রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
৮ পৌষ ১৪৩১
বহুবর্ণিল বিচিত্র আয়োজনে ঋদ্ধ: কৃষ্ণপুর দিবস
কাজী মোহাম্মদ আলমগীর
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩, ১০:৪৫ পিএম আপডেট: ২৭.০৪.২০২৩ ১০:৫৯ পিএম |

বহুবর্ণিল বিচিত্র আয়োজনে ঋদ্ধ: কৃষ্ণপুর দিবস‘আমাদের গ্রাম আমাদের ঠিকানা’- শ্লোগানকে প্রাণে ধারণ করে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজীর কৃষ্ণপুরে ঈদের পরদিন ২৩ এপ্রিল এক আনন্দঘন উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘কৃষ্ণপুর দিবস’ উদযাপন করা হয়। দিনব্যাপি এ অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের প্রায় এক হাজার লোক অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি ছিল বহুবর্ণিল বিচিত্র আয়োজনে ঋদ্ধ ঃ আলোচনা সভা, সম্বর্ধনা, প্রামান্যচিত্র প্রদর্শনী, গ্রামীণ খেলাধুলা, কবিতা আবৃত্তি , র‌্যাফেল-ড্র এবং দীর্ঘ প্রাণস্পর্শী স্মৃতিচারণ। স্মৃতিচারণকারি অনেকে তখন শৈশব   কৈশোরের কথায় বাষ্পরুদ্ধ হন।

দীর্ঘদিন মনে রাখার মত এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কর্ণফুলি  শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের মনিমুন নাহার হেলেন,  বিশেষ অতিথি কর্ণফুলি ড্রাইডক লিমিটেডের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান মজুমদার (জাহাঙ্গীর)। সভাপতিত্ব করেন ‘কৃষ্ণপুর দিবস’ উদযাপন কমিটির আহবায়ক ইকরামুর রহমান মজুমদার। বক্তব্য রাখেন জোরকানন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী শাহজালাল, কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল হান্নান মজুমদার, সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা মোর্শেদ চৌধুরী, নাহার চৌধুরী, মিসেস আনিসুর রহমান মজুমদার, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ফয়েজ আহমেদ, জামাল মেম্বার, মাইনুদ্দিন মজুমদার, ওবায়দুর রহমান মিঠুন, মাহাবুবুর রহমান লিটন প্রমুখ।

বহুবর্ণিল বিচিত্র আয়োজনে ঋদ্ধ: কৃষ্ণপুর দিবসঅনুষ্ঠানে প্রবীণ নারী হিসেবে গ্রামের গোড়াপত্তনকারী পরিবারের সদস্য সাফিয়া খাতুন মজুমদারকে পূষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান প্রধান অতিথি মনিমুন নাহার হেলেন। তাতে এক আনন্দময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
প্রধান অতিথি মনিমুন নাহার হেলেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিশেষ অতিথিকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের মাধ্যমে তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘এমন একটি সুন্দর আয়োজনের আয়োজকদের ধন্যবাদ। গ্রামবাসী এবং সকল আত্মীয় স্বজনকে সালাম ও অভিনন্দন। আমি গ্রামের মেয়ে। সমস্ত গ্রামটিকে আমার মনে হয় একান্নবর্তী পরিবার। আমার দাদা বজলুর রহমান মজুমদার  অনেক সম্মনিত ব্যক্তি ছিলেন।’
তিনি বলেন , কৃষ্ণপুর গ্রাম একটি আদর্শ গ্রাম। শিক্ষা দীক্ষায় এই গ্রাম এগিয়ে আছে। নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শুধু লেখা পড়া করলে হবে না। আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজকে গড়ে তুলতে হবে। দেশ ও জাতির জন্য অবদান রাখতে হবে। সকলের জন্য একযোগে কাজ করতে হবে। কিভাবে আরও ভালো করা যায় আমাদের ভাবতে হবে। অনুষ্ঠানের আয়োজক, আর্থিক অনুদানকারী এবং দূর-দূরান্ত থেকে আগমনকারী সকলকে তিনি অভিনন্দন জানান।

