে ৬ মাস আগে ফের আবেদন করেন মামুন। ৫ লাখ টাকা খরচ করে তাকে সৌদিতে আরবে পাঠানো হয়। পুরো টাকা আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার করা। তিনি বলেন, ‘সৌদিতে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা খবর পাই রাত ১টার দিকে। আমার নাতি জাহিদ ফোন করে বলে নানা, মামুন মামা তো নাই। সে ওমরাহ করার আগে আমাদের জন্য দোয়া করবে বলে যায়। মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি বলেন, ‘আমি নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনিকভাবে পরিবারটির জন্য যা করার দরকার আমরা তাই করব।’ অন্যদিকে, দেবিদ্বার রাজামেহার মীর বাড়ি সৌদি আরবে দূর্ঘটনায় নিহত কুমিল্লার দেবিদ্বার রাজামেহর মীর বাড়ির গিয়াস হামিদ। হঠাৎ মৃত্যুর খবরে হতাহতদের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্ত্রী রাবেয়া জানান বিয়ের আগে ১৬বছর পরে ৭ বছর হয়েছে সৌদি আরব কাজ করছেন। সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশিদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। এ মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে একছেলে আবদুর রহমান সিয়াম (১৬) দশম শ্রেনীর ছাত্র দুইমেয়ে সাদিয়া আক্তার(১২) ও আমেনা (৬) সন্তানদের ভবিষ্যৎ। এদিকে নিহতদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। শোকে পাথর হয়ে গেছে গোটা পরিবার। পরিবারের একমাত্র চালিকাশক্তিকে হারিয়ে, সবাই এখন দিশেহারা। অস্বচ্ছল সংসারের হাল ধরতে ২২ বছর আগে তাকে সৌদি আরবের ফ্রি ভিসায় পাঠানো হয়। সেখানে ডিশ ক্যাবলের কাজ করেন। সরকারের মাধ্যমে দ্রুত মৃতদেহ ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছে পরিবার ও স্বজনরা। শেষবারের মতো তার চেহারা দেখতে চান তারা। পাশাপাশি এই নিঃস্ব পরিবারের জন্য সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছে নিহতের স্বজনরা কুমিল্লা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান দপ্তরের কর্মকর্তা দেব্রবত ঘোষ বলেন, ‘আমরা ঘটনা শুনেছি। মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য যা যা করতে হয়, তার সবই করব।’ জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানায়, দুর্ঘটনাস্থলটি জেদ্দা থেকে আনুমানিক ৬০০ কিলোমিটার দূরে। সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। সৌদি আরবের আসির অঞ্চলের আবহা জেলায় ৪৭ যাত্রী নিয়ে একটি বাস ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়। যাত্রীদের মধ্যে ৩৫ বাংলাদেশি ছিলেন। নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে ১৮: ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে সৌদি আরবে আকাবা শারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে ১৮ জন হয়েছে।বুধবার জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের প্রথম সচিব (শ্রম) আরিফুজ্জামান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বাড়ার এ খবর জানান। এই ১৮ জন হলেন- নোয়াখালীর সেনবাগের শরিয়তউল্লাহর ছেলে শহিদুল ইসলাম, কুমিল্লার মুরাদনগরের আব্দুল আউয়ালের ছেলে মামুন মিয়া, নোয়াখালীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, লক্ষ্মীপুরের সবুজ হোসাইন, কুমিল্লার মুরাদ নগরের রাসেল মোল্লা, কক্সবাজারের মহেশখালীর মো. আসিফ, গাজীপুরের টঙ্গীর আব্দুল লতিফের ছেলে মো. ইমাম হোসাইন রনি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কালু মিয়ার ছেলে রুকু মিয়া, কক্সবাজারের মহেশখালীর শাফাতুল ইসলাম, কুমিল্লার দেবিদ্বারের গিয়াস হামিদ, যশোরের কোতোয়ালির মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাদের হোসাইনের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন, খাইরুল ইসলাম, রুহুল আমিন, তুষার মজুমদার, মিরাজ হোসাইন, সাকিব এবং রানা মিয়া। সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন আল আখবারিয়া জানিয়েছে, ওমরাহযাত্রীদের বাসটি খামিস মুশাইণ শহর থেকে রওনা হয়ে মক্কায় যাচ্ছিল। স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টার দিকে আসির প্রদেশের আকাবা শার সড়কে সেটি দুর্ঘটনায় পড়ে। একটি সেতুর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি পাহাড়ি দেয়ালে ধাক্কা খায় এবং আগুন ধরে যায়। বাসটির ব্রেকে সমস্যা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে সৌদি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। ওই বাসের ৪৭ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৪ জনই ছিলেন বাংলাদেশি। দুর্ঘটনায় মোট ২২ জন নিহত হন। আহত ১৬ বাংলাদেশির মধ্যে কয়েকজন এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন। |