বহুবর্ণিল বিচিত্র আয়োজনে ঋদ্ধ: কৃষ্ণপুর দিবসবিশেষ অতিথি ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান মজুমদার এই অনুষ্ঠানে এক মনোমুগ্ধকর বক্তব্য রাখেন। তিনি স্মরণ করেন তাঁর সময়কার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জলিল স্যারকে। তিনি তাঁর পিতা মনিরুজ্জামানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি তাঁর ছয় ভাই বোনের কথা বলেন। আনিসুর রহমানরা কৃষ্ণপুর গ্রামের প্রতিষ্ঠিত পরিবার। নাটক খেলাধুলা এবং সংস্কৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৬৩-৬৪ সালে আমাদের বাড়িতে নাটক হয়েছে। বর্তমানে তিনি এসবের অভাববোধ করেন। এখন এই গ্রামে কোথাও ড্রামা হয় বলে তার জানা নেই। তিনি স্মরণ করেন নুরুজ্জামান সাহেবকে। নুরুজ্জামান অত্যান্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি কবিরাজ ছিলেন। তিনি সুফি জীবন যাপন করতেন। তিনি আধ্যাত্মিক গান করতেন। নুরুজ্জমানের ১৪টি গানের রেকর্ড ছিল। পরবর্তীকালে আনিসুর রহমান তা হারিয়ে ফেলেন। বর্তমান প্রসঙ্গে বলেন, এখন গ্রামেও পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর হয়েছেন অনেকে। অনেকে টেকনোক্রেট হয়েছেন আইটি এক্সপার্ট হয়েছেন। তিনি বলেন, পূর্বপুরুষদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ‘আজকের আমরা’।
তিনি বলেন, এটাই পরিস্কার বিজ্ঞান, জেনেটিক্যাল, আমরা ঐ ধারায় এগিয়ে যাচ্ছি। আনিসুর রহমান তাঁর দাদা বজলুর রহমান  সম্পর্কে বলেন, বজলুর রহমান মজুমদার ১৯১৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশান পাস করেন। তখন কুমিল্লা জেলায় মাত্র তিনজন পাস করেছিলেন। আগরতলার মহারাজ তখন এই তিনজনকে সম্বর্ধনা প্রদান করেন। তাঁর দাদা বজলুরমান মজুমদার ১৯২০-২১ সালে সুয়াগাজী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দাদা তাঁকে পোস্টকার্ডে ছোট ছোট অক্ষরে ইংরেজিতে চিঠি লিখতেন। তিনিও ইংরেজিতে উত্তর দিতেন। তখন তিনি ক্যাডেট কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। চিঠিতে ভুল হলে দাদা তাকে ভুল শুধরে দিতেন।

বহুবর্ণিল বিচিত্র আয়োজনে ঋদ্ধ: কৃষ্ণপুর দিবসসাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা মের্শেদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, তিনি হান্নানের বন্ধু। তিনি কৃষ্ণপুরবাসীর সন্তানের মতো। তিনি ঈদপুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজকে ধন্য মনে করছেন। কৃষ্ণপুরের মত সু-শৃঙ্খল, সুন্দর, সু-শিক্ষিত গ্রাম আশপাশে নেই। তিনি কৃষ্ণপুরের বর্তমান প্রজন্মকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এ গ্রামে নতুন এসেছেন। তিনি বলেন, আমি হলাম নতুন বউয়ের মত। নতুন হলেও আমি আপনাদের সেবা করতে পারবো বলে আশা করি। কমিটির পক্ষ থেকে  তাঁকে ফুলের তোড়া উপহার দেয়া হয়।
সদস্য সচিব আব্দুল হান্নান মজুমদার বলেন, আমি ছয়মাস ধরে এই প্রোগ্রামটির চিন্তা করেছি। গ্রামে এসে  লোকজনের  সঙ্গে কথা বলেছি। একমাস পূর্ব থেকে গ্রামে সন্ধ্যা ৮ থেকে রাত ২টা আড়াইটা পর্যন্ত কথা শুনেছি বলেছি, মতামত নিয়েছি। কিভাবে অনুষ্ঠান সফল করা যায় ভেবেছি।  আমার একটা বিশাল স্বপ্ন পূরণ হলো। আর্থিকভাবে অনেকে সহযোগিতা করেছেন, নবীণরা অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন, আমি সভার প্রতি কৃতজ্ঞ।
কৃষ্ণপুর দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ইকরামুর রহমান মজুমদার বলেন, আমরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত অবশেষে অনুষ্ঠান করতে পারছি। আমি আমার বোন হেলেন আপার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আমার ভগ্নিপতি রশিদ ভাই জনাব রশিদ ইঞ্জিনিয়ারকে বলি, তিনি বলেন, তোমার বোনকে নিয়ে যাও। এখানে এসে আমি অনেককে পেলাম, যাদের মুখ গত বিশ পঁচিশ বছর দেখি না। অনুষ্ঠানের জন্য আমার সঙ্গে ৪জন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, চার জনের নিকট আমি কৃতজ্ঞঃ আবদুর রহমান মজুমদার, ওবায়দুর রহমান মিঠু,  ফয়েজ উদ্দিন মজুমদার এবং মাঈনুদ্দিন মজুমদার। আমি চেষ্টা করেছি, কতটুকু পেরেছি জানি না। জাহাঙ্গীর ভাই ( ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান মজুমদার) ঘোষণা দিয়েছেন তিনি একটা মাঠ করতে চান। ওনার অনেকদিনের স্বপ্ন । সমস্ত সম্পত্তিটা মাঠের জন্য দান করতে চান। আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সকলে  রাজি আছেন। সকলের পক্ষ থেকে ওনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

বহুবর্ণিল বিচিত্র আয়োজনে ঋদ্ধ: কৃষ্ণপুর দিবসঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ফয়েজ আহমেদ বলেন, কৃষ্ণপুর আমার প্রাণের গ্রাম। এইখানে আমার ঠিকানা। আজ তেকে ৩৩ বছর পূর্বে এ অনুষ্ঠান শুরু করি। এখানে প্রায় এক হাজার লোকের আয়োজন করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল, গ্রামবাসী একত্রে মেঝবানী রুপে খাওয়া দাওয়া করবে। রাত আটটা পর্যন্ত গান কবিতা আবৃত্তি এবং স্মৃতিচারণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সফল করবো। আজকে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অর্ণব তৈমুরের তৈরি করা প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। ছবির মতো সুন্দর কৃষ্ণপুর, সবুজ জমিন, পুকুর, পুকুরে পানির ফোয়াড়া, পাকারাস্তা, শৈল্পিক বাড়িঘর, বাড়ির রঙিন বহিঃকাঠামো  দৃষ্টি নন্দন বাস্তবতা মনের ভেতর আনন্দের উদ্ভাস ঘটায়।
কৃষ্ণপুরের সৌন্দির্য নিয়ে একজন স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।

কৃষ্ণপুরের সন্তান সিনেমা পরিচালক অর্ণব বলেন, ‘ বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক’ , পরিচালক স্যামবেনের সঙ্গে প্রথম দিকে জড়িত ছিলেন। তিনি এখন নিজেই সরকারি অনুদানে ছবি বানাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের ইতিহাস জানা লোকদের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এখন যদি লিখিত আকারে ইতিহাস সংরক্ষণ করা যায় তাহলে ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

বহুবর্ণিল বিচিত্র আয়োজনে ঋদ্ধ: কৃষ্ণপুর দিবসঅনুষ্ঠানটি এক পর্যায়ে মেলার আনন্দে যুক্ত হয়। ‘কৃষ্ণপুর’ নামটিকে রেপ্লিকার মতো করে, হস্তশিল্প এবং মৃৎশিল্পের উপদানে  উপস্থাপন করা হয়। খাওয়া দাওয়ায় সকলকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করা করা হয়। সকল প্রকার খাবারের পাশাপাশি ছিল শরবত , ফুচকা, চটপটি, জিলেপি, কফি। তাছাড়া ছিল- বালিশ খেলা, চেয়ার খেলা, কবিতা আবৃত্তি।
অনুষ্ঠানটির প্রাণবন্ত উপস্থাপনা করেন ইসতিয়াক আহমেদ রিয়াদ মজুমদার, কানন মজুমদার।
কিছু মন্তব্যঃ অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ বলেন ১.যতক্ষণ আছি মনে হয় রমনার বটমুলে আছি। ২. জিলেপি নির্মাতা বলেন, প্রায় তিন মন জিলেপি তৈরি করেছি।



                     












সর্বশেষ সংবাদ
নতুন বইয়ের বর্ণিল নতুন বছর
নৌকায় ভোট নিতে ভাতার কার্ড আটকে রাখার অভিযোগ
শান্তির নোবেলজয়ী থেকে দণ্ডিত আসামি
শ্রমিক ঠকানোর দায়ে নোবেলজয়ী ইউনূসের ৬ মাসের সাজা
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা অধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক ডাঃ রুহিনী কুমার দাস এর দায়িত্ব গ্রহণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত
বরুড়ায় শ্রমিকদল নেতাকে ছুরিকাঘাত
অর্ধেক দামে ফ্রিজ বিক্রি করছেন ফ্রিজ প্রতীকের প্রার্থী
বাড়ির জন্য কেনা জমিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়া একই পরিবারের ৪ জনের কবর
৫৫ কেজি সোনা চুরি, ফের রিমান্ডে দুই রাজস্ব কর্মকর্তা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